টেকনাফে জমির বিরোধ নিয়ে প্রবাসীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা

মুহাম্মদ তাহের নঈম
জমি নিয়ে বিরোধের জের প্রবাসে অবস্থানরতদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা, দখলে না থাকা সত্বেও মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে ভূয়া খতিয়ান সৃজন করেও নিরীহ লোকদের হয়রানী করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শীলখালী বাইন্যাপাড়ায় ঘটেছে এঘটনা। এদিকে এনিয়ে দায়েরকৃত সাজানো মামলায় নিরীহ এক ব্যক্তি ৪দিন জেলহাজতও খেটেছেন। তাছাড়া একই ঘটনায় জাকের উল্লাহ নামে নিরীহ এক কলেজ ছাত্রকে পুলিশ গত ১০জুন সন্ধ্যায় ধরে নিয়ে গিয়ে নগদ ১৩ হাজার টাকা ও মুচলেকা নিয়ে গভীর রাতে ছেড়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ক্রমে প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসীদের বিভিন্ন জালিয়াতি ও অপকর্মের গোপন তথ্য ফাসঁ হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- দলিল মূলে ক্রয়কৃত জমি একস্থানে, জবর দখলের চেষ্টা ও খতিয়ান সৃজন করেছে ভিন্ন স্থানের। জমি দখলে নেই, দলিলেও নেই কিন্তু প্রভাবিত হয়ে সৃজন করা খতিয়ান বহাল রাখতে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল, মালিকানা স্বত্বের অতিরিক্ত জমি বিক্রি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এনিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগসহ এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসীরা জোরপূর্বক জমি জবর দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে অপতৎপরতা চালিয় যাচ্ছে। বিশেষ করে মারাতœক ব্যাপার হচ্ছে- দাতাদের দেয়া দলিলে এবং আপোষে উল্লেখ নেই এমন দাগ-খতিয়ান উল্লেখ পূর্বক ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু ব্যক্তিদের যোগসাজসে খতিয়ান সৃজন করেছে। আর বর্তমানে উক্ত ভূয়া খতিয়ান বহাল রাখতে প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসীদের পক্ষাবলম্বন করে ভূমি অফিসের চিহ্নিত দূর্নীতিবাজরা তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাহারছড়া দক্ষিণ শীলখালী মৃত এজাহার মিয়ার পুত্র প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসী চক্র ও ভূমি অফিসের কতিপয় দূর্নীবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী কত্তৃত হয়রানীর শিকার মোহাম্মদ মিয়া জানান- ২০০৯ সনের ২৮ এপ্রিল ৯৪৪ নং দলিল মূলে ৩ জনের ৮জন ওয়ারিশ  ২.৬৪ একর জমি বিক্রি করেন। জমির ক্রেতা হলেন- ঢাকা ৫১ এলিফ্যান্ট রোড ৪১৯ আল্পণা প্লাজার বাসিন্দা এএইচএম মাহফুজুল আরিফের স্ত্রী কম্পিউটার সোর্স লিঃ এর চেয়ারম্যান সৈয়দা মাজেদা মেহের নিগার। মোহাম্মদ মিয়াসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের দাবী হচ্ছে- জমির মূল ক্রেতা অত্যন্ত ভদ্র, অমায়িক, সৎ ও ভাল লোক। কিন্তু যারা মধ্যস্থতা বা দালালী করেছে তারাই এসব অপকর্মে জড়িত। বিক্রিত জমির খতিয়ান (নং- ১৩৮৫) সৃজনের সময় ৮১৭ নং খতিয়ানের ৬০৩০ দাগ উল্লেখ থাকার বিষয়টি জানতে পেরে মোহাম্মদ মিয়া ৫ জুন ২০১২ উক্ত খতিয়ান বাতিল করতে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ) বরাবরে মিচ আপীল মামলা (নং- ৪৩৩) দায়ের করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এক আদেশে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উক্ত খতিয়ানের কার্য্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদনসহ মামলার নথি প্রেরণ করতে টেকনাফের এসি ল্যান্ডকে নির্দেশ দেন। দীর্ঘ ১ বছর সেই তদন্ত প্রতিবেদন টেকনাফ থেকে কক্সবাজার প্রেরণ করা হয়নি। এই ১ বছরে বিভিন্ন ভাবে নিরীহ মানুষের উপর হয়রানী চালানা হয়েছে। এমনকি ১১ জনকে অভিযুক্ত কর মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলাও (নং-৩৬) করা হয়েছে। তম্মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে সউদি আরব প্রবাসী সহোদয় ২ ভাই ও ১ জন কলেজ ছাত্র রয়েছে। অবশেষে ভূমি অফিস থেকে মোঃ মিছবাহ উদ্দিন গত ২৬ মে ৪৪ নং স্মারক মূলে দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর বহুল আলোচিত সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেই জমির উপর আস্ত  একটা  নির্মাণাধীন দ্বিতল ভবন, ১টি টিনশেড ঘরসহ মালিকের দখল আমলে থাকা সত্বেও প্রতিবেদনে রহস্যজনক কারণে মাত্র ৫ শতক জমি দখলে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে- তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যাপক গরমিল এবং রহস্যজনক কারণে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। আপোষ দাগ বহির্ভূত জমি নিয়ে খতিয়ান সৃজন ছাড়াও বিরোধীয় সাড়ে ৩৫ শতক জমির মধ্যে মাত্র ৫ শতক মোহাম্মদ মিয়ার দখলে আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা স¤পূর্ণ মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে উক্ত জমির উপর বর্তমানে নির্মাণাধীন দ্বিতল পাকা ভবন ও একটি টিনশেড বাড়ি রয়েছে। তাছাড়া ক্রয়কৃত জমির অবস্থান হচ্ছে সী-বীচের নিকটে। আর জমি পুষিয়ে নেয়ার অজুহাতে ভূমিগ্রাসীরা জবর দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে টেকনাফ- কক্সবাজার এলজিইডি সড়ক সংলগ্ন নির্মাণাধীন ভবনের জমি। ৮১৭ ও ৮১৯ নং খতিয়ানের ৬০৩০ দাগের প্রায় ৪০ শতক জমির উপর মোহাম্মদ মিয়া ও প্রবাসী আয়াত উল্লাহর বসতঘর রয়েছে। উক্ত জমি অন্য কারও কোন কালে দখল-আমলে ছিলনা এবং এখনও নেই, বিক্রি ও করা হয়নি। যা দিবালোকের মতো সত্য। জমির মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ও জমি সড়কের নিকটবর্তী হওয়ায় লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ভূমি গ্রাসীদের। তারা সে জমি অন্যায়ভাবে জবর দখল করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী, জোরপূর্বক নির্মাণ কাজ বন্দ করার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার মামলা ছাড়াও প্রভাবিত করে দখলে নেই মর্মে মিথ্যা প্রতিবেদন তাদের পক্ষে নিতে সক্ষম হয়েছে। আরও জানা গেছে- কথিত মামলার বাদী আরিফুল হাসানের বাড়ি উখিয়া উপজেলার মনখালীতে, থাকে ইনানী। অথচ ঠিকানা দিয়েছে টেকনাফের শামলাপুর। তাছাড়া জমি বিক্রেতা ৮ জনের মধ্যে ১ নম্বরে আছেন হাছান আলীর ওয়ারিশ আবু হান্নান। প্রকৃত পক্ষে তার স্বত্ব ৪৪ শতক, কিন্তু সে ৯০ শতক বিক্রি করেও বর্তমানে আরও ৮৫ শতক জমির উপর বসতবাড়ি করে ভোগদখল করছে। যা কিনা তুগলকি ব্যাপারকেও হার মানায়। জমি বিক্রেতা ৮ জন ওয়ারিশান হলেও জমি পুষিয়ে নেয়ার অজুহাত তুলে অহহায় ও নিরীহ মোহাম্মদ মিয়ার উপর স্টিমরোলার চালাচ্ছে। প্রাম্য কোন্দল, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব, আধিপাত্য বিস্তার ও ভূমি গ্রাসের উদ্দেশ্যে স্থানীয় একজন সাবেক মেম্বারের নেতৃত্বে মধ্যস্বত্বভোগী জমি দালালদের নিয়ে নিয়ে গঠিত ৩ জনের শক্তিশালী ও প্রভাশালী সিন্ডিকেট এই অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। এনিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার আপোষ বৈঠক হলেও ভূমিগ্রাসীরা তা গ্রাহ্য করেনি। এই ভূমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে এলাকায় শান্তিভঙ্গসহ পরিস্থিতির অবনতি ও বড় ধরণের অঘটন ঘটার আশংকা দেখা দিয়েছে। সেই ভূমি অফিসের পক্ষপাতামূলক রিপোর্ট পরিস্থিতিকে আরও জঠিল করে তুলেছে। তাদের বিতর্কিত প্রতিবেদনের গ্যাড়াকলে পড়ে অসহায় নিরীহ মোহাম্মদ মিয়া ও প্রবাসী আয়াত উল্লাহ বাস্তভিটা হারানোর উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহলের মতে এসব অপকর্মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া না হলে অপকর্মের মাত্রা দিন দিন বাড়বে। আর এতে সহায় সম্পদ হারিয়ে পথের ভিখারী হবে মোহাম্মদ মিয়ার মতো আরও অনেকে। এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ভূমি অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণকারী মিছবাহ উদ্দিন জানান-  ভূমি স্বত্ব বিধি মতেই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, এতে পক্ষপাত করা হয়নি। বরং মোহাম্মদ মিয়ার ভূলের কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেদন চলে যাওয়ার নবাগত এসি ল্যান্ড সেলিনা কাজী অসহায় মোহাম্মদ মিয়াকে বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হতে পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এপ্রসঙ্গে সহকারী কমিশণার (ভূমি) সেলিনা কাজী বলেন- যদিও বিষয়টি আমি টেকনাফে যোগদান করার আগের, তবুও তা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে।