বুধবার ফাঁসি হচ্ছে না কাদের মোল্লার, বৃহস্পতিবার ফের শুনানি

ডেস্ক রিপোর্ট: বুধবার ফাঁসি হচ্ছে না কাদের মোল্লার। তার ফাঁসির রায়ের ওপর রিভিউ আবেদনের শুনানি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আপিল বিভাগ। বুধবার ফাঁসির রায় কার্যকর করার আদেশ স্থগিত এবং রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের রিভিউ আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। অপর বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর কাদের মোল্লার আইনজীবীদের আবেদনে মঙ্গলবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রায় কার্যকর স্থগিত করেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ ফাঁসি কার্যকর করার কথা ছিল।

বুধবার সকাল ১০টা থেকে ফাঁসির রায় কার্যকর করার স্থগিতাদেশ বিষয়ে এবং বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রিভিউ আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে অংশ নেন। 

শুনানি শুরু হলে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ প্রথমে ফাঁসির রায় কার্যকর করার আদেশ স্থগিতের বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করেন। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপক্ষ ওই স্থগিতাদেশ বাতিলের আবেদন জানিয়ে শুনানি করেন।

অন্যদিকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আসামিপক্ষ স্থগিতাদেশের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানান।

কাদের মোল্লার অন্য আইনজীবী খন্দকার মাহাবুব হোসেন জানান, তারা মঙ্গলবার রাতে চেম্বার বিচারপতির কাছে একটি রিভিউ আবেদন জমা দিয়েছেন। 

শুনানিতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের মামলা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে এই মামলায় রায় হয়। ৮ ডিসেম্বর রায় হাতে পাওয়ার পর আমরা রিভিউ আবেদনের প্রস্তুতি শুরু করি। 

তিনি বলেন, রিভিউ করার জন্য অন্য মামলায় যে সুযোগ রয়েছে, সেই একই সুযোগ এই মামলায়ও পাব আশা করছি। এটা ৪০ বছরের পুরনো ঘটনার মামলা। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার চাই।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ঠিক আছে আপনি গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বলেন। 

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আমরা দুই দিন সময় চাই, আমাদের প্রস্তুতি শেষ হয় নি। আপনারা যে আদেশ দেবেন, আমরা মেনে নেবো। আমাদের ২ দিন সময় প্রয়োজন।

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এই মামলায় রিভিউ চলে না। এটা স্পষ্ট। এই আবেদন বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের শেষ কার্যদিবস। এরপর সাপ্তাহিক ছুটি শেষে শুরু হবে শীতকালীন ছুটি। এ সময় আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি বসলেও নিয়মিত কোনো আদালত বসেন না। আসামিপক্ষকে দুইদিন সময় দেওয়া হলে রায় বাস্তবায়ন কার্যত আগামী বছর পর্যন্ত ঝুলে যাবে।

এ সময় প্রধান বিচারপতি ব্যারিস্টার রাজ্জাককে বলেন, গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বলেন, মেরিট আমরা পরে শুনবো। এটাতো খুবই সংক্ষিপ্ত বিষয়। আপনি একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, আপনি সেটা পারবেন। উই আর নট ইন হারি, কিন্তু শুরু করতে দোষ কী?

জবাবে রাজ্জাক বলেন, আমি পারবো না। এটা পারবেন অ্যাটর্নি জেনারেল। উনি আমার চেয়েও সিনিয়র।

তখন প্রধান বিচারপতি জানতে চান, এই রিভিউ আবেদনের সিনিয়র অ্যাডভোকেট কে? 
পাতা উল্টে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের নাম দেখার পর আদালত বলেন, আপনিই তো এখানে সিনিয়র অ্যাডভোকেট। আপনি এটার দায়িত্ব স্বীকার করেছেন। আপনি পারবেন, বলেন। উভয়পক্ষই পারবেন। আমরা মেনটেইনেবিলিটি দিয়ে শুরু করি। লেটস স্টার্ট।

আদালত আবারও রিভিউ বিষয়ক শুনানি করার অনুরোধ জানালে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সময়ের আবেদন জানান। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় শুনানির সময় নির্ধারণ করে দেন আদালত। তবে আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত চেম্বার বিচারপতির স্থগিতাদেশই বহাল থাকবে বলে জানান।

রিভিউ গ্রহণযোগ্যতার শুনানিতে প্রথমে আসামিপক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। পরে তাদের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। 

আসামিপক্ষ শুনানিতে দাবি করেন, সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। 

রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, আসামিপক্ষের রিভিউ করার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ একটি বিশেষ আইন। এখানে সুপ্রিম কোর্ট অ্যাপিলেট ডিভিশন হিসেবে কাজ করছেন। সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ক্ষেত্রে রিভিউয়ের সুযোগ দেয়নি। সুতরাং এ বিচারের ক্ষেত্রে রিভিউয়ের অধিকার সম্বলিত সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ কার্যকর নয়।


এর আগে সকাল সোয়া নয়টার দিকে আদালত বসার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে বলেন, মঙ্গলবার রাতে ফাঁসির রায় কার্যকর স্থগিতের একটি আদেশ হয়েছে, যা আমরা রাষ্ট্রপক্ষ জানতাম না। গণমাধ্যমে এটা জেনেছি। এটাও প্রচার করা হচ্ছে যে, আমি নাকি আপনার বাসায় আপনার সঙ্গে বৈঠক করেছি।

এরপর প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, এ বিষয়ে শুনানির জন্য সম্পূরক কার্যতালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। পরে সম্পূরক কার্যতালিকার ভিত্তিতে সকাল দশটায় শুনানি শুরু হয়।

উল্লেখ্য, কাদের মোল্লার প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মঙ্গলবার রাতে জানান, তাদের আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার বিচারপতি ফাঁসি কার্যকর স্থগিত করার আদেশ দিয়েছেন। তারা রিভিউ আবেদনও করতে চেয়েছেন, যে বিষয়ে বুধবার সিদ্ধান্ত দেবেন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। তার নেতৃত্বে কাদের মোল্লার আইনজীবীরা মঙ্গলবার রাতে চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের বাড়িতে গিয়ে আবেদন পেশ করেন। 

তাদের শুনানি নিয়ে রাত দশটা ২০ মিনিটে চেম্বার বিচারপতি কাদের মোল্লার রায় কার্যকর করার বিষয়টি বুধবার সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত স্থগিত করেন বলে সেখান থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের কাছে জানান কাদের মোল্লার আইনজীবীরা।



এ আদেশের ফলে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরও রায় কার্যকর করা স্থগিত হয়ে যায়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ ফাঁসি কার্যকর করার কথা ছিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন