অবৈধ ইটভাটার কারণে হুমকির মুখে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য

চকরিয়া প্রতিনিধি: চকরিয়ায় অনুমোদন বিহীন ৫ ইট ভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবশে বিষিয়ে উঠেছে। বাতাসের সাথে ইট ভাটার নির্গত ধোঁয়া মিশে গিয়ে চরম হুমকির মুখে পড়েছে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য। বির্বণ হচ্ছে পার্কের সবুজ গাছপালা। ইটভাটার ধোঁয়ার কার্বন ধুলা পানিতে পড়ে পার্কের জলজপ্রাণির ক্ষতি করছে। ভাটা গুলো বনাঞ্চলের ভিতরে গড়ে তোলার কারনে সাফারি পার্ক ও পার্ক লাগোয়া বনাঞ্চলের মুল্যবান গাছপালা প্রতিবছর উজার হচ্ছে। এখন ওই এলাকায় সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চল প্রায় উজার হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ইট ভাটা সমুহে পুড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের মুল্যবান কাঠ। বাদ যাচ্ছেনা স্থানীয় সামাজিক বনায়নের কচিকাঁচা বৃক্ষা। এতে চরমভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে উপকারভোগী লোকজন। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলছে ভাটা লাগোয়া এলাকায় কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ ও লামা বনবিভাগের পাহাড় কাটার মহোৎসব। প্রশাসন ও বনবিভাগের সংশ্লিষ্টরা প্রতিবছর ইট ভাটা মৌসুমে ভাটা মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের নগদায়ন নেয়ায় প্রকাশ্য দিবালোকে এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড অব্যাহত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনী কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। এরফলে প্রতিবছর প্রাকৃতিক ভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে এলাকার প্রতিবেশ।

জানা গেছে, উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বগাচত্বর এলাকায় প্রায় ৯শত হেক্টর বনাঞ্চলকে ২০০০সালে সরকার বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কটি প্রতিষ্টা করেন। প্রতিষ্টার পর থেকে সরকার পার্কের সৌন্দর্য্য বর্ধন ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে হরেক প্রজাতির জীব জন্তুর সংগ্রহ, এসবের আবাসস্থল সৃষ্টি, বাউন্ডারি, আলাদা আলাদা বেষ্টনী, রেষ্ট হাউস, বাংলো, মিউজিয়াম, ষ্টুডেন্ট ডরমেটরী, অকির্ড হাউজ, এনিমেল ফিডিং স্পট, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, বানায়ন, আভ্যন্তরিন সড়কসহ নানাস্থাপনা, পশুপাখির মোরাল নির্মাণ করে মনোরম ও দৃষ্টি নন্দন করে তুলেছে।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের উধর্বতন মহলের সহায়তায় পার্ক কতৃর্পক্ষ ইতোমধ্যে এ পার্কে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির জীব জন্তু, পশুপাখি সংগ্রহ করেন। বর্তমানে পার্কে হাতি, বাঘ, সিংহ, কুমির, ওয়ালবিষ্ট, কুদু, হরিণ, ভলুক, এশীয় ও আফ্রিকান তৃণভূজি প্রাণী থেকে শুরু করে শত শত প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে। রয়েছে পশু চারণ ভুমি। সাফারি পার্ক ছাড়াও বাইরের পশুপাখি যাতে আশ্রয় নিতে পারে সে জন্যে পার্কের বাউন্ডারির বাইরেও বনাঞ্চল সৃষ্টি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, সাফারি পার্কের বনাঞ্চল ঘেঁেষই বগাছড়ি ও কালাপাড়া এলাকায় খাইরুল বশর চেয়ারম্যান, আওয়ামীলীগ নেতা নুর হোসেন চৌধুরী, পিয়ারুল ইসলাম, নজু মাষ্টারের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে ৫টি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ইট ভাটা স্থাপনে পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ ও প্রশাসনের কোন অনুমতিপত্র নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা। দুটি ড্রাম সিমনি ও তিনটি উচু চিমনি দিয়ে এসব ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ইট ভাটায় জালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ভাটা লাগোয়া সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মুল্যবান গাছপালা।

সরেজমিন দেখা গেছে, এসব ইটভাটা গুলো ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ককে তিন পয়েন্ট থেকে ঘেরাও করে রেখেছে। এসব ইট ভাটার চিমনি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার কার্বন ধুলা পড়ে সাফারি পার্ক ও পার্ক লাগোয়া বনাঞ্চলের গাছপালা বিবর্ণ হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য। সরকারী বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে ভাটা গুলোতে ইট তৈরীর জন্য মাটিও নেয়া হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, প্রতিবছর লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কবিরের দোকানের একটু ভেতরে বনাঞ্চলের মাঝে অনুমোদন বিহীন একটি ড্রাম চিমনির ইট ভাটা স্থাপন করেন চকরিয়া পৌরসভার পুকপুকুরিয়া গ্রামের আবদুর রহমান ওরফে বাবুল চৌধুরী। এবছর ওই ইট ভাটা এখনো চালু হয়নি।

তবে স্থানীয়রা বলেছেন, ভাটা মালিকের সাথে প্রশাসনের দর কষাকষি শেষ হলে অল্প দিয়ে শেষ সময়ে ওই ইটভাটা স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। ওই ইট ভাটাটি সাফারি পার্কের একেবারে কাছে হওয়ায় চিমনি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া সহজে পার্কের জীববৈচিত্রে আঘাত করে। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ইটভাটা গুলোর কারণে প্রতিবছর সাফারি পর্কের বহু বিলুপ্ত প্রায় পশুপাখি মারা যাচ্ছে।

পার্কের ভেটিরিনারী বিভাগের সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, পার্কের কাছাকাছি এলাকায় এসব ইটভাটা গুলো গড়ে তোলার কারনে বর্তমানে পার্কের জীবজন্তুর মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় পশুস্বাস্থ্যও রয়েছে চরম হুমকিতে।

তাদের দাবি, ইট ভাটার নিগৃত কালো ধোঁয়ায় পার্কের পশুপাখির স্বভাবও পাল্টে যাচ্ছে। পার্ক লাগোয়া বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার কারনে পাশে পশুপাখির চারণভূমি ও আবাসস্থল ধবংস হচ্ছে। এছাড়াও ইটভাটা গুলোর কারণে এখানে মাটির উর্বরা শক্তি বিলুপ্ত হচ্ছে। এতে পার্কের গাছপালাও স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠছে না।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আতিক উল্লাহ বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কার্বণ ধুলা পানিতে পড়ে জলজ প্রাণির ক্ষতি করে, নষ্ট হয় গাছের গ্রুথ। এমনকি মাটি হারিয়ে পেলে উর্বরা শক্তি। এ অবস্থা হলে ওই মাটি থেকে নতুন করে ঘাঁস, বাঁশের বীজ ও উদ্ভিদ জন্মায় না। এতে করে পশুপাখির সহজভাবে বেঁচে থাকার পথও বাঁধাগ্রস্থ হয়।

1 টি মন্তব্য: