বঙ্গোপসাগের বিলীন হয়ে যাচ্ছে টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ

সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, টেকনাফ 
বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ। প্রতিদিন সাগরে বিলীন হচ্ছে শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া ও উত্তরপাড়ার বসতবাড়ি, ভিটেমাটি ও শত শত গাছপালা। শুধু তাই নয় লবনাক্ত জোয়ারের পানিতে মরে যাচ্ছে মানুষের বাগানবাড়ি। আশংকা করা হচ্ছে চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে হারিয়ে যাওয়া বদর মোকামের মত শাহপরীরদ্বীপও হারিয়ে যেতে পারে। গত ৪ বছর আগে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাধ নির্মাণ না হওয়ায় প্রতিদিন ভাঙ্গা বাধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে শাহপরীরদ্বীপের কয়েকটি গ্রাম। এমনকি সাগরের জোয়ারের পানির তোড়ে টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপের প্রধান সড়কটিও কয়েক কিলোমিটার ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
ফলে শাহপরীরদ্বীপে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বছর ধরে নৌকায় পারাপার করছে। এতে এলাকাবাসী চরম দূর্ভোগের পাশাপাশি দেশের দক্ষিনাঞ্চলের মূল ভুখন্ড থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে  একদিকে পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে রক্ষার বেড়িবাধ ভাঙ্গা অন্যদিকে টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ যোগাযোগের প্রধান সড়কটি ভেঙ্গে বঙ্গোপসাগরের সাথে একাকার হয়ে যাওয়া এবং যোগাযোগের অস্থায়ী মাধ্যম বেড়িবাধও পূনির্মার জোয়ারের পানি ও ভারী বর্ষণের ফলে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় এলাকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে নৌকা ও স্পিডবোট। গত বছরের ২৩ জুলাই বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের তোড়ে বেড়িবাধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর পানির ঢলে শাহপরীর দ্বীপ-টেকনাফ সড়কের রাস্তাটি ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। প্রায় এক বছর ধরে এ রাস্তাটি ভেঙ্গে গেলেও এখনো পর্যন্ত রাস্তাটি মেরামত করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। দীর্ঘ এক বছর ধরে টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপ গাড়ী চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। প্রতিবছর শাহপরীরদ্বীপ থেকে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে সরকার এবং দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসে। চলতি বছরে পর্যটকরা আসতে শুরু করলেও কেউ সহজে এদ্বীপে যেতে পারেননি। এ সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার ভেঙ্গে যাওয়া পথ অতিক্রম করে শাহপরীরদ্বীপ যেতে বেশ কয়েকবার গাড়ী ও নৌকা বদল করতে হয়। এতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই পর্যটকরা সেখানে যেতে আগ্রহ হারায়। আর যারা শাহপরীরদ্বীপে বসবাস করছে তাঁরা যেন এ কষ্ট মেনেই নিয়েছে। কারণ মেনে না নেওয়ার কোন উপায় নেই তাদের। অনেকে বলছে, শাহপরীরদ্বীপ ও বদর মোকাম চ্যানেলের মত সাগরে বিলীন হয়ে যাবে। এ ছাড়া রাতের বেলায়  এ সড়কে দিয়ে আসা-যাওয়া অনেক বড় ঝুঁকি। এক শ্রেণীর বিশেষ মহল ভাঙ্গা রাস্তাকে পুঁজি করে প্রতিনিয়ত রাতের আধাঁরে ডাকাতি ও ছিনতাই করে সর্বশান্ত হচ্ছে। কিছুদিন আগে কর্মসংস্থান কমসূর্চীর আওতায় ৩৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বাঁধটি মেরামত কাজ শুরু করা হলেও পূর্ণিমার জোয়ারের তোড়ে ভেস্তে যায়। স্থানীয়রা ক্ষোভ করে বলেন ঠিকসই কাজ না করায় মেরামতের আগে ভেঙ্গে গেছে। দীর্ঘ এক বছর ধরে নৌকায় পারাপার করলেও স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লি­ষ্টরা এগিয়ে আসছেনা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ কামাল জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেড়িবাধ ও সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা ও স্পিডবোট। কিন্ত কয়েকদিনের টানাবর্ষণ ও পূনির্মার জোয়ারে পানি বেড়ে যাওয়ায় যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। 
এব্যাপারে টেকনাফ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন বলেন, রিংবাধ নির্মাণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং তা অনুমোদন হলে কাজ শুরু করা হবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন