রেললাইনও হচ্ছে না কক্সবাজারে

ডেস্ক রিপোর্ট
দোহাজারি থেকে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ প্রকল্প  এ সরকারের আমলে আর হচ্ছে না। জাতীয় বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ না রাখায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এর আগে রেললাইনের জমি অধিগ্রহণ কাজও স্থগিত করা হয়েছে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছে জেলার মানুষ।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজার শহরের জেলে পার্ক ময়দানে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব দ্রুততম সময়ে এই রেলপথ নির্মাণ করা হবে বলে ঘোষণা দেন। ওই দিন শহরতলীর ঝিলংজা এলাকায় রেললাইন স্থাপন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। ১২ জুন জাতীয় সংসদে বিএনপির (কক্সবাজার-৩) সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজলের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, রেলপথটি চালু করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় স¤পদের সীমাবদ্ধতার কারণে এডিবির কাছে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চাওয়া হয়েছে। তা প্রাপ্তি সাপেক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ সিঙ্গেল লাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটির জন্য ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকের (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ) সভায় এক হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পর্যটন শহর কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। 
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অপ্রতুল বরাদ্দের কারণ দেখিয়ে প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপক গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রেল লাইনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ স্থগিত রাখতে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানান। এর আগে ৫ নভেম্বর প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপকের পক্ষে লেখা চিঠিতে বলা হয়, স্থানীয় স¤পদের সীমাবদ্ধতার কারণে ২০১১-১২ অর্থ সালে মাত্র ২২ লাখ টাকা এবং ২০১২-১৩ অর্থ সালে মাত্র এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুুবই অপ্রতুল। এত স্বল্প রবাদ্দ হতে ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। তাই ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ভূমি অধিগ্রহণ খাতে মাত্র ৩১২ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ আছে। অথচ চট্টগ্রাম জেলার ২৮০ দশমিক ৬১ একর ও কক্সবাজার জেলার ৯৬৬ দশমিক ৫৪৩ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য অন্তত ৬৭৫ কোটি ৭৭ লাখ পাঁচ হাজার টাকার বরাদ্দ প্রয়োজন।
কক্সবাজার ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা মো. নায়েরুজ্জামান বলেন, রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উখিয়া, কক্সবাজার সদর এবং চকরিয়া উপজেলা থেকে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের জন্য পৃথক তিনটি মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলাগুলো অনুমোদনের জন্য গত বছর ১২ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন না দিয়ে পাঁচ মাস পর ফেরত পাঠায়।
এদিকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের অভাবে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন জেলার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ চলতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে রেলপথ নির্মাণসহ জেলার উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দেরদাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া, রেললাইন প্রকল্পের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা), কোস্ট ট্রাস্ট, গ্রিন কক্সবাজার, শব্দায়ণ আবৃত্তি একাডেমি, এক্সপাউরুলসহ ১০টিবেসরকারি সংগঠন রেলমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ সময়ের দাবি। আগামীবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে প্রকল্পটি মাঠে মারাযাবে। বিএনপির সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, কক্সবাজার সৈকতের আশপাশে পড়ে থাকা খাস জমিগুলো দীর্ঘমেয়াদী ইজারা দিয়ে যে টাকা পাওয়া যেত, তা দিয়ে রেলপথ নির্মাণ শেষ হতো। এ সরকারের অযোগ্যতার কারণে গত চার বছরেও অর্থসহায়তার জন্য দাতা সংস্থা খুঁজে পাওয়া যায়নি যা দুঃখজনক।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রাথমিক প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামীবার ক্ষমতায় গেলে আমাদের সরকারই এটি বাস্তবায়ন করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ১২৮ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে চট্টগ্রামেরসাতকানিয়া, লোহাগাড়া, কক্সবাজারের চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর ও উখিয়ায় নয়টি রেল স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও নির্মাণ করতে হবে ৪৭টি সেতু, ১৪৯টি বক্সকালভার্ট ও ৫২টি পাইপ কালভার্ট। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মিয়ানমার ও চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেললাইন লিংকের ২৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। এতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে পর্যটন খাতেও। দৈনন্দিনের সৌজন্যে