কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চলছে রোগি হয়রানি

অব্যবস্থাপনায় ভেঙ্গে পড়ছে চিকিৎসেবা

এম. আমান উল্লাহ: কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার নামে একের পর এক প্রতারিত হচ্ছে গরিব অসহায় সাধারণ রোগিরা। কক্সবাজারে দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে রোগিরা চিকিৎসাসেবা ও ওষুধপত্র ঠিকমত পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিনিয়ত রোগি হয়রানি আর ভোগান্তি ছাড়া সদর হাসপাতালে আর কিছুই মিলছে না। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা
নিতে আসা রোগিরা ধাপে ধাপে প্রতারিত হতে দেখা গেছে। প্রথমে প্রতারিত হচ্ছে দালাল চক্রের হাতে, আবার ওই দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে রোগিদের হারাতে হচ্ছে সাথে আনা টাকা। পরে অন্ত:বিভাগে ঢুকে ভর্তির জন্য। সেখান থেকে হাসপাতালে রোগিদেরকে ভর্তি না করে পাঠানো হচ্ছে শহরের নামিদামি প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে। হাসপাতালে রোগি ভর্তিহলেও ওষুধপত্র, প্যাথলজিকেল, এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শহরের নামিদামি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঠাঁই মিলছে রোগিদের। রোগিদের কাছ থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য মোটা অংকের টাকা নিয়ে কমিশন পাঠানো হয় হাসপাতালের অসাধু স্টাফদের কাছে। যার ফলে স্টাফরা হাসপাতালের নানা টালবাহানা দিয়ে কোন পরীক্ষা করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে জেলা সদর হাসপাতালের স্টোরে পর্যাপ্ত পরিমাণের ওষুধ মজুদ থাকলেও রোগিরা পাচ্ছেন না। ডাক্তাররা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সাথে ওষুধ কোম্পানির সাথে চুক্তি করে অন্ত: বিভাগ ও জরুরিবিভাগে ভর্তি হওয়া রোগিদের চিকিৎসাপত্রে লিখে আসছে চুক্তিবদ্ধ ওই ভুঁইফোড় ওষুধ কোম্পানিগুলোর নিম্নমানের ওষুধ। অন্যদিকে রোগিদের ব্যবস্থাপত্রে লেখা ওষুধের গ্রুপ মিল থাকলেও সরকারিভাবে সাপ্লাই থাকা ঐসব ওষুধ রোগিদের দেওয়া হচ্ছে না বলে গুরুত্বর অভিযোগ রয়েছে।
রোগি ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে নার্সরা ফার্মেসি থেকে মোটা অংকের টাকা কমিশন পাওয়ার আশায় রোগির স্বজনের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে ওষুধের স্লিপ। আবার ফার্মেসিগুলোর সাথে দারোয়ান-আয়াদেরও চুক্তি আছে বলে জানা যায়। নার্সদের দেওয়া ওই স্লিপ নিয়ে দারোয়ান-আয়ারা চুক্তিবদ্ধ ফার্মেসিগুলোতে নিয়ে যায়। একইভাবে অভিনব কায়দায় প্রতারিত হচ্ছে রোগি ও সাথে আসা স্বজনরা।
এদিকে, হাসপাতালের দেয়ালে সরবরাহকৃত ওষুধের তালিকা দেখা গেলেও সাধারণ মানুষ ওই ওষুধ পাচ্ছেন না। সরকারি ওষুধগুলো মেয়াদোত্তীর্ণসহ বাইরে পাচারের অভিযোগও উঠেছে। না হয় সরকারি ওষুধগুলো যাচ্ছে কোথায়?
এ ব্যাপারে স্টোর কিপার মোস্তাসিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে অস্বীকার করেন। রোগির সাথে আসা স্বজনরা আরো জানান, কর্তব্যরত ডাক্তারগণ রোগিদের সাথে ভাল ব্যবহার করে না। বরং সকালে অথবা বিকালে ক্লিনিকের নিজস্ব চেম্বারে দেখা করার কথা বলে চলে যায়। যার ফলে ডাক্তারদের উপস্থিতি তেমন নেই বললেও চলে। আর যারা আসেন, তারা ১০-১১টার দিকে এসে ২/১ ঘন্টা চেম্বার করতে দেখা যায়। ফলে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার নামে প্রতারিত হচ্ছেন অসহায় দরিদ্র শ্রেণির সাধারণ মানুষ। 
সচেতন মহলের একটাই প্রশ্ন, আর কতকাল চলবে দূর্নীতি ও অভিনব কায়দায় প্রতারণা? সরকার যে ওষুধগুলো দেয় তা যায় কোথায়? 
এদিকে, জেলা সদর হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের অপরিচ্ছনতার করুন পরিণতি। হাসপাতালে ঢুকলেই নাকে কাপড় দিয়ে ঢেকেও দূর্গন্ধ থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। টয়লেটের দূর্গন্ধে রোগিরা আরো গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। নেই পরিচ্ছন্ন টয়লেট ও গোসলখানা। অপর দিকে হাসপাতালের খাবারের মান নিয়েও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ সর্বনিম্নমানের খাবার পরিবেশন হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতালের রোগিদের মাঝে। কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানা যায়, কনসালটেন্ট ডাক্তারগণ সকাল সাড়ে ৮টায় হাসপাতালে আসার কথা থাকলেও তারা তাদের নিজেদের ইচ্ছে মত আসে যায়। নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না চিকিৎসকরা। তাদের জন্য রোগিদের ঘন্টার পর ঘন্টা বাহিরে বসে থাকতে হচ্ছে। বহি:বিভাগে হাতেগুনা কয়েকজন ডাক্তারের দেখা মিললেও বাকি ডাক্তাররা বিভিন্ন ক্লিনিকে অফিস করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এভাবে ধাপে ধাপে রোগিদের হয়রানি করে আসছেন, চিকিৎসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার অজয় ঘোষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে সেবা দেওয়ার মত অনেক চিকিৎসক আছেন। কিন্তু তারা নিজের মত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। 
এদিকে, অসহায় হত দরিদ্রদের দাবি অতিসত্ত্বর হাসপাতালের এই দূর্নীতি প্রতিহত করে ভালমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হোক। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন