তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে শেখ হাসিনা যা বলেছিলেন



ডেস্ক রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এখন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিপক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। অথচ ’৯০-এর গণআন্দোলনে এরশাদের পতন এবং ’৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি এবং তার দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে ’৯৪, ’৯৫ এবং ’৯৬ সালে লাগাতার সভা-সমাবেশ, হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ আন্দোলন করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিরোধীদল বিহীন কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। নির্বাচনের নামে যে কোনো প্রহসনের নির্বাচন জনগণ প্রতিরোধ করবে”। একই সঙ্গে তিনি তত্ত্ববধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এই তিন দলের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাশ এবং বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাফল্য কামনা করে বলেছিলেন, জনগণের অপরিসীম ত্যাগ ও তিন দলের আন্দোলনের ফলে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে। বাঙালি জাতি আর একবার প্রমাণ করেছে জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের কাছে কোনো স্বৈরাচারী শক্তি টিকে থাকতে পারে না। ন্যায্য ও সত্যের সংগ্রাম সব সময় জয়ী হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে (৯৩-৯৬) আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত সমাবেশে কয়েক শ’বার এ কথা বলেছিলেন যে, “জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে তার দল আন্দোলনে নেমেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে জনগণ আজ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। তত্ত্বাবধায়ক সররকার ছাড়া অন্য কোনো ফর্মুলা গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি সরকারকে ক্ষমতায় রেখে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ভোটারদের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না। তাই একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছি। আমাদের সংগ্রাম একটি মৌলিক অধিকারের সংগ্রাম। অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার কায়েম করতে চাই। একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতেই জনগণের ভোটাধিকার নিরাপদ হতে পারে”।

আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণাকালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি অবাধ সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা। এ লক্ষ্য অর্জন করার জন্য দেশের আপামর জনসাধারণ বার বার বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলন করে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার একটি অন্যতম পূর্বশর্ত হলো অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এবং প্রতিনিধিত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক একটি সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আমাদের দেশে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক চর্চা যেহেতু এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে  সেহেতু গণতন্ত্রকে সুসংহত এবং সপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রণয়ণ করার তাগিদ এখন একটি জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।

ওই সময় অর্থাৎ বিগত বিএনপি সরকারের আমলে (৯১-৯৬) তত্তাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে বিরোধীদল আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ’৯৪, ’৯৫ ও ’৯৬ সালের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াত ইসলামী অভিন্ন কর্মসূচি হিসেবে মোট ৯৬ দিন হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগ কর্মসুচি পালন করে। এর মধ্যে ৭০ দিন হরতাল অবরোধ এবং ২৬ দিন অসহযোগ। এসব কর্মসূচিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পাশাপাশি একটি লাগাতার ৯৬ ঘন্টা, ২টি ৭২ ঘন্টা এবং ৫টি ৪৮ ঘন্টার হরতাল ডাকা হয়।

’৯৬ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আয়োজিত এক জনসভায় বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভেবেছেন রোজার মাসে হরতাল হবে না। ইচ্ছেমতো ভোট চুরি করে একদলীয় নির্বাচন করিয়ে নেবেন। কিন্তু তিনি জানেন না রোজার মাসেও যুদ্ধ হয়েছিল।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টার্গেট করে হরতালের কর্মসূচি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও জামায়াত। এক্ষেত্রে ’৯৬ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যেখানেই নির্বাচনী সফরে গিয়েছিলেন সে জেলাতেই হরতাল ডেকেছিল আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি । এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক ভাংচুর, বোমাবাজী, ককটেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং সহিংসতায় নিহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ- আহত হয় সহস্রাধিক। ’৯৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু মাত্র ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের দিন হরতাল ও গণকারফিউ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত এবং আহত হয় আরো ছয় শতাধিক মানুষ।

এসব ঘটনা ওই সময়ের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন এবং ৯৪, ৯৫ ও ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির  অভিন্ন কর্মসূচি হিসেবে পালিত হরতাল অবরোধ ও অসহযোগ বিষয়ে প্রাপ্ত কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-

** দৈনিক বাংলা: ১৭ নভেম্বর ১৯৯৫ -

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছাড়া অন্য ফর্মুলা মানব না: হাসিনা’

নিজস্ব সংবাদদাতা: গাইবান্ধা ১৬ নভেম্বর।- জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে তার দল আন্দোলনে নেমেছে। সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি আজ পর্যুদস্ত। তিনি আজ গাইবান্ধার পলাশবাড়ি থানা সদরে এসএম হাই স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি ও ভোট ডাকাতির কারণে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। জনগণ আশা করেছিল তাদের ভোটে নির্বাচিত বিএনপি সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হবে। কিন্তু এই সরকার কখনো ভোট ডাকাতি এবং কখনো ভোট চুরি করে সেই বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছে। এই সরকারের হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে জনগণ আজ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। অন্য কোনো ফর্মুলা গ্রহণযোগ্য হবে না।

** দৈনিক ইনকিলাব: ৩০ ডিসেম্বর শনিবার, ১৯৯৫ -

‘বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না- শেখ হাসিনা’

স্টাফ রিপোর্টার: মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় গতকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিরোধীদল বিহীন কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। নির্বাচনের নামে যে কোনো প্রহসনের নির্বাচন জনগণ প্রতিরোধ করবে। আমি একটি অর্থবহ নির্বাচন চাই।

তিনি বলেন, এক ব্যক্তির ক্ষমতার মোহই দেশকে সংঘাত ও সন্ত্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ভোট চুরি আমরা বরদাশত করতে পারি না। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছি। এই দাবি মেনে না নিয়ে যদি দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তবে তার দায় ভার সরকারকেই নিতে হবে। দাবি না মানলে প্রধানমন্ত্রীর যে পরিণতি হবে তার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী থাকবে না। শেখ হাসিনা আজকের অবরোধ কর্মসূচি ও আগামী ৩ ও ৪ জানুয়ারি ৪৮ ঘন্টার হরতালকে সফল সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরবেন না। সবাই মাঠে নেমে পড়ুন, যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকুন। 
তিনি বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কেউ যদি মোনাফেকী করে সরকারের সঙ্গে নির্বাচনে যায়- তবে তার সম্পর্কে আপনারা যা খুশি তাই ব্যবস্থা নেবেন। শেখ হাসিনা বিরোধী দলের দাবি নিয়ে জনগণের কাছে যাবার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন এবং বলেন, কেন আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই, সরকার কিভাবে বিরোধী দলের দাবি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে তা জনগণকে বঝাতে হবে। মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতৃবৃন্দকেও জনগণের কাছে যেতে হবে।

** দৈনিক সংবাদ: ১২ সেপ্টেম্বর: ১৯৯৪ -

‘কেয়ারটেকার সরকারের দাবি মেনে নিন: জনসভায় শেখ হাসিনা’

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কেয়ারটেকার সরাকারের দাবি নেনে নেয়ার আহ্বাণ জানিয়ে বলেছেন যে, যে মুহুর্তে কেয়ারটেকার সরকারের দাবি মেনে নেয়া হবে সেই মুহুর্ত থেকে বাংলাদেশে আর কোনো হরতাল, ঘেরাও, অবরোধ আহ্বান করা হবে না। তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো কর্মী রাজপথ থেকে ঘরে ফিরে যাবে না। এবং লাঠিচার্জ, বুলেট, গরম পানি দিয়ে এই দাবি দমন করা যাবে না। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। রোবার ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল পালনের পর জনসভা আয়োজন করা হয়।

** দৈনিক বাংলা: ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ -

কূটনীতিক সমিতির মধ্যাহ্ন ভোজে হাসিনা

নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার দরকার

বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বলেছেন, বিএনপি সরকারকে ক্ষমতায় রেখে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তারা করে আসছেন। খবর ইউএনবি’র। স্থানীয় একটি হোটেলে কূটনৈতিক সমিতি আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সংগ্রাম একটি মৌলিক অধিকারের সংগ্রাম। অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার কায়েম করতে চাই।

** দৈনিক বাংলা: ১৯ ‡সপ্টেম্বর ১৯৯৪-

‘কেয়ারটেকার সরকার চাই: সিলেটের জনসভায় হাসিনা’

স্টাফ রিপোর্টার: সিলেট, ১৮ সেপ্টেম্বর।- জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ভোটারদের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না। একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতেই জনগণের ভোটাধিকার নিরাপদ হতে পারে

** দৈনিক বাংলা: ৭ ডিসেম্বর ১৯৯৩-

আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ

‘তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই: শেখ হাসিনা’

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনী  বিল আনবে। বিএনপি যাতে এই বিল পাশ করতে বাধ্য হয় এ জন্য তিনি আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে সোমবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় তিনি বক্তৃতা করছিলেন।

** দৈনিক বাংলা: ২৮ জুন, ১৯৯৪ -

আওয়ামী লীগ জাপা জামায়াতের প্রেস ব্রিফিং

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সংসদের পাঁচটি বিরোধী দল সোমবার সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় নেত্রীর সম্মেলন কক্ষে রাত পৌণে দশটায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করেছে।.. তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণাকালে শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি অবাধ সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা। এ লক্ষ্য অর্জন করার জন্য দেশের আপামর জনসাধারণ বার বার বিভিন্ন পর্যায়ে আন্দোলন করে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার একটি অন্যতম পূর্বশর্ত হলো অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এবং প্রতিনিধিত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক একটি সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আমাদের দেশে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক চর্চা যেহেতু এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে সেহেতু গণতন্ত্রকে সুসংহত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রণয়ণ করার তাগিদ এখন একটি জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।

** হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগ..

তত্ত্ববাধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির অভিন্ন কর্মসূচি হিসেবে ’৯৪, ৯৫ ও ৯৬ সালে ডাকা হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগের কিছু চিত্র-

১৯৯৪ সাল: ২৬ এপ্রিল ( হরতাল), ১০ সেপ্টেম্বর (অবরোধ), ১১, ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর (হরতাল), ২৭ সেপ্টেম্বর (অবরোধ) ৩০ নভেম্বর (অবরোধ), ৭ ও ৮ ডিসেম্বর (হরতাল), ২৪ ডিসেম্বর অবরোধ, ২৯ ডিসেম্বর (অবরোধ)।

১৯৯৫ সাল: ২, ৩ ও ৪ জানুয়ারি (হরতাল)। ১৯ জানুয়ারি (অবরোধ)। ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি (হরতাল)। ১২ ও ১৩ মার্চ(লাগাতার ৪৮ ঘণ্টা হরতাল)। ২৮ মার্চ (ঢাকা অবরোধ)। ৯ এপ্রিল ( ৫ বিভাগে হরতাল)। ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর (লাগাতার ৩২ ঘন্টা হরতাল)। ৬ সেপ্টেম্বর (সকাল-সন্ধ্যা হরতাল)। ১৬, ১৭, ১৮ সেপ্টেম্বর ( লাগাতার ৭২ ঘন্টা হরতাল)। ৭ এবং ৮ অক্টোবর (পাঁচ বিভাগে লাগাতার ৩২ ঘন্টা হরতাল)। ১৬, ১৭, ১৮ এবং ১৯ অক্টোবর (লাগাতার ৯৬ ঘন্টা হরতাল)। ৬ নভেম্বর (ঢাকা অবরোধ) ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ এবং ১৬ নভেম্বর ( প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল)। ৯, ১০ এবং ১১ ডিসেম্বর (লাগাতার ৭২ ঘন্টা হরতাল)। ১৭ ডিসেম্বর (সকাল সন্ধ্যা হরতাল)। ৩০ ডিসেম্বর ( দেশব্যাপী অবরোধ)।

১৯৯৬ সাল: ৩ ও ৪ জানুয়ারি (লাগাতার ৪৮ঘন্টা হরতাল), ৮ ও ৯ জানুয়ারি (লাগাতার ৪৮ঘন্টা হরতাল)। ১৭ জানুয়ারি (সকাল-সন্ধ্যা হরতাল)। ২৪ জানুয়ারি (সিলেটে ১১ ঘন্টা হরতাল)। ২৭ জানুয়ারি (খুলনায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল)। ২৮ জানুয়ারি (খুলনায় অর্ধদিবস হরতাল)। ২৯ জানুয়ারি (ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল)। ৩০ জানুয়ারি (চট্টগ্রামের বাশখালীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল)। ১ ফেব্রুয়ারি (বিশ¡বিদ্যালয় এলকায় হরতাল)। ৩ ফেব্রুয়ারি (অর্ধদিবস হরতাল)। ৭ ফেব্রুয়ারি ফেনীতে ( সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত হরতাল)। ৮ ফেব্রুয়ারি ( ফেনীতে হরতাল)। ১০ ফেব্রুয়ারি (রাজশাহীতে হরতাল)। ১১ ফেব্রুয়ারি (সিরাজগঞ্জে হরতাল)। ১৩ ফেব্রুয়ারি ( দেশব্যাপী অবরোধ)। ১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি ( দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার হরতাল)। ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি লাগাতার অসহযোগ)। ৯ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত লাগাতার ২২ দিন অসহযোগ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন