ঘুড়ে দাঁড়াচ্ছে বিমান

রাশিদ রিয়াজ : 
ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের বিদেশি প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা কেভিন জন স্টিল কাজে যোগ দেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিতে ভিন্ন মাত্রার একটা সংস্কৃতি চালু হচ্ছে বলা যায়। সাপ্তাহিক হলিডে’তে তিনি এক সাক্ষাতকারে এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। আমাদের সময় ডট কমের পাঠকদের জন্যে তা উপস্থাপন করা হল।

বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন জন স্টিল বলেছেন, গত এপ্রিলে বিমানের ৫২ ভাগ ফ্লাইট সঠিক সময়ে যাওয়া আসা করেছে। যা গত দুই বছরের সেরা সিডিউল যা মে’ মাসে অব্যাহত থাকে। অবশ্য এজন্যে বিমানের সংরক্ষিত উড়োজাহাজ কাজে লেগেছে। এবং এধরনের ব্যবস্থা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ বা¯ত্মবায়ন করতে শুরু করেছে বিমান। পাইলট ও ক্রু তাদের ব্রিফিং রুমে শলাপরামর্শ করতে পারছেন। এর ফলে তারা বিমানের ফ্লাইট পরিকল্পনা সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা রাখতে পারছেন। এর ফলে তাদের সময় অপচয় হচ্ছে কম। ব্রিফিং রুম থেকে বোর্ডিং গেটে তারা দুই মিনিটে পৌঁছে যেতে পারছেন।
বেশ ছোট খাট কিন্তু কার্যকর কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বিমানে। এরফলে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম হচ্ছে বিমানের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীরা। আগামী এক বছরের মধ্যে বিমানের তৎপরতা অšত্মত ৮০ ভাগ সঠিক সময়ে পরিচালনা লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে যা বা¯ত্মবায়ন সম্ভব হলে ইউরোপের এয়ারলাইন্সের মতই ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করবে বিমান।
বিমানের দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা ছিল যাত্রীদের মালামাল খোয়া যাওয়া। এজন্যে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হত। এধরনের ত্রুটি বন্ধ করতে তদারকি ও তল্লাশী বাড়ানো হয়েছে বিমানে। কেভিন বলেছেন, এ ব্যবস্থাকে সহায়তা করতে কম্পিউটার ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। খুব কম সময়ে এসব উদ্যোগের ফলে রাজস্ব কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলা মুস্কিল হলেও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে নিসন্দেহে তা বলা যায়।
তবে বিমানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনায় প্রতিষ্ঠানটির কোনো কোনো কর্মকর্তা বিরক্তি বোধ করছেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে কেভিন জানান, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। বেশ কিছু প্রডিউসারকে পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিথিলতা সহ্য করা হচ্ছে না। ফলে যারা তা পছন্দ করছেন না তারা খুশি নন এবং তাদের সংখ্যা খুব কম। তবে বিমানকে একটি গতিশীল প্রতিষ্ঠান করতে হলে কী করতে হবে বা কোন কোন পরিকল্পনা বা¯ত্মবায়ন করতে হবে তা অধিকাংশ কর্মকর্তা এখন পরিস্কার উপলব্ধি করতে পারছেন। কথা বলে দেখেছি তারা তা সমর্থন করছেন।
দুই সপ্তাহ ধরে বিমানে যোগ দেয়ার পর দুই বছরের মেয়াদে বিমানে কেভিন কতটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবেন তা জানাতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যা ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিমানকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এজন্যেই ক্ষুদ্র হলেও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে যাতে বিমান অšত্মত সময় রক্ষার ক্ষেত্রে ইউরোপিও এয়ারলাইন্সের মত একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে। এর পাশাপাশি সেবা ও নিত্য নতুন যাত্রী সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া উড়োজাহাজের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনাতো আছেই। সেই সঙ্গে অভ্যšত্মরীণ ফ্লাইট বাড়াতে হবে, সহায়তা নিতে হবে কৌশলগত অংশীদারের।
তবে বিমানকে ঢেলে সাজাতে প্রতিষ্ঠানটির ভেতর থেকে কোনো সমস্যার মুখে পড়ছেন কী না জানতে চাইলে কেভিন জানান, মোটেও না। বরং ‘করপোরেট’ ব্যবস্থাপনার সংস্কৃতিতে পুরোপুরি সমর্থন পাচ্ছি। বিমান বোর্ড সহায়তা করছে। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যšত্ম সহায়তা করছেন। দিন কয়েক আগে বিমানের উন্নয়নে দুই বছরের কৌশলপত্র অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এমনকি আগামী ১০ বছর ধরে বিমান কিভাবে লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গতিশীল থাকবে তারও একটি কৌশলপত্র সরকার, উড়োজাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বোয়িং ও এক্সিম ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিমান লিজ নেয়া ও এ ব্যাপারে বড় অংকের খরচ যোগান সম্পর্কে কেভিন বলেন, লাভজনক করার ব্যাপারে বিমানের জন্যে যে কৌশলপত্র রচনা করা হয়েছে তাতে বিমান লিজ বা নতুন বিমান ক্রয় বাবদ কত খরচ হবে তা অšত্মর্ভূক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য নতুন একটি ৭৭৭ বিমান ক্রয় বাবদ কি¯িত্ম দিতে হবে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া দুটি ৭৩৭ বিমান লিজ বাবদ বছরে পরিশোধ করতে হবে ২ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলার।
বিমানে অতিরিক্ত জনবল রয়েছে কী না এবং অন্যান্য আšত্মর্জাতিক এয়ারলাইন্স অনুযায়ী তা কোন পর্যায়ে রয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেভিন  বলেন, বিমানে কোনো কোনো বিভাগে অতিরিক্ত জনবল রয়েছে আবার কোনো কোনো বিভাগে জনবল রয়েছে কম। এ বিষয়ে ভারসাম্য আনা হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে জনবলের একটা বড় অংশ সরাসরি বিমানের জন্যে কাজ করছে না। কাজ করছে হ্যান্ডেলিং এজেন্ট হিসেবে। কখনো অন্য এয়ারলাইন্সের জন্যে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং, কার্গো হ্যান্ডেলিং, ক্যাটারিং এমনকি প্রকৌশন ও প্রশিক্ষণ হ্যান্ডেলিং এজেন্ট হিসেবে। অথচ এসব ক্ষেত্রে বিমানের লোকবলের অভাব রয়েছে। অথচ বিমানের উড়োজাহাজ দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা থাকলেও এজন্যে জনবল বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। কারণ বিমানের বেশ কিছু বিভাগে অটোমেটিং ও কম্পিউটার ভিত্তিক সেবা চালু করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য এয়ারলাইন্স তাদের উড়োজাহাজ বৃদ্ধি করলে তাদের জন্যে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস প্রয়োজন পড়বে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন