দুই নেত্রীর বক্তব্যে সংকট নিরসনের আভাস নেই

ডেস্ক রিপোর্ট :
জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। কেউ কেউ এ বক্তব্যে জাতীয় সংকট নিরসনে কোনো
কার্যকর পন্থার আভাস মেলেনি বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, দুই নেত্রীর বক্তব্যে জাতীয় সংকট নিরসনে একটি আশাবাদ ফুটে উঠেছে। প্রকৃত অর্থে, এ সংকট নিরসন হয়ে জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুকথ এটা তাদেরও প্রত্যাশা। রোববার সমকালকে দেওয়া পৃথক প্রতিক্রিয়ায় তারা আরও বলেছেন, সংসদে দুই নেত্রীর আলোচনা জনমনে সাড়া জাগালেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে তাদের একমত হতে না পারাটা হতাশাজনক।সমকাল
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান রোববার বলেন, 'সংসদে শনিবার দেওয়া দুই নেত্রীর বক্তব্যে শুনে মনে হয়েছে, তারা দু'জনই অনড় অবস্থানে রয়েছেন। তাদের কথায় সমঝোতার কোনো পথ দেখা যায়নি। নির্বাচনের আর খুব বেশি বাকি নেই। এখনও তাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, তারা নিজ নিজ অবস্থানে অনড় মনোভাব নিয়েই পথ চলছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আশা করছি, রাজনৈতিক সমঝোতার গুরুত্ব তারা বুঝতে পারবেন।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, 'দুই নেত্রীর বক্তব্য রাজনৈতিক নেতাদের রাজনৈতিক বক্তব্যের মতোই হয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মহাসড়কে উঠতে গেলে দুটি বিষয় খুবই প্রয়োজনীয়। প্রথমত একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং দ্বিতীয়ত সুনির্দিষ্ট গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর। এই ক্ষেত্রে দেশে বর্তমানে যে জাতীয় সংকট চলছে, তা নিরসনের এক ইঞ্চি সমাধানের পথও দুই নেত্রী তাদের বক্তব্যে দেখাতে পারেননি। সংকট নিরসনের কোনো আভাসও তাদের বক্তব্যে পেলাম না। এটা জাতির জন্য খুব দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক।' এখন এই সংকট নিরসনে বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকেও ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক বলেন, জাতীয় সংসদে দুই নেত্রীর বক্তব্যই ভালো হয়েছে। আমরা খুশিও হয়েছি। তাদের উভয়ের বক্তব্যেই জাতীয় সংকট নিরসনে সমাধানে আসার আহ্বান ছিল। সেখানে সংকট নিরসনে একটি জাতীয় ঐক্যের প্রত্যাশাও ফুটে উঠেছিল। সব সংকট নিরসন হয়ে আগামী নির্বাচন সেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার হোক, নির্দলীয় সরকার হোক, সর্বদলীয় সরকার হোক কিংবা নির্বাচনকালীন সরকার হোকথ যে সরকারের অধীনেই হোক না কেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবেথ সে বিষয়টাই আমরা আশা করি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শনিবার সংসদে দুই নেত্রীর আলোচনায় যে আবহের সৃষ্টি হয়েছে, তা যে কোনো সাধারণ নাগরিককে উৎসাহিত করবে। আমরা চাই তারা আলাপ-আলোচনা করে দেশের সব সমস্যার সমাধান করুন। তাই সংসদের ওই ইতিবাচক আবহ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় ভিন্নমত থাকবেই। স্বাভাবিকভাবেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে এবং আরও কিছু ব্যাপারে তাদের বক্তব্যে দ্বিমত প্রকাশ পেয়েছে। তবুও দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের দুই নেত্রী পরস্পরের বক্তব্য শুনেছেন। সাধারণ মানুষের চাওয়া হলো, সংসদে সৃষ্টি হওয়া ওই আবহ ধরে রাখতে হবে। রাজপথে সংঘাত-সংঘর্ষ পরিহার করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ খুলতে হবে। কারণ দুই নেত্রীর ওপরে দেশের অনেক কিছু নির্ভর করে। তারা মানুষের চাওয়াকে নিশ্চয়ই গুরুত্ব দেবেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংসদ বর্জন বাদ দিয়ে বিরোধী দল সংসদে এসেছে, কথা বলেছে, প্রধান দুই রাজনৈতিক নেত্রী একজন আরেকজনের বক্তব্য শুনেছেন, সমালোচনা করলেও বক্তব্য প্রদানকালে তারা কেউ কাউকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেননিথ এসব ঘটনা ইতিবাচক। তবে জাতির সামনে এ মুহূর্তে ভয়াবহ ও গুরুতর সিদ্ধান্তের যে প্রশ্ন তা হলোথ আগামী সংসদ নির্বাচন কীভাবে হবে; সে ব্যাপারে দুই নেত্রীর বক্তব্যে কোনো আশাবাদ নেই। মনে হলো, সমাধানে তাদের কোনো আগ্রহও নেই। কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। এটি খুবই হতাশার কথা।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সকল দলের, মতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যকর নেতৃত্ব যেন বেরিয়ে আসে, গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হয়, সে পদক্ষেপ দেখতে চায় সাধারণ মানুষ।