আমাদেরসময় ডটকম : বিদেশি অবৈধ শ্রমিক ধরপাকড়ে অভিযানের পর এখন বেকায়দায় পড়েছে সৌদি আরব। দেশটিতে অন্তত ৮০ লাখ বিদেশি শ্রমিক কাজ করছে। কিন্তু অবৈধ শ্রমিক ধরপাকড় শুরু করার পর ১০ লাখ শ্রমিক দেশটি ছেড়ে চলে যায়। ফলে খাদ্যমূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া সহ অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়েছে। বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা অনেকাংশে ভেঙ্গে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক নির্মাণ কাজ। সাধারণত বিদেশি শ্রমিকরা থ্রি ডি অর্থাৎ ডার্টি, ডেঞ্জারাস ও ডিফিকাল্ট বা কষ্টকর ও বিপদজনক কাজ করে থাকে। যা দেশটির নাগরিকরা করে অভ্যস্ত নয়।
যেমন সৌদি আরবের মেয়েরা উচ্চ শিক্ষা নেয়ার পর তাদের মধ্যে অšত্মত ৫ লাখ মেয়ে বেকার হয়ে আছেন। এধরনের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় সৌদি আরব সরকার অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযান নেয়ার সিদ্ধাšত্ম নেয়। এরপর দু’দফা সময় বেঁধে দেয়। ৩ মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলে গত ৩ নভেম্বর শুরু হয় এ অভিযান। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলা হলেও এখন এমন অবস্থান থেকে পিছিয়ে এসেছে দেশটি।
ওই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ৭ লাখ শ্রমিক আকামা বা বৈধ কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিতে সক্ষম হয়। সাধারণত হজ, ওমরা পালনে সৌদি আরব যেয়ে পাকি¯ত্মান, ইয়েমেন, সুদান, ভারত সহ বিভিন্ন দেশের অনেক শ্রমিক আর ফিরে আসতে চান না। দেশটিতে তাদের কর্মরত স্বজনরা তাদের আশ্রয় দেয়। পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন দোকান পাট ও বাসাবাড়িতে কাজ করে। এছাড়া আদম ব্যাপারীদের খপ্পরে পড়ে কাজ করেও নিম্ন বেতন হওয়ায় বৈধ কাগজ পত্রের মেয়াদ শেষ হলেও অনেকে ফিরে আসতে চান না।
সৌদি আরবে যেসব অবৈধ অভিবাসী এখনো বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন করেন নি মূলত তাদের বিরুদ্ধেই চলছে পুলিশি অভিযান। যারা ইতিমধ্যেই আবেদন করেছেন তাদের ভীত হওয়ার কারণ নেই। সৌদি আরবে ১৭ বছর ধরে জনশক্তি ব্যবসার সাথে জড়িত শাহজাহান ভুইয়া বিবিসি বাংলার সাথে একথা বলেন।
তিনি বলেন, গত ৩ নভেম্বর বৈধ হওয়ার শেষ সময় ছিল। এই সময়ের মধ্যে অধিকাংশ অবৈধ অভিবাসী আবেদন করলেও প্রায় ২০ শতাংশ আবেদন করেনি। এখন পুলিশ বিভিন্ন অফিস, দোকান, নির্মাণ খাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করছে। শাহজাহান ভুইয়া বলেন, অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে ভারত, পাকি¯ত্মান ও বাংলাদেশি নাগরিক বেশি।
এসব অবৈধ অভিবাসী কিভাবে নিজেদের রক্ষা করছে ? বিবিসি বাংলা জানতে চাইলে শাহজাহান ভুইয়া বলেন, সৌদি আরবে কোথাও লুকিয়ে থাকার সুযোগ নেই। যেহেতু এখনো ঘরে ঘরে পুলিশি তল্লাশি হচ্ছে না। তাই অবৈধ অভিবাসীরা তাদের বাড়িতেই লুকিয়ে আছে।
সৌদি আরবেই ১২ শতাংশ নাগরিক বেকার। এই যুক্তিতেই মূলত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান। ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ লাখ অভিবাসী সৌদি আরব ছেড়ে গেছেন। কিন্তু যেসব কাজ এসব অভিবাসী করতেন সৌদি নাগরিকরা কি তা করবে ? এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহজাহান ভুইয়া বলেন, সৌদিরা অফিসের কাজ করে থাকেন। এছাড়া কনস্ট্রাকশনের কাজে কোন সৌদিকে এখনো দেখা যায় নি। ফলে এসব ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। যার জন্য ফিরে যাওয়া এসব দেশ থেকে আবারো শ্রমিক নেয়ার সিদ্ধাšত্ম নিয়েছে সরকার।
এদিকে রিয়াদে বিদেশি শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশি অভিযানে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছে। শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এসময় তারা নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কয়েকশ শ্রমিককে আটক করেছে। তবে বিক্ষোভে কোন বাংলাদেশির অংশ নেয়ার খবর পাওয়া যায় নি।
জরিমানা দিয়ে সৌদিতে বৈধ হওয়ার সুযোগ
ডেস্ক : সৌদি আরবে ৩ নভেম্বর সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হলেও অবৈধ বিদেশী শ্রমিকদের বৈধ করার জন্য আবেদন পত্র গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। তবে আবেদন পত্র জমা দিতে বিলম্ব হওয়ায় তাদের জরিমানা অথবা অন্য কোনো দণ্ড ভোগ করতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।তবে কাদের জন্য কি পরিমাণ জরিমানা বা দণ্ড দেয়া হবে সে বিষয়ে কিছুই জানায়া নি সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ফয়সল আল অতাইবি সাংবাদিকদের জানান, সৌদি আরবের শ্রম আইন ভঙ্গ করে অবৈধভাবে বসবাসকারী শ্রমিকদের আটক করতে যে অভিযান চলছে তা বন্ধ করতে কোনো অনুরোধ বিবেচনা করা হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের বৈধতা দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। শ্রমিকরা ইলেক্ট্রনিক (অনলাইন) পদ্ধতি ও মক্তবে আমেলের (শ্রম অফিস) মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগকে বিদেশি বিভিন্ন শ্রমিক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাগত জানিয়েছে। সরকার অবৈধ শ্রমিকদের ধরতে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করায় এসব কোম্পানির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। পুলিশি অভিযানে কয়েক হাজার শ্রমিক গ্রেফতার হয়েছে। এতে অনেক কোম্পানি তাদের কাজকর্ম বন্ধ রেখেছেন।
ফয়সল আল অতাইবি বলেন, দেশে একটি নিরাপদ ও সংগঠিত শ্রমবাজার তৈরি করতে বিভিন্ন কোম্পানিতে অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। তবে এ অভিযানকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবে জনজীবনে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, জিনিসপত্রের কৃত্রিম মূল্যস্ফীতি মেনে নেয়া হবে না।
রিয়াদ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আব্দুল রহমান আল জামিল শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের দেয়া সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সৌদি আরবে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন কোনো অবৈধ ব্যবসাকে মেনে নেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে জানতে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, আমারও পত্রিকার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি।
এ সব বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি আসলে বিস্তারিত জানা যাবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে অভিযান চালানোর জন্য রিয়াদে ৫৫, জেদ্দায় ৪৫ এবং পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে ৬৪টি বিশেষ টিম মোতায়েন করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ । প্রত্যেক দলে অন্তত দুইজন পরিদর্শক ও একজন নিরাপত্তা কর্মী থাকছেন। এসব টিম মোতায়েন করা হয়েছে বড় বড় নগরীতে। শুধু অফিস সময়ে নয়, যেকোন সময়ে এ অভিযান হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন