স্কুলপড়ুয়া ছেলেরা এখন যৌনপল্লির প্রধান খরিদ্দার। আশঙ্কাজনকভাবে পল্লিগুলোতে তাদের যাতায়াত বাড়ছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের এক গবেষণা সমীক্ষায় এই চিত্র ফুটে উঠেছে।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘স্ন্যাচড চাইল্ডহুড’ (ছিনিয়ে নেওয়া শৈশব) শীর্ষক ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসবশিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, তাদের একটি বড় অংশ পরে যুক্ত হচ্ছে যৌনকর্মে।
এ বিষয়ে গবেষক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি ও তাঁর দল দুটি যৌনপল্লিতে কিছুদিন থেকে যৌনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, ইদানীং স্কুলপড়ুয়া ছেলেদের যৌনপল্লিতে যাতায়াতের হার বেড়েছে। তবে যৌনপল্লিতে মেয়েশিশুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, সমাজে যৌনকর্ম গোপনে পরিচালিত হয় এবং এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের নজর কিছুটা কম হওয়ায় ঠিক কত শিশু যৌনকর্মে যুক্ত হচ্ছে, তা জানা যাচ্ছে না।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শিশুদের যৌনকর্মে যুক্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয়, তাদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে বারবার ধর্ষণ করে যৌনকর্মে বাধ্য করা হচ্ছে। আইন থাকলেও শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থাই দায়ী। এ ছাড়া শিশুদের সুরক্ষায় উন্নয়ন সংস্থাগুলোর গতানুগতিক প্রকল্প ও কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিশুদের বিপথগামিতা এড়াতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বাবা-মা, পরিবার ও সমাজের সব মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা গেলে স্কুলপড়ুয়া ছেলেদের যৌনপল্লিতে যাওয়ার হার কমবে। তিনি এ বিষয়ে স্কুলগুলোকে জোরদার ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্থায়ী সদস্য কাজী রিয়াজুল হক বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশের প্রায় ১৬ হাজার মেয়েশিশু যৌনকর্মে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের মুম্বাইতে তিন থেকে পাঁচ লাখ নারী ও শিশু পাচার হয়েছে। পাকিস্তানে আছে দুই থেকে তিন লাখ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ১০-১৪ বছর বয়সী মেয়েশিশুরা।
তেরে দেশ হোমসের বাংলাদেশের পরিচালক মাহমুদুল কবির বলেন, শিশু সুরক্ষায় আইন করা হয়েছে, কিন্তু সেই আইনের ফাঁক বের করেই মেয়েশিশুদের যৌনকর্মে যুক্ত করা হচ্ছে। বহু মেয়েশিশুকে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় প্রাপ্তবয়স্কদের মতো দেখানোর জন্য।