মায়ের পায়ের কাছে কবর দিস

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের সোনাউল্লাহ মোল্যা ওরফে সোনা মোল্লা-বাহেরুন নেছা দম্পতির ৩ ছেলে ও ৬ মেয়ের মধ্যে ৩য় সন্তান আবদুল কাদের মোল্লা যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত।  মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির মঞ্চে। কাদের মোল্লার ছোট ভাই স্থানীয় ভাসানচর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মাইনুদ্দিন মোল্লা জানান, তার ভাই কাদের মোল্লার সঙ্গে সর্বশেষ মাস দেড়েক আগে কারাগারে গিয়ে দেখা করেছিলেন তিনি। সেখানে ভাইয়ের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথার একপর্যায়ে তার ভাই কাদের তাকে জানিয়েছেন বর্তমান সরকার আমাকে ফাঁসি দিয়ে দিতে পারে। যদি ফাঁসি দেয় অথবা আমার স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তবে সদরপুর স্টেডিয়ামে নামাজে জানাজা পড়িয়ে বাড়ির উঠানে মায়ের পায়ের কাছে আমায় কবর দিস। 

তিনি বলেন, কাদের তাকে জানিয়েছেন, কোনো কারণে যদি বিদেশে মৃত্যু হয়, তবে আমাকে দেশে আনিস না। ভাই বোনেরা জমি-জমা নিয়ে দ্বন্দ্ব করিস না। প্রয়োজন হলে আমার জমিও তোরা ভাগ করে নিয়ে নিস। 

মেজ ভাই আমাকে তার সন্তানদের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন বলেও দাবি করেন মাইনুদ্দিন।

মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতেই মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় ও সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের ফাঁসি কার্যকর করার খবরে আমিরাবাদের গ্রামের বাড়িতে বসে এসব কথা জানান মাইনুদ্দিন মোল্লা।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে কাদের মোল্লার তার সঙ্গে আলাপকালে মাইনুদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাতে তার ভাইয়ের ফাঁসি কার্যকর হবে তা তিনি বাংলানিউজের প্রতিবেদকের মুখ থেকে শুনলেন। 

এরপর ঢাকায় কাদের মোল্লার মেয়ে সানোয়ার জান পারভীনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।

আমিরবাদ গ্রামে ১৯৪৮ সালে জন্ম মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হতে যাওয়া কাদের মোল্লার। ১৯৬৯ সালে তিনি পড়াশোনার উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। ফেরেন মুক্তিযুদ্ধ শেষে। তাই পুরো একাত্তর সালজুড়ে ঢাকার বৃহত্তর মিরপুরে তাণ্ডব চালিয়ে বেড়ানো কাদের মোল্লার কুকীর্তি সম্পর্কে তেমন একটা অবগত ছিলেন না তার নিজ গ্রামবাসীও। 

গ্রামের মানুষ প্রথমদিকে তাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে চিনলেও বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরুর করার পর একে একে ফাঁস হতে শুরু করে কাদের মোল্লার কুকীর্তির কথা। একপর্যায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে গ্রেফতার করার পর বিভিন্ন মিডিয়ায় আসতে শুরু করে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ তার করা বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা। এসব অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর কাদের মোল্লাকেও নতুনভাবে চিনেছেন সদরপুরের মানুষ। 

এখন নিজ গ্রামের মানুষের কাছেই ধিক্কারের পাত্র কাদের মোল্লা। আর মঙ্গলবার গভীর রাতে দেশের এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয়ে যাচ্ছে- এ খবর জানার পর আনন্দে ভাসছে পুরো গ্রামটিও। 

গ্রামের অনেকেই বাংলানিউজের কাছে এ খবর জেনে তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন