ফাঁসির মঞ্চ-জল্লাদ প্রস্তুত

ঢাকা: ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত। তেল মেখে তৈরি ফাঁসির রজ্জু। প্রস্তুত জল্লাদ। প্রয়োজনীয় মহড়াও এরই মধ্যে সেরে নিয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। কাদের মোল্লার সমান ওজনের ইট বেঁধে ঝোলানো হয়েছে ফাঁসির রশিতে। কাশিমপুর থেকে আনা হয়েছে আবদুল কাদের মোল্লাকে। কারাগারজুড়ে কয়েদিদের মধ্যে এখন চাপাস্বরে তারই আলোচনা। এখন অপেক্ষা শুধু নির্দেশ পাবার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ামাত্র ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কার্যকর করা হবে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড। মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় ও সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের জন্য প্রাথমিকভাবে তৈরি রাখা হয়েছে হাই প্রোফাইলড ছয় জল্লাদকে। 
প্রধান জল্লাদ মো. শাহজাহান ভুইয়া। বড় বড় অপরাধী আর কুখ্যাত অনেককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে খোদ জল্লাদ মহলেই যেন জীবন্ত কিংবদন্তী তিনি। দু’টি খুনের মামলায় ৪৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এই কয়েদি এর আগে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি এ কারাগারেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পাঁচ কয়েদির রায় কার্যকরে প্রধান জল্লাদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেদিন তার হাতে ফাঁসিতে ঝুলেছিলো বঙ্গবন্ধুর খুনি বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহারিয়ার রশীদ খান ও এ কে এম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার)। 
তার আগে বহুল আলোচিত শারমিন রিমা হত্যা মামলার আসামি মনিরের ফাঁসিও হয় তার হাতে। এছাড়া কাশিমপুর কারাগার থেকে খুলনায় নিয়ে তার হাতেই তুলে দেওয়া হয় কুখ্যাত খুনি এরশাদ সিকদারকে ফাঁসিতে ঝোলানোর দায়িত্ব।
২০০৭ সালের মার্চে কাশিমপুর কারাগারে জঙ্গি মামুনের ফাঁসি যখন কার্যকর করেন তখনো শাহজাহান ভাবেননি যে আরো অনেক কুখ্যাত লোকের ফাঁসি হবে তার হাতে। ওই সময় সহ-জল্লাদের দায়িত্বে থাকা কালু মিয়াও এখন আছেন তার সঙ্গে। হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি কালু এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। সাভারের জোড়া খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এই কয়েদি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কয়েদিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে সহ-জল্লাদের দায়িত্ব পালন করেন। এখন পর্যন্ত ১৩টি ফাঁসির রায় কার্যকরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। 
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার সময় চারজন জল্লাদকে শাহজাহানের সহযোগী হিসেবে মঞ্চের পাশে ডাকা হবে বলে জানিয়েছে কারাসূত্র।
সূত্রমতে, ফাঁসির মঞ্চের পাশে অনেকের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকবেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক। তার হাতে থাকবে একটি লাল রুমাল। হাত থেকে রুমালটি মাটিতে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চের লিভার (লোহার তৈরি বিশেষ হাতল) টেনে দেবেন জল্লাদ। এতে পায়ের তলা থেকে কাঠ সরে ফাঁসি কার্যকর হবে। এরপর লাশটি আধা ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা হবে কুয়ার ওপর। 
কখন নাগাদ গণহত্যা আর ধর্ষণের নায়ক কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে নিরাপত্তার স্বার্থে তা গোপন রাখা হলেও ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট অনুযায়ী যে কোনো দিন কার্যকর করা যাবে তার ফাঁসির রায়। 
এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ক মতামত জানিয়ে বলেছে, কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে কারাবিধি প্রযোজ্য হবে না। তাই যে কোনো সময় তাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে কোনো বাধা নেই। এখন অপেক্ষা শুধু নির্দেশনার। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ এলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করার সুযোগ দেওয়া হবে কাদের মোল্লাকে। তারপর দেওয়া হবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার করার সুযোগ। 
কিন্তু অবিসংবাদিত বিশ্বনেতা নেলসন ম্যান্ডেলার শেষকৃত্যে অংশ নিতে বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছেন রাষ্ট্রপতি।
এমন পরিস্থিতিতে কারা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কাদের মোল্লা প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে তা ফ্যাক্সযোগে পাঠানো হবে দক্ষিণ আফ্রিকায়। 
রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত জানার পর যতো দ্রুত সম্ভব কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন