সম্পদ আর সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুতুবদিয়া দ্বীপ

 
পর্যটন ডেস্ক
ব্যবসা আর পর্যটনের অনন্য ক্ষেত্র কুতুবদিয়া দ্বীপ। বাংলাদেশের ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার জেলায় কুতুবদিয়া দ্বীপের অবস্থান। মানচিত্রে কুতুবদিয়া দ্বীপ দেখতে অনেকটা বেসবলের ব্যাটের মতো। চারদিকে পানিবেষ্টিত কুতুবদিয়ার পশ্চিমে সুবিস্তৃত বঙ্গোপসাগর, পূর্বে কুতুবদিয়া চ্যানেল, দক্ষিণে সাগর পেরিয়ে মহেশখালী এবং উত্তরে সাগর পেরিয়ে বাঁশখালী। সড়কপথে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ঘাটে গিয়ে পানিপথে বোটে দুই কিলোমিটারেরও বেশি কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় কুতুবদিয়া দ্বীপে। পুরো কুতুবদিয়া দ্বীপ ২১৫.৮ বর্গকিলোমিটার, যার ৯৩ বর্গকিলোমিটার পানির উপরিভাগে দেখা যায়। অর্থাৎ ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩.২ কিলোমিটার প্রস্থ।
ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুতুবদিয়ায় ৩০টি ছোট ছোট গ্রাম রয়েছে, যার মধ্যে একমাত্র শহর হিসেবে পরিচিত ৯.৮২ বর্গকিলোমিটারজুড়ে থাকা বড়ঘোপ বাজার এলাকা। এখানেই রয়েছে একমাত্র থানা, যেটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৭ সালে। এই দ্বীপ উপজেলায় রূপান্তর হয় ১৯৮৩ সালে। উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক সাধক শাহ আবদুল মালেক আল কুতুবী (রহ.)-এর জন্মও এই কুতুবদিয়ায়। তার ঐতিহাসিক দরবার শরিফ ছাড়াও এখানে আরও আছে কালামার মসজিদ, বাতিঘর, দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প, ঝাউবনসহ ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত। 
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে ভাসমান দ্বীপ। দ্বীপে ঐতিহাসিক কুতুব শরিফ দরবার, বিভিন্ন স্থানে লবণের সুদীর্ঘ মাঠ, গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে এনে শুঁটকি করা, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের জলরাশি বিশাল বেড়িবাঁধে আছড়ে পড়ার মোহনীর দৃশ্য, দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প, ছবির মতো ঝাউবন ঘেরা সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্ত, রাতের অন্ধকারে জাহাজকে পথ দেখানো বাতিঘরসহ সবকিছুই আছে কুতুবদিয়া দ্বীপে। মনে হয় ব্যবসা আর পর্যটনের অনন্য ক্ষেত্র যেন এই দ্বীপ। স্থানীয় সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, কুতুবদিয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রতœভান্ডারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু নানা অবহেলার কারণে কুতুবদিয়া ব্যবসা বা পর্যটনের অনন্য স্থান হিসেবে গড়ে উঠতে পারছে না।
প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসেন কুতুবদিয়া দরবার শরিফে। দরবার শরিফের পরিচালক শাহজাদা শেখ ফরিদ আল-কুতুবী বলেন, বাংলা বছরের ৭ ফালগুনে বার্ষিক ফাতিহায় কয়েক লাখ মানুষ কুতুব শরিফ দরবার জিয়ারত করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে সরকারের সুনজর পড়লে সারা বছরই কুতুবদিয়ায় পর্যটক যেমন বাড়বে, তেমনি এখানকার মানুষ ও সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে। তিনি বলেন, নির্মাণের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প আলোর মুখ না দেখায় রাতে কুতুবদিয়ার অনেক ঘর ডুবে থাকে অন্ধকারে। এ ছাড়া কুতুবদিয়া রক্ষার্থে বিশাল বেড়িবাঁধ নির্মাণও অর্ধ সমাপ্ত।
এ প্রসঙ্গে কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘কুতুবদিয়ার ভাগ্য পরিবর্তনে প্রয়োজন বিদ্যুৎ ও শক্তিশালী বেড়িবাঁধ যা দ্বীপের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের অন্যতম পর্যটন ও ব্যবসা ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে ওঠবে। এক লাখ ২০ হাজার লোকের আবাস কুতুবদিয়ায় লবণ ও শুঁটকি মাছের অন্যতম বড় ক্ষেত্র। যোগাযোগের দুরবস্থা ও পর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না এ দ্বীপ, মন্তব্য করে কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হাসিনা আকতার বিউটি বলেন, দ্বীপ হিসেবে ছোট হলেও কুতুবদিয়ার সম্ভাবনা ছোট নয়। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে পর্যটন ও ব্যবসায়ের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে ওঠবে এই দ্বীপ। কুতুবদিয়ায় ঝাউবন ঘেরা বিশাল সমুদ্র সৈকতও পর্যটনের অন্যতম স্থান হিসেবে গড়ে উঠতে পারেÑ যদি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, দ্বীপের দৃষ্টিনন্দন পর্যটন ¯পটগুলো রক্ষার্থে যথাযোগ্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন বেশি। তাহলেই কুতুবদিয়াবাসীর এবং দেশের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হবে।