ঢাকা: প্রযুক্তির উন্নতির ফলে জীবনযাত্রার মান সহজ হলেও এটির বিভিন্ন খারাপ দিকও দিন দিন প্রকট আকারে দেখা দিচ্ছে। স্মার্টফোন ও ট্যাবের ব্যাপক ব্যবহার তরুণদের রাতের ঘুমকেও কেড়ে নিচ্ছে। ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহারে অধিক সময় দেয়ার কারণে এ ধরনের সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। খবর ব্লুমবার্গের।
প্রযুক্তির অধিক ব্যবহার নিয়ে এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তরুণরা এখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও টেলিভিশন দেখার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। ফলে দিন শেষে একটি প্রশান্ত ঘুমের দিকে তাদের মনোযোগ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার পাশাপাশি স্থায়ী মানসিক সমস্যায়ও আক্রান্ত হতে পারে এ তরুণরা।
অধিক ব্যবহূত প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ল্যাপটপ ও টেলিভিশন। ব্যবসাশিক্ষার ছাত্রী বিন্দা মেহতা জানান, রাতে বাড়ি ফেরার পর তার কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। বাড়ি ফেরার পর তার প্রথম কাজটি হয় উচ্চশব্দে টেলিভিশনে কোনো গানের চ্যানেল ছাড়া। এরপর তিনি সাধারণত তার ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কাছের ও দূরের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে করতে অধিকাংশ সময়ই রাত ৩টার আগে ঘুমানো হয় না তার। শুধু বিন্দাই নন। বর্তমান সময়ের অধিকাংশ তরুণ ও টিনেজারের ক্ষেত্রেই একই রুটিন প্রযোজ্য। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম ও শারীরিকভাবে সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার চেয়ে তরুণরা এখন ভার্চুয়াল জগতের দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন অধিকাংশ বিশ্লেষক।
হেনা খান নামের আরেক তরুণী জানান, সপ্তাহের কার্যদিবসগুলোয় তিনি কখনই রাত দেড়টার আগে ঘুমান না। সপ্তাহের শেষের দিনগুলোয় এর পরিমাণ ভোর ৩টায়ও গিয়ে পৌঁছে। এর কারণ হিসেবে শুধু কাছের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগকেই মূল কারণ হিসেবে দেখতে নারাজ তিনি। কেননা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় পরিচিত, স্বল্প পরিচিত ও অপরিচিত বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে চ্যাট করতে করতে এ সময় ব্যয় হয় বলে জানান তিনি। তবে এর ফলে দিনের কাজের সময়গুলোয় মাঝে মধ্যে কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তিনি।
স্বাস্থ্য পরামর্শক ও চিকিত্সকদের মতে, প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের দিক দিয়ে ল্যাপটপ ও টিভির পরই রয়েছে ভিডিও গেমস ডিভাইসের ব্যবহার। স্বল্প বয়স্ক থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক সব গ্রাহকদের কাছেই সমান জনপ্রিয় এ যন্ত্রগুলো। ফিফা, এনএফএসের নতুন নতুন গেমে বুঁদ হয়ে থাকছে ছেলে-বুড়ো নির্বিশেষে সবাই। সারা দিনের কাজের পর এ যন্ত্রগুলোয় অধিক সময় দানের পর রাতের ঘুমের ওপর এর ব্যাপক চাপ বেড়েই চলেছে বলে জানান বিশ্লেষকরা।
বর্তমানে প্রযুক্তির এ অধিক ব্যবহারের ফলে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, দিনে ২৪ ঘণ্টা সময় যেন এখন পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না। তবে এ অধিক হারে নিদ্রাহীনতার ফলে ভুক্তভোগীদের পরবর্তী সময়ে চড়া মূল্য দিতে বাধ্য হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
তবে এ ব্যাপক হারে নিদ্রাহীনতার পেছনে আরো একটি কারণ হিসেবে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর অফিসের সময়কে তুলে ধরেন বিশ্লেষকরা। বর্তমানে বিভিন্ন উদীয়মান সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোয় কাজ করছে অসংখ্য তরুণ। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে খ্যাত এ তরুণরা যেকোনো সময় কাজ করতে পারেন। অধিক লাভ ও আয়ের আশায় এ তরুণরা এ কাজের সময়কে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়িয়ে নিয়ে যান অনেক সময়ই। অধিক কাজের এ সময় গিয়ে জায়গা করে নেয় ঘুমের সময়ে। ফলে কাজে ব্যস্ত এ তরুণরা ঘুমানোর জন্য বেশির ভাগ সময়ই পায় না পর্যাপ্ত সময়।
তবে অনেক তরুণ প্রযুক্তির এ মাধ্যমগুলোকে তাদের হতাশা ভুলে থাকার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করেন। সিদ্ধরাজ সার্ভায়া নামের এক তরুণ কম্পিউটার প্রোগ্রামার বলেন, অধিক হারে কম্পিউটারে গেমস খেলা নিয়ে প্রায় সময়ই তার পিতা অভিযোগ করেন। কিন্তু এ ব্যবস্থাটি সে তার কাজের সময়ের চাপ থেকে মুক্ত থাকার একটি মাধ্যম হিসেবেই দেখেন। একই সঙ্গে এ ব্যবস্থাটি তাকে ভবিষ্যতের চিন্তা থেকে মুক্তি দানের পাশাপাশি বর্তমানের খারাপ সময়গুলোকেও ভুলে থাকতে সাহায্য করে।
তবে এ ব্যাপক আকারে প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খারাপ অনেক ঘটনা ঘটছে। অধিক নিদ্রাহীনতায় আচ্ছন্ন তরুণরা এর থেকে মুক্তি লাভের আশায় গ্রহণ করছে বিভিন্ন অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ বা ড্রাগস। এ ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন বিশেষজ্ঞরা।