কক্সবাজারে নির্বাচনের প্রায় আড়াই বছর পর পৌর মেয়র-কাউন্সিলরদের শপথ


শহর প্রতিনিধি: অবশেষে নির্বাচনের প্রায় আড়াই বছর পর কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র-কাউন্সিলররা শপথ গ্রহণ করেছেন। এ উপলক্ষে সভা জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় নব নির্বচিত মেয়র, ১২ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনে ৪ মহিলা কাউন্সিলরকে শপথ দেন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ লুৎফর রহমান কাজল, জেলা আ.লীগ সভাপতি এড. একে আহমদ হোসেন, পুলিশ সুপার মো. আজাদ মিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুুর রউফসহ অসংখ্য  গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ।
শপথের পরে তাদেরকে পৌরসভায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এর আগে পৌর ভবন প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সভায় নব নির্বাচিত মেয়র কাউন্সিলররা জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। এসময় পৌর ভবনজুড়ে লোকে লোকারণ্য ঘটে।
দীর্ঘ আইনী লড়াই শেষে কাঙ্খিত এ শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার তিন লক্ষাধিক জনগণের দুঃখ-শনির দশা অনেকটা কেটেছে আর হিংসুক ষড়যন্ত্রকারীদের আঁতে ঘা লেগেছে মনে করছে পৌরবাসি। 
সুত্রে জানা যায়, কক্সবাজার পৌরসভায় নির্বাচন হয় ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি। এতে ১ নং ওয়ার্ডে এসআই আকতার কামাল, ২ নং ওয়ার্ডে মিজানুর রহমান, ৩নং ওয়ার্ডে মাহবুবুর রহমান মাবু, ৪নং ওয়ার্ডে সিরাজুল হক, ৫নং ওয়ার্ডে ছালামত উল্লাহ বাবুল, ৬নং ওয়ার্ডে ওমর ছিদ্দিক লালু, ৭নং ওয়ার্ডের আশরাফুল হুদা ছিদ্দিক জামশেস, ৮নং ওয়ার্ডের রাজ বিহারী দাশ, ৯ নং ওয়ার্ডের হেলাল উদ্দিন কবির, ১০নং ওয়ার্ডের সাইফুদ্দিন খালেদ, ১১নং ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম, ১২ নং ওয়ার্ডে জিসান উদ্দিন, সংরক্ষিত আসনে হুমায়রা বেগম, মনজুমন নাহার মঞ্জু, চম্পা উদ্দিন ও কহিনুর ইসলাম নির্বাচিত হন।
২০১১ সালের ৯ মে টেকনাফ, মহেশখালী ও চকরিয়া পৌরসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলেও ল’ইয়ার সার্টিফিকেট’র অজুহাত দেখিয়ে ৩য় বারের মত পৌরসভা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের স্থগিত করা হয়। 
অথচ আইন মন্ত্রণালয় ৩টি সুস্পষ্ট আইনী মতামত দেয় যে, যেহেতু কিছু মামলা উচ্চ আদালতে শুনানী শেষে খারিজ হয়ে গেছে। কিছু মামলা আংশিক শুনানীর জন্য অপেক্ষমান। সেহেতু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ প্রদানের ক্ষেত্রে আইন বা বিধিগত কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। এরপরও কুচক্রীদের ইশারার কারণে জনপ্রতিনিধিদের শপথ প্রক্রিয়া বারবার বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

সুষ্ট নির্বাচনের পরও কুচক্রিদের কারণে যথাসময়ে তাদের শপথ না হওয়ায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ পৌরসভার অন্তত ৩ লক্ষ সাধারণ জনগণ চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশায় ভুগে। এ কারণে কয়েকজনের স্বার্থ বিবেচনা না করে সামগ্রিক স্বার্থে পৌরসভায় সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বারবার সু-দৃষ্টি কামনা করেন বঞ্চিত পৌরবাসী।

পরিশেষে শপথের দাবীতে ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারী পৌরসভা কার্যালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ, গণস্বাক্ষর অভিযান ও ২৭ জানুয়ারী হরতাল পালনসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছিল পৌরসভার শপথ বঞ্চিত জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ লোকজন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে রাজপথে বর্তমান ও সাবেক দুই জনপ্রতিনিধির কুশপুত্তলিকাও দাহ করে। 

একই দাবিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল আলা মোহাম্মদ শহীদ খানকে ২০১৩ সালের ৩মে স্মারকলিপি দেয় শপথ বঞ্চিত জনপ্রতিনিধিরা। এ সময় তিনি যথা নিয়মে শপথ অনুষ্ঠানের কথা জানালে আশ্বস্থ হন ক্ষুব্ধ নির্বাচিত প্রার্থীরা। 

এ ছাড়া ২০১১ সালের ২ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আরো একবার স্মারকলিপি দিয়েছিল পৌরসভার শপথ বঞ্চিতরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌরসভার কাউন্সিলর (সদ্য ক্ষমতালুপ্ত ভারপ্রাপ্ত মেয়র) রাজবিহারী দাশের আত্মীয় তার বাসার ভাড়াটিয়া কার্তিক দাশ গুপ্তকে দিয়ে কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন বন্ধের দাবীতে মহামান্য হাইকোর্টে ১৫/১২/২০১০ ইং তারিখ ৯৭৪৮/১০ নং রীট মামলা দাখিল করেন। এ মামলাটি প্রধান বিচারপতির নির্দেশে হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও ফরিদ আহমদ’র সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে চুড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য পাঠানো হয়। এ বেঞ্চে শহরের ঘোনার পাড়া এলাকার মোস্তাক আহমদ’র ছেলে মিজবাহ উদ্দিন তার ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে মর্মে ৬০১/১১ নং আরও একটি রীট মামলা দায়ের করে। এ মামলায়ও আইরিন দাশকে ব্যবহার করা হয় । এসব কারণে পৌরসভায় নির্বাচিত মেয়র, ৪জন মহিলা কাউন্সিলর ও ১২জন নির্বাচিত কাউন্সিলর’র শপথ প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।