নুরুল আজিম নিহাদ
বিশ্বের অন্যতম সৌন্দর্যের প্রতিক দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকতের পাড় ঘেষে গড়ে উঠেছে পর্যটন শহর কক্সবাজার। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নয়নাভিরাম এই সৌন্দর্য্য একপলকে উপভোগ করার জন্য প্রতিনয়ত আনাঘোনা ঘটে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটকের।
ভ্রমণ পিপাসু এসব মানুষের উদ্দেশ্য একটাই কক্সবাজারের অমূল্য সম্পদ পৃথিবীর বৃহত্তম ”সমুুদ্র সৈকত”কে স্মৃতির আঙ্গিনায় ঘূর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করা। হাসি-খুশি আনন্দে সৈকতকে মাতিয়ে রাখতে আসা এসব ভ্রমণ পিপাসুদের জীবনের নিরাপত্তা কতটুকু? কারণ শহরের বিভিন্ন অলিতে গলিতে প্রতিনিয়ত দেখা যায় অহরহ ঘটছে ছিনতাই এর ঘটনা। দিনের আলো নিবে যাওয়ার সাতে সাথে এক শ্রেণির উশৃঙ্খল পাতি গোন্ডাদের শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। খোজ নিয়ে জানা যায়, শহরের বাস টার্মিনাল এলাকা, কলাতলী পয়েন্ট,সার্কিট হাউজ এলাকা, ঝাউতলা গাড়ীর মাঠ, নুনিয়াছড়া, বৈদ্য ঘোনা, ঘোনার পাড়া, বৈল্যা পাড়া, জাদির পাহাড় এলাকা, এন্ডারসন রোড, এমনকি পৌরসভা গেইট সংলগ্ন এসব পাতিগোন্ডাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তারা বিভিন্ন কলে-কৌশলে প্রতিনিয়ত হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা, মানি ব্যাগ, মোবাইল সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ কত কী? শুধু তাই নয় এসব ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করতে গিয়ে অনেক সময় প্রতিপক্ষ প্রতিবাদী হলে ছুরিকাঘাতে জর্জরিত হতে দেখা যায় সাধরণ পথচারীদের। কারণ এদের সাথে থাকে ছুরি, খোরসহ বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র। শুধু ছুরি আর খোরের আঘাতে নয় এদের আছে আরেক নতুন কৌশল! কোন মানুষ একা হেটে গেলে তার ভাবমূর্তি খেয়াল পূর্বক আচমকা গতিরোধ করে এবং অনেক দিনের পুরনো দেনাদার অবহিত করে পাওনা পরিশোধ করার জন্য বাধ্য করে। পরে উক্ত-ভূক্তভোগী ঘটন্া মিথ্যাচার বলে অবহিত করলে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীর দল মারধর করে সবকিছু হাতিয়ে নেয়। ঐসময় অন্যান্য পথচারীদের নিরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। নিরীহ মানুষটির আকুতি মিনতি কারো হৃদয়ে আঘাত আনতে দেখা যায় না। সমসাময়িক ভুক্তভোগী হাসান নামে এক পর্যটক জানান- তিনি ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে নতুন বিবাহ করে স্ত্রীকে নিয়ে হানিমুনে আসে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে। ভ্রমণে আসার তৃতীয় দিন স্ত্রীকে নিয়ে সন্ধ্যায় বের হয় শহরের বার্মিজ মার্কেটে কেনাকাটার উদ্দেশ্যে। দুর্ভাগ্যে বসত গোলচক্রর এলাকায় এসব পাতি গুন্ডাদের ছোবলে পড়ে হারাতে হয় মোবাইল মানি ব্যাগসহ তার সঙ্গে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পত্র। ভুক্তভোগী আরো জানান অনেক শখের বসে স্ত্রীকে নিয়ে ভ্রমণে আসছিলাম এখানে। কিন্তু এরকম নেক্কারজনক ঘটনার সম্মুখিন হতে হবে কল্পনাহীন ছিল। প্রশাসনকে কোন অভিযোগ না জানিয়ে জীবনের নিরাপত্তার অভাব বোধ করে পরের দিনই তারা ঢাকায় চলে যান। সাগর পাড়ের আর এক দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকা শহরের বৌদ্ধ মন্দিরের জাদি পাহাড়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় জাদি পাহাড়ের এই মনোরম সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য হাজার হাজার পর্যটকের পদচারনা হলেও এখন আগের মতো তেমন কোন পর্যটকের ভিড় চোখে পড়ে না। কারণ হিসাবে স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম রুবেল জানান- বেস কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় বসে জাদি পাহাড়ে মদ-জোয়ার আসর। পরে স্থানটি পরিণত হয় মাতাল আর উম্মাদের আড্ডাখানায়। এসব মাতালের হাতে প্রতিনিয়ত হেনস্তা ও ইভটিজিং শিকার হচ্ছে জাদি দেখতে আশা হাজার হাজার পর্যটক। তাই আস্তে আস্তে এই অপরূপ সৌন্দর্য্য মন্ডিত জাদি হারাতে বসেছে তার পর্যটনের ঐতিয্য। প্রশ্ন উঠে প্রশাসনের কড়া নজরদারী সত্ত্বেও এসব এলাকায় কেন প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে এসব অপরাধ। পৌর শহরের বেশ কয়েকজন সচেতন মানুষের অভিমত- এক শ্রেণির রাজনৈতিক ব্যক্তি¡ আছেন যারা এসব পাতি গুন্ডাদের রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে থেকে শক্তিশালী হয়ে গড়ে উঠছে। যার ফলশ্র“তিতে সাধারণ মানুষকে নিরাশ ও সর্বহারা এবং মা বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন হচ্ছে। দৃষ্টিনন্দিত পর্যটন রাজধানীকে হারাতে হচ্ছে তার ঐহিত্য ও দেশী-বিদেশী পর্যটকের পদচারণা। এসব অপরাধীর হোতাগোষ্ঠী বা তারা যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন পৌরবাসীর জীবনের নিরাপত্তা ও সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায়পূর্বক এবং পর্যটনের গৌরব ও ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য কক্সবাজারের পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান পৌরবাসী।