জেলায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে পলিথিন পদ্ধতির লবণ চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পলিথিন সহজলভ্য হওয়ায় এবং বাকীতে সরবরাহ পাওয়ায় লবণ উৎপাদনে পলিথিন পদ্ধতি ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। সনাতনী পদ্ধতির কালো লবণ চাষ বাদ দিয়ে লবণ চাষিরা বর্তমানে পলিথিন পদ্ধতির প্রতি আগ্রহ বেশি দেখাচ্ছেন। বিসিক উদ্ভাবিত পলিথিন পদ্ধতিতে লবণ চাষ বছর দশেক আগে শুরু হলেও লবণ চাষিরা তখন এতে তেমন আগ্রহী হননি। কিন্তু সনাতন পদ্ধতির চাষের চেয়ে পলিথিন পদ্ধতিতে তুলনামূলকভাবে কম শ্রম, অধিক উৎপাদন, বেশি বিক্রয় মূল্য, বেশি লাভ ও পলিথিনের সহজ লভ্যতাসহ অপরাপর সুযোগ সুবিধার কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে পলিথিন লবণ উৎপাদন বেড়েছে। নতুন সরকার গঠনের পর দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল হওয়ার আশায় চলতি মৌসুমে বেশী গত বছরের চেয়ে বেশী চাষী লবণ মাঠে নেমেছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) সুত্রে জানা গেছে, দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলা। এই দুই জেলায় কক্সবাজার সদর, রামু, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে লবণ চাষ শুরু করা হয়েছে। এ পেশায় জড়িয়ে অন্তত দেড় লক্ষাধিক কৃষক, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা জীবন ও জিবীকা নির্বাহ করে আসছে। ৮টি উপজেলায় উৎপাদিত লবণ দিয়েই পুরো দেশের লবণের চাহিদা মেটানো হয়। এই লবণ পরিশোধন করে বাজারজাত করার জন্য কক্সবাজার সদরের বিসিক শিল্প নগরী ইসলামপুর কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে ছোট বড় ৪৫/৫০ টি লবণ কারখানা ।

স্থানীয় উদ্যোক্তা ছাড়াও দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপের মধ্যে এসিআই লিঃ, মোল্লা গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, নিরিবিলি গ্রুপ, হিরা গ্রুপ, কৃষিবিদ গ্রুপ, সিনসিয়ার গ্রুপ, বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিঃ ও এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের লবণ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে ইসলামপুর শিল্প এলাকায়। পরিপূর্ণ উৎপাদনশীল এসব কারখানায় উৎপাদিত আয়োডিনযুক্ত লবণ সারা দেশে সরবরাহ হয়ে আসছে।

দেশের পোশাক শিল্পের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আমদানিনির্ভর “ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট” উৎপাদিত হচেছ হীরা গ্রুপের ইসলামপুর’ কারখানায়। লবণ কারখানা মালিকদের কাছে সনাতন পদ্ধতির কাল লবণের চেয়ে পলিথিনে উৎপাদিত সাদা লবণের চাহিদা বেশি হওয়ার ফলে মাঠ পর্যায়ে পলিথিন লবণের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুন।

লবণচাষি সরওয়ার জাহান চৌধুরী, মনজুর আলম সহ অনেক কৃষক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিকানি (৪০শতক) লবণ মাঠে গড়ে ২০০ মন কালো লবণ উৎপাদন হয়। কিন্তু পলিথিন পদ্ধতিতে প্রতিকানি লবণ মাঠে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ সাদা লবণ উৎপাদন করা হচ্ছে। আর পলিথিন লবণের দামও মণ প্রতি ৪৫/৫০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে।

ইসলামপুর শিল্প এলাকার মক্কা সল্ট ইন্ডাষ্ট্রির মালিক মোঃ সেলিম সহ অনেক লবণ মিল মালিক জানান, পলিথিন পদ্ধতিতে উৎপাদিত লবণ একদিনেই পরিশোধন করে বিক্রি করা যায় কিন্তু কালো লবণের ক্ষেত্রে প্রথমে একদিন ওয়াস ও পরের দিন ক্রাশ করে পরিশোধন করতে হয়। এতে সময়, শ্রমিক মজুরী, বিদ্যুৎবিল সহ আনুষাঙ্গিক খরচ দ্বিগুণ পড়ে যায়। এছাড়া কালো লবণ কারখানায় পরিশোধন করতে ২৫ থেকে ৪০ ভাগ ঘাটতি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, পলিথিন পদ্ধদিতে উৎপাদিত লবণের ক্ষেত্রে ঘাটতি মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগ। আর ভোক্তাদের কাছে পলিথিন ক্রাস লবণের চাহিদাও বেশি। এসব কারণে ইন্ডাষ্ট্রি মালিকরা পলিথিন লবণ বেশি পরিমাণে কিনছেন। এই ব্যাপক চাহিদার মুখে মাঠ পর্যায়ে পলিথিন লবণ উৎপাদনে চাষিরা আগ্রহ বেশি দেখাচ্ছেন। তবে গত বছরের তুলনায় পলিথিনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেক চাষি।

এদিকে, পলিথিন পদ্ধতির লবণের উৎপাদনকে ঘিরে মহেশখালী ও ইসলামপুরে গড়ে উঠেছে পলিথিন কারখানও। স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত পলিথিন অনেক চাষী বাকিতে ক্রয় করে লবণ উৎপাদন করে যাচ্ছে।

কক্সবাজার সদরের লবণ চাষী আলতাজ আহম্মদ জানান, গত বছর প্রতি পাউন্ড পলিথিন ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও এ বছর ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিগত ৪/৫ বছর ধরে পলিথিন পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করে আগের তুলনায় বেশি লাভবান হয়েছেন বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরো জানান, লবণ উৎপাদনে ব্যবহƒত পলিথিন সীট মৌসুম শেষে বিক্রি করে দেয়া যায়। এসব কারণে বিগত এক দশকের মধ্যে লবণ চাষে পলিথিন পদ্ধতির প্রয়োগ বেড়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন