লিংকরোডের বেহাল দশা : সমাধান করবেন কে ?

এ. এম জি ফেরদৌস
বাংলাদেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজার বলে আমাদের কত গর্ব। কত বিশেষনে আমরা কক্সবাজারকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি। কক্সবাজারের বিজ্ঞ জনরা সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে কক্সবাজারকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য কত সুন্দর সুন্দর তকমা ব্যবহার করেন।
কিন্তু আমাদের ভ্রমন পিপাসু পর্যটকরা কক্সবাজারে ঢোকার শুরুত প্রবেশদ্বার বা করিডোর হিসাবে খ্যাত লিংকরোড যখন পৌঁছেন তখন কি দেখতে পান? লিংকরোডের চেহারা দেখে কি ভাবেন তারা? প্রবেশদ্বারের এই দূরাবস্থা দেখে যানজটে ঘন্টা ঘন্টা অপেক্ষা করে তারা কি হতাশ হয়ে পড়েন না? তারা কি ভাবেন না এত উপমা এত বিশেষনের কক্সবাজারের একি হাল? এগুলো দেখতেই কি এত কষ্ট করে কক্সবাজারে এসেছি? এত প্রশ্ন যখন তাদের মনে আসে তখন তারা নি:সন্দেহে হতাশ হয়ে পড়েন। হতাশাগ্রস্থ মন নিয়ে সাগর পাড়ে সাগরের জল সমুদ্র ছাড়া আর কিছু বিনোদনের উপকরন না দেখে ভ্রমনের কাঙ্খীত সময় না কাটিয়েই ঘরে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন। তা হলে আমরা কি কি ক্ষতির সম্মুখীন হলাম? এক তারা যে বাজেট নিয়ে এল তা খরচ করতে পারল না অর্থাৎ কক্সবাজারবাসী কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসার বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে পর্যটকদের জন্য তীর্থের কাকের মত বসে আছেন, তারা পেলনা তাদের কাঙ্খীত পন্য বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা। দ্বিতীয়ত- আগত পর্যটক ফিরে গিয়ে বন্ধু বান্ধবদের কক্সবাজার না এসে অন্য কোথাও ভ্রমনের পরামর্শ দিয়ে কক্সবাজারে আসার ব্যপারে নিরুৎসাহিত করেন। ফলে কক্সবাজারের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে ধস নেমেছে। নতুন বিনিয়োগকারীরা অন্যত্র বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা নিচ্ছেন। কক্সবাজারের রাস্তাঘাটের ক্ষত চিহ্ন গুলো এমনভাবে কক্সবাজারের সৌন্দর্য বিনষ্ট করেছে যেমনভাবে গুটি বসন্তে মানুষের চেহারার সৌন্দর্য বিনষ্ট করে কুৎসিত করে ফেলে। আর এ ক্ষত চিহ্ন গুলো সারার জন্য কর্তৃপক্ষ মেক-আপ দিয়ে যাচ্ছেন। এ মেক-আপে সাময়িক শ্রীবৃদ্ধি হলেও তার কোন স্থায়ীত্ব নেই। দু’দিন পরেই আবার কুৎসিত চেহারা বেড়িয়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষের উন্নয়ন পরিকল্পনা যেন ৮০ বৎসরের বৃদ্ধার চোখ দিয়ে দেখে করা হয়, যার কোন সুদূর প্রসারী দৃষ্টি নেই। লিংকরোডের পিচের পাশের ড্রেন দেখলে তেমনই মনে হয়। ড্রেন ভরাট হওয়ার জন্য বৃষ্টির পানির প্রয়োজন নেই। ব্যবসায়ীরা ডাষ্টবিন ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত স্থান মনে করেন এই  ড্রেনকে। যার জন্য লিংকরোডের এমন শ্রী হয়েছে যার কুৎসিত রূপ বর্ণনা করা কঠিন। গোল চত্ত্বর তো নয় - ত্রিভুজ চত্ত্বর, তার চেহারা দেখলে এদেশে কোন কর্তৃপক্ষ আছে বলে ভাবতে লজ্জা বোধ হয়। লিংকরোড এখন মিনি টার্মিনাল, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ঘন্টা ঘন্টা দাড়িয়ে প্যাসেঞ্জার নেয়ার ফলে হাট বসার দিন এমন অবস্থা হয়, যেন মনে হয় পুরো এলাকাটা গাড়ীর গ্যারেজ। পঁচা নালার দুর্গন্ধময় গন্ধে মানুষের নাভিশ্বাস বেড়িয়ে আসে। ময়লা পানিতে মানুষের কাপড় চোপড়ের এমন অবস্থা হয় যে, কাপড় ধৌত করলেই নিস্তার পাওয়া যায়না, পুরো শরীর ধৌত করতে হয়। লিংকরোডে সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। হাটের জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। তবু দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদিত পণ্য পাইকারী ও খুচরা বিক্রির জন্য লিংকরোডের হাট হচ্ছে তাদের উপযুক্ত স্থান এবং খুচরা ও পাইকারী ক্রেতা বিক্রেতাগণ ন্যায্য মূল্যে চাঁদা মুক্ত পরিবেশে ক্রয় বিক্রয়ের এমন সুযোগ খুব কম হাটেই আছে। সুতরাং লিংকরোডের হাট কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যানজটের অজুহাতে হাট বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা নয় বরং সুন্দর পরিবেশে চাষীদের পণ্য ভোক্তা সাধারনের কাছে পৌঁছানোর উপযুক্ত স্থানে হাট স্থানান্তর খুবই জরুরী। আর গাড়ীর কাউন্টার স্থানান্তরের মাধ্যমেই যানজট নিরশন হবে এমনটা ভাবা ঠিক  নয় বরং গাড়ী যেখানে যাবে সেখানেই একই অবস্থার সৃষ্টি হবে। এর জন্য চাই স্থায়ী ভাবে পরিকল্পিত উপায়ে গাড়ীর মিনি টার্মিনাল বা প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ এবং এক স্থানে কোন গাড়ী যেন বেশিক্ষণ  দাঁড়াতে না পারে তার জন্য প্রয়োজন কঠিন সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়নের জন্য কঠোর আইন। সর্বোপরি কক্সবাজারের করিডোরখ্যাত লিংকরোডের জন্য চাই বৃটিশ দৃষ্টি, মানে বৃটিশরা যেমন একশত বৎসর পুর্বে মনে করেছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য ন্যুনতম একশত ফুট রাস্তা দরকার হবে। আর এজন্যই তারা একশত ফুট, কোথাও কোথাও আরো অধিক এ্যাকোয়ার করেছিল রাস্তার জন্য। কিন্তু আমরা একশত বৎসর পরও একশত ফুটের এ্যাকোয়ারকৃত জমির পঞ্চাশ ফুটও এখন পর্যন্ত রাস্তার জন্য ব্যবহার করতে পারিনি, কত দুর্ভাগা আমরা। সুতরাং আসুন ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সুষ্ঠ, সুন্দর, সু-পরিকল্পিত উপায়ে কক্সবাজারের লিংকরোড সহ কক্সবাজার পৌরসভাকে সাজাই যা দেখলে পর্যটকদের চোখ জুড়িয়ে যাবে।
লেখক - সাধারণ সম্পাদক
লিংকরোড ব্যবসায়ী সমিতি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন