রমজানে রাজনৈতিক ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস

ডেস্ক রিপোর্টঃ নির্বাচনকে সামনে রেখে এমনিতে ইফতার মাহফিলে এবার রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে বোঝাপড়া, জোট সম্প্রসারণ, গণসংযোগ ও  নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ চলছে জোরেশোরে। এরপর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীর রায় ঘোষণা হচ্ছে সোমবার। দিনটিতে জামায়াত সারাদেশে হরতাল ডেকেছে।
মাঠে রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। এরপর হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শফির একটি ওয়াজ সাম্প্রতিক না হলেও তা রাজনৈতিক কারণে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে সংসদ ও সংসদের বাইরে।

এসব প্রেক্ষাপট সামনে রেখে মনে হচ্ছে রমযানে রাজপথে সভা-সমাবেশ ও মিটিং মিছিল জমে উঠলে তা ব্যবসায়ীদের জন্যে দূর্ভোগের কারণ হয়ে উঠবে। ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে এবং সারাবছর ব্যবসায়ীরা রমজান মাসের অপেক্ষায় থাকেন বলে জামায়াতের হরতাল কর্মসূচি দেখে তারা আশঙ্কা করছেন। তাদের ভয়, এধরনের রাজনৈতিক ডামাডোলে তাদের ব্যবসা মার না খায়। এমনিতে ব্যবসায়ীরা গত পহেলা বৈশাখে ব্যবসা খুব একটা ভাল করতে পারেননি গণজাগরণ মঞ্চের কারণে। বই মেলা এবার মার খেয়েছে। এখন আবার রমজানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সাধারণ ক্রেতারাও ক্ষতিগ্র¯ত্ম হতে পারেন। বিরোধীদলের টানা হরতালের কারণে এর আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস ঠিকমত হয়নি বলে এখন রমযানে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকে। 

এবার রমজানের শুরুতেই রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রাধান্য পাচ্ছে ইফতার মাহফিলগুলোতে। যদিও বিরোধীদলীয় নেত্রীর আমন্ত্রণে বিএনপির ইফতার মাহফিলে দাওয়াত কবুল করেননি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তবে প্রতি রমজানেই রাজনৈতিক দলগুলোর ইফতার মাহফিল রাজনৈতিক সভায় পরিণত হলেও এবার তাতে নির্বাচনী আমেজ পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাঝে মান-অভিমান ভাঙ্গানোর কাজটি ইফতার মাহফিলেই সেরে নিবে দলগুলো। 

দেশব্যাপী অন্যান্য বারের চেয়ে এবার বেশি রাজনৈতিক ইফতার মাহফিল হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা। রমজানের শুরুতেই প্রধান বিরোধীদলের ইফতার মাহফিলকে ঘিরে চলছে আলোচনা। তবে বিএনপির ইফতার মাহফিলে সরকারি দলের যোগ না দেয়ার বিষয়টিকে অসামাজিক বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আ স ম আব্দুর রব।

তিনি আমাদের সময় ডটকমকে বলেছেন, ইফতার একটি ধর্র্মীয় বিধান আর ইফতার মাহফিল একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে তারা অংশ না নিয়ে অসামাজিকতা দেখিয়েছে। যা রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের জন্য শুভকর নয়। তাদের অংশ গ্রহণের জন্য জামায়াতে ইসলমীর উপস্থিতিকে দায়ী করায় এটিকে একটি খোড়া যুক্তি বলেন তিনি। জামায়াতের উপস্থিতিতে যদি আওয়ামীলীগ ইফতারে অংশ না নেয় তাহলে সংসদে জামায়াতের উপস্থিতিতে তারা কেন অংশ নেয় সে প্রশ্নও রাখেন  আ স ম আব্দুর রব।

বিএনপির ইফতারে আওয়ামীলীগের অংশ গ্রহণের খবরে কিছুটা রাজনৈতিক বরফ গলার ইঙ্গিত দেখা দিলেও শেষ পর্যšত্ম তাদের অংশ না নেয়ায় দুই দলের মাঝে দুরত্ব আরো বাড়বে বলে মনে করেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি ফোরদৌস আহমেদ কোরাইশী। তিনি আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, দুই দলের মাঝে দুরত্ব কখনোই কমেনি। কিন্তু ইফতারে অংশ নিলে কিছুটা প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এখন তা আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে। 

এদিকে এরশাদকে প্রধান দুই দল কাছে টানার যে প্রতিযোগিতায় নেমেছে তার সমালোচনা করে ড. ফেরদৌস আহমেদ কোরাইশী বলেন,  আসির দশকের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দুই নেত্রীরই অবদান অনেক। কিন্তু আজ দুই নেত্রীর কাছে এরশাদের গুরুত্ব দেখে সেই আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন জাগে। বিএনপি তার গঠণতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির সাথে কিভাবে ঐক্য করে সে প্রশ্ন রাখেন ফেরদৌস আহমেদ কোরাইশী।

ইফতার মাহফিলে এরশাদ উপস্থিত হলেও তাতে বিএনপি কোন রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারবে বলে মনে করেন না তিনি। আগামী নির্বাচনে এরশাদ সরকার বিরোধী দল হয়ে সংসদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে করেন ড. ফেরদৌস আহমেদ কোরাইশী। আর আ স ম আব্দুর রব বলেন, ইফতারে এরশাদের উপস্থিতি রাজনৈতিক মেরুকরণে কোন পরিবর্তন আনবে না। 

ইফতার মাহফিলে রাজনৈতিক আলোচনা ও এতে অংশ নেয়া না নেয়াকে কেন্দ্র করে আলোচনা সমালোচনাকে ভালোভাবে দেখেন না আলেমরা। তারপরেও প্রতি রমজানেই চলে এ ধরণের অনুষ্ঠান। রাজনীতিবিদরাও ইফতার মাহফিলে রাজনৈতিক বক্তব্যের পক্ষে মত দেন না। প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি ড. ফেরদৌস আহমদ কোরাইশী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি ইফতার মাহফিল ও তাতে রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া শোভন নয়। আর আ স ম আব্দুর রব বলেন, ইফতার মাহফিলে যারা রাজনীতি টেনে আনছেন তারা সঠিক কাজ করছেন না।

ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে রাজনৈতিক মেরুকরণের চেষ্টা করা হলেও রোজার পর রাজনৈতিক অঙ্গন ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে বলে মত দেন এই দুই রাজনীতিবিদ। জাতীয় নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে, কে হবেন অšত্মবর্তীকালীন সরকারের প্রধান রোজায় দুই দলের মধ্যে আলোচনা করে এর সমাধান করা দরকার বলেও তারা মনে করছেন।