উখিয়ায় পুলিশের কয়টি থানা!

উখিয়া সংবাদদাতা: কক্সবাজারের উখিয়া থানা পুলিশের কর্মকান্ডকে ঘিরে গড়ে উঠেছে দালাল চক্রের একটি সিন্ডিকেট। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, বেকার যুবক, রাজনৈতিক টাউট, বাটপার সহ এ শ্রেণির প্রতারক তৎপর হয়ে উঠায় জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। পুলিশ বাড়তি আয়ের জোগান দিতে
এ সমস্ত পেশাদার দালালদের ব্যবহার করে জনগণকে আর্থিক ভাবে হয়রানি করছে। আর এসব দালালদের অপতৎপরতার কারণে দিন দিন থানায় মিথ্যা মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি থানা পুলিশের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে বিনা তদন্তে রাতারাতি মামলা নথিভুক্ত করার নজিরও রয়েছে। এসব দুর্নীতিবাজ পুলিশের সহযোগিতায় থানার সামনে আরকান সড়কের পাশে আর একটি মিনি থানা খুলে বসেছে পেশাদার দালাল চক্রটি। এ কার্যালয়টিতে কতিপয় পুলিশ অফিসারের আনাগোনা থাকায় স্থানীয় জনমনে তাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এক এলাকায় কয়টি থানা থাকে? আসল থানাটির কাজ কি? ভুক্তভোগীরা মিনি থানায় গিয়ে অভিযোগ লিখন থেকে শুরু করে মামলা রুজু, ইচ্ছামত মামলার ধারা যুক্ত করা, আসামি যোগ করা, বাদ দেয়া, থানার বহু বছরের পুরোনো গুরুত্বপূর্ণ মামলার নকল সংরক্ষিত রয়েছে থানার ওই মিনি কার্যালয়টিতে। এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন মহলের মাঝে। প্রকাশ্য দিবালোকে খোঁদ পুলিশের সামনে রুম ভাড়া নিয়ে কোন উদ্দেশ্যে ৩/৪ জন ধান্ধাবাজ এই মিনি কার্যালয়টি খুলে বসেছে সে রহস্য উদঘাটনে জেলা পুলিশের কোন গরজ নেই বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এ কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও গোয়েন্দারা অভিযান চালানো হলে তা থেকে আসল থানার বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার নথিপত্র ও বিভিন্ন দারোগাদের মামলার ডকেট সহ অসংখ্য গোপনীয় তথ্য পাওয়া যাবে। এ কার্যালয়টি চালু থাকার কারণে থানায় মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ তাদের অবৈধ আয়ের জন্য তুচ্ছ ঘটনার বিষয় নিয়ে প্রথমে অভিযোগ লেখা তারপর কয়জন মামলার আসামি হবে, কয়জনকে টাকার বিনিময়ে বাদ  দেওয়া হবে, কয়জনকে ঢোকানো হবে তারপর মামলা তদন্ত, মামলা রেকর্ড, চার্জশীট দেওয়া, চার্জশীট থেকে বাদ দেওয়া ইত্যাদির বিষয়ে দর কষাকষি হয় বাদীÑবিবাদী এবং দালাল পুলিশ সিন্ডিকেটের সাথে। এভাবেই চলছে উখিয়া থানা পুলিশের অবৈধ মিনি কার্যালয়টি। ফলে দিন দিন উপজেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটছে। ডাকাতি কিছুটা কমে গেলেও চুরি, রাহাজানি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারামারি, খুন, ছিনতাই সহ অসংখ্য অপরাধমূলক ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। গত এক মাসে কক্সবাজার আরকান সড়কে পানেরছড়ার ঢালায় ২/১টি ডাকাতি ছাড়া একাধিক চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া উখিয়া ষ্টেশনের ঘিলাতলী এলাকার চিহ্নিত পেশাদার কতিপয় রাজনৈতিক টাউট ও বাটপার ইতিমধ্যেই ২০-২৫টি মোবাইল সেট ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছে। তাদের উৎপাতের কারনে সাধারণ পথচারী ও ঘরমূখো মানুষেরা আতংকে চলাচল করছে। এ ব্যাপারে এসব রাজনৈতিক টাউট ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে থানায় ভূরি ভূরি অভিযোগ দিলেও রহস্যজনক কারনে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছেনা। বরং এসব পেশাদার রাজনৈতিক ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজরা দিব্যি পুলিশের সামনে ঘুরছে। এছাড়া কতিপয় পুলিশ অফিসার থানার অভ্যান্তরে ও থানার আশে-পাশে চেম্বার খুলে বসেছে। এসব চেম্বার চালানো হয় থানার চিহ্নিত পেশাদার দালাল ও রাইটার দিয়ে থানাকে অঘোষিত শালিস ঘরে পরিণত করেছে। উৎকোচ বানিজ্যও ঠিকমত চলছে আবার এসব শালিসের জন্য দালালদের ৫শ বা ১ হাজার ও তারও অধিক টাকা গুনতে হয় বাদী-বিবাদীদের। বিচার করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নামধারী কতিপয় চিহ্নিত দালাল। এসব দালালরা ইতিপূর্বে ভুক্তভোগী লোকজনের হাতে শালিসে উল্টা-পাল্টা কথা বলায় গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে। আবার এসব দালালের বিরুদ্ধে লোকজনের টাকা লোপাটেরও অভিযোগ রয়েছে। এ দালালেরা ঘটনা মীমাংসা করে দেওয়ার নামে বাদী-বিবাদীদের কাছ থেকে ওসির জন্য মোটা অংকের টাকা আদায় করে ছাড়েন বলেও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে জানার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন