ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা দিয়ে জান্নাতে যেতে হবে

মাওঃ মুহাম্মদ রুহুল আমিন
আল্লাহ তা’য়ালা মানুষ সৃষ্টি করে তাকে বিবেক দান করেছেন। আর ভাল এবং মন্দ উভয় রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছেন। দুনিয়ার জীবনে যারা ভাল কাজ করবে তাদের জন্য চিরসুখের জান্নাত অবধারিত।
আর যারা তাগুত কে অনুসরণ করে মন্দ কর্মে মজে থাকবে তাদের জন্য চিরদুঃখের জাহান্নাম অবধারিত। তবে জান্নাতের পথ কন্টকাকির্ণ পথ ফুল বিছানো নয়। এ পথে চলতে হলে কষ্ট আর কষ্ট। প্রতিটি পরতে পরতে পরীক্ষা। আর পরীক্ষা দিয়েই তো সেই সুমহান কাঙ্খিত জান্নাতের ঠিকানা নির্দিষ্ট করতে হবে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
احسب الناس ان يتركوا ان يقولوا امنا وهم لا يفتنون – ولقد فتنا الذين من قبلهم فليعلمن الله الذين صدقوا وليعلمن الكاذبين -
মানুষ কি মনে করে রেখেছে যে, “আমরা ঈমান এনেছি একথাটুকু বললেই তাদের কে ছেড়ে দেয়া হবে,আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমি তাদেরপুর্ববর্তীদের সকলকেই পরীক্ষা করে নিয়েছি। আল্লাহ তা’য়ালা অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যুক।
সুরা আনকাবুত এর চতুর্থ রুকুর ৪১ নং আয়াতে আনকাবুত (العنكبوت)শব্দ হতে এই  সুরার নাম করণ করা হয়েছে। আনকাবুত শব্দটির অর্থ ‘মাকড়সা’। সুরার এই নামকরণ করা হয়েছে কোন শিরোনাম হিসেবে নয়। অন্যান্য সুরার ন্যায় এটিও প্রতিকি নামকরণ। তবে এই নাম করণে অবশ্যই ওহীর নির্দেশ রয়েছে। কেননা রাসুলুল্লাহ সঃ এর নিজস্ব কোন চিন্তা থেকে নাম করণ করেন না। অতি তথ্যসমৃদ্ধ এই সুরাতে আল্লাহ পাক ঈমানদারদের ঈমানের পরীক্ষা দিয়ে জান্নাতে যাওয়ার জন্যই বলেছেন। কারণ সুরাটি এমন এক প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে যে সময় ঈমানদারদের জন্য অত্যান্ত প্রয়োজনীয় বিধান। আমরা নাযিলের সময় কাল লক্ষ করলে বিষয়টি ¯পষ্ট হয়ে যায়। সুরাটি মক্কী সুরা। যদিও সুরার প্রথম দিকে মুনাফিকদের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে বিধায় প্রথম দশটি আয়াত মাদানী বলে কোন কোন তাফসীরকারক মনে করেন। কেননা মুনাফিক ছিল মক্কাতে নয়; মদীনাতে। তবে অধিকাংশের মতে যেসব মুনাফিক লোকের কথা বলা হয়েছে তারা সে সকল মানাফিক যারা মক্কার কাফিরদের যুলুম নির্যাতন থেকে বেচে থাকার জন্য মুনাফিকী অবলম্বন করেছিল। এ সুরাতে মুসলমানদের হিজরত করতে বলা হয়েছে বলে কোন কোন তাফসীরকারক একে মক্কী জীবনের শেষ দিকের সুরা বলেছেন। এসব ধারণা বশতঃ বক্তব্যের মুলে কোন হাদিসের প্রমাণ নেই। সুরাটি উল্লিখিত বিষয় ও বক্তব্যের উপর ভিত্তি করেই এসব ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে। ( আল্লাহ পাকই ভাল জানেন) তবে নাযিলের কারণ আমাদের কে আরো পরিষ্কার করে দেয়। বুঝার স্বার্থে এবার একটু নাযিলের কারণ আলোচনা করে নিই। মক্কায় মুসলমানদের উপর চরম নির্যাতন চলছিল। কাফেররা পুর্ণশক্তিতে ইসলামের বিরোধীতা করছিল। যেই ইসলাম কবুল করে রাসুলের দলে যোগদান করতো তার উপরই চরম বিপদ আপদ যুলুম নির্যাতনের স্টীম রোলার চলতো। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা’য়ালা এ সুরাটি নাযিল করেন। এ সুরার মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালা প্রকৃত নিষ্ঠাবান ঈমানদারদের দৃঢ়সংকল্প, অনড় মনোবল,সাহস-হিম্মত ও অনমনীয় মনোবল সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। সাথে সাথে দুর্বল ঈমানদার লোকদের কে লজ্জা দিতে চয়েছেন। একই সাথে মক্কার কাফেরদের কে কঠোর ভাষায় শাসন করা হয়েছে। তাছাড়া অতীতের নবী রাসুল দের উপর অমানষিক যুলুম নির্যাতনের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে এ সুরায়। নির্যাতন সহ্য করে যারা সত্য ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে টিকে ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কে সাহয্য করা হয়েছে। কঠিন পরীক্ষার একটা পর্যায় অতিক্রম করার পরই আল্লাহর সাহায্য আসবে। ঈমানের সেই অগ্নি পরীক্ষা দিয়েই আল্লাহর জান্নাতে যেতে হবে। এ কথাটি মক্কার মুসলমান সহ যুগে যুগে সকল মুমিন মুসলমানদের কে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এখন ঈমানদের কে যে ঈমানের পরীক্ষা দিয়ে জান্নাতে যেতে হবে তার মুল আলোচনায় ফিরে যাই। মুখে মুখে ঈমানের দাবী করলেই ঈমানদার হওয়া যায় না। ঈমানের দাবী পুরণ করতে সদা সর্বদা তরী থাকতে হবে। আল্লাহ পাক ঈমানদের অবশ্যই পরীক্ষা করবেন। পুর্বের নবী রাসুল এবং ঈমানদারদের কে ও আল্লাহ পরীক্ষা করেছেন। ঈমানের প্রকৃত দাবীদার কারা এব্যাপারে সত্য-মিথ্যা যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে। ঈমান যত বড় পরীক্ষা তত বড় হবে এটা জেনেই ঈমানের দাবী করতে হবে। পুর্বেকার সকল নবী রাসুল এবং ঈমানদারদের থেকে শিক্ষা নিতে হবে।প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আলোচনার বিষয়টি বুঝার  জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়ার পর এখন আরো একটু পরিসর বাড়িয়ে ব্যাখা পেশ করতে চাই।
- احسب الناس ان يتركوا ان يقولوا امنا وهم لا يفتنون -মানুষ কি মনে করে রেখেছে যে, “আমরা ঈমান এনেছি একথাটুকু বললেই তাদের কে ছেড়ে দেয়া হবে,আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?  আলোচনা সংশ্লিষ্ট  এ আয়াতের ব্যাখ্যা জানার আগে জনে নেয়া ভাল  আল্লাহ তা’য়ালা যখন এ আয়াত নাযিল করেছিলেন তখনকার অবস্থা। ইসলাম গ্রহণ কারীরা যুদি গরীব কিংবা দাস দাসী হতো তা হলে তাকে তার উপর নির্যাতনের পাড়া ভেঙে পড়তো। ছাট ব্যাবসায়ী ,কারীগর হলে রুজি রোজগারের সকল পথ বন্ধ করে দেয়া হতো। আর প্রভাব শালী হলে নানা ভাবে কষ্ট ক্লেশ অপপ্রচার মিথ্যা অভিযোগ এমনকি তার গোটা পরিবার ধংস করে দেয়া হতো। এ রুপ অবস্থায় মক্কা নগরীর গোটা পরিবেশই ভয় আর ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েম হয়েছিল।  এই অবস্থায়ও মজবুত ঈমানদার লোকদের মানবীয় প্রকৃতির স্বাভাবিক দাবীতে তাদের ও প্রায় কঠিন ভাবে প্রাণ কেঁপে উঠতো, যদিও তারা ঈমান ছাড়েনি। আমরা যদি নবীর সাহাবী হযরত খাব্বা ইবনে আরাত রাঃ  দিকে তাকায় যিনি পেশায় ছিলেন সামন্য কর্মকার। এমনই একজন পাক্কা মুমিনের অবস্থা বর্ণনা করলে পরিস্কার হয়ে যাবে মুমিনদের অবস্থা কি হয়েছিল। হযরত খাব্বাব বলেন, যে সময় কাফের মুশরিকদের অত্যাচার জুলুম নির্যাতনে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল, তখন  কারণ 
তারা পাক্কা মুসলমান কখনো মাথা নত করতে জানেনা। বাতিলের হুংকার রক্তচক্ষু ভয় করেনা মজবুত ঈমানদারেরা। কারণ মুসলমানদের অভিভাবক হলো আল্লাহ। মুসলমানদের নেতা হলো নবী  মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সঃ। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘ যারা ঈমান এনছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন । আর যারা কুফুরী করে, তাগুত (শয়তান) তাদের অভিভাবক। তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে বের করে আনে। এরাই হলো জাহান্নামী সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (বাকার-২৫৭) সুতরাং আল্লাহ অভিবাবক হলে মুসলামানদের ভয় কিসে। বর্তমান সময়ে এ আয়াতের আলোকে লক্ষ করলে দেখা যায় শয়তানের প্ররোচনায় যারা আল্লাহ কোরআন নবী সঃ কে নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছে তারা নবীর ওয়ারিশ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কেও বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখাতে চাচ্ছে। ঈমানদের কাছে এসব কিছুই না তারা এর  পরোয়া করে না। তারা বিশ্বাস করে এক আল্লাহর।তবে একথা সত্য যে, হামলা মামলা নির্যাতন অপপ্রচার মিথ্যা অভিযোগ হয়রানি থাকবে  কারণ এ অবস্থা সৃষ্টি হলেই প্রকৃত মুমিন চেনা যায়। আল্লাহ বলেন, এসময় ও অবস্থাটি তোমাদের উপর এজন্য আনা হয়েছে যে, আল্লাহ দেখতে চান তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কে? আর তিনি তোমাদের শহীদ হেসেবে কবুল করতে চান। আল ইমারন ১৪১) 
মুমিনরা সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা করেন কারণ বান্দার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আলাইছাল্লাহু বি কাফিফন আবদাহ।মুমিন যখনই কোন বিপদ দেখে তখন সে আল্লাহর উপর ভরসা করে তাই তাকে কেই পরাজিত করতে পারে না। আমার আলোচনা থেকে নিন্মোক্ত শিক্ষা গুলো গ্রহণ করতে পারি।
১)    জাহালিয়াতি সমাবেশে ভয় করার কিছু নেই
২)    নাস্তিকরা কখনও সফল হবে না
৩)    কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে
আল্লাহ আমাদের কে পুর্ণাঙ্গ মুমিন হয়ে আল্লাহর জান্নাতের মেহমান হওয়ার তাওফিক দিন। আমীন