আওয়ামীলীগের দু:শাসনের বিচার হবে জনতার আদালতে: সালাহউদ্দিন আহমদ

কক্সবাজার পৌর জনপ্রতিনিধিদের বিএনপির অভিনন্দন

নিজস্ব প্রতিবেদক:  বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ ‘দেশের মানুষ বাংলাদেশকে নব্য বাকশালীদের চারণভূমি বানাতে দেবে না’ দাবি করে বলেছেন, ‘এই দেশ আওয়ামী লীগের পৈত্রিক তালুকদারি নয়, মৌরুসী পাট্টাও নয়।’

তিনি বলেন, ‘সিটি কার্পোরেশন গুলোর নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই প্রধানমন্ত্রী এ দেশের ভোটারদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তিনি এ দেশের মানুষকে অভিযুক্ত করেছেন সন্ত্রাসি ও দুর্নীতিবাজদের সমর্থক হিসেবে।’ 
আগামিতে সত্যিকার অর্থে এ দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করে জনতার আদালতে বিচার করবেন বলেও দাবি করেন তিনি। 
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সম্মানে কক্সবাজার জেলা বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার বিকালে কক্সবাজার শহরের একটি অভিজাত হোটেলের বলরুমে এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। 
সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী মূলতঃ বাকশালের নতুন সংস্করণ। বাকশালের আইন অনুযায়ী আজীবন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়ার পরও শেখ মুজিব নিজেকে এবং বাকশালকে রক্ষা করতে পারেননি। শেখ হাসিনাও আজীবন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সীমাহীন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, গণহত্যা, খুন, গুম, স্বৈরশাসন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার। সুতরাং তারা দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে যেতে ভয় পায়।
তিনি বলেন, আগামীতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ ও সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়।’ 
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো আশা করব তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেবে সরকার। যদি না মানে তবে আন্দোলনের মাধ্যমে নিশ্চই তাদের যে পতন হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ইঙ্গ-মার্কিন-ভারতীয় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ভারতের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে, কিন্তু এদেশের মানুষকে দেয়া কোন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে না। 
‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব থাকলে আরেকটি রাষ্ট্র বিনা ট্যাক্সে কোন অবস্থাতেই এদেশের ভূমি ব্যবহার করতে পারে না’ বলেও অভিমত ব্যক্ত করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘২৬ অক্টোবর আওয়ামী সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। এই ২৬ অক্টোবর থেকেই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ঝান্ডা উড়িয়ে দিতে হবে।’ 
তিনি বিকাল ৬টা ৭ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে দীর্ঘ ৩১ মিনিট বক্তব্য রাখেন। ইতিপূর্বে তিনি অনুষ্টানস্থলে এসে উপস্থিত অতিথি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তিনি টেবিলে টেবিলে ঘুরে নেতা-কর্মী ও অতিথিদের সাথে কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অফুরন্ত ভান্ডার দিয়ে কক্সবাজারকে সৃষ্টি করেছেন। কক্সবাজারের এই অফুরন্ত ভান্ডার খুঁজে শেষ করা যাবে না।’ 
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিগত ৫ বছরের আওয়ামী লীগ সরকার যদি উন্নয়নে এক আনা অবদানও রাখে তা লিখেন, কিন্তু না করে থাকলে তাও লিখতে হবে।’ 
তিনি কক্সবাজারের উন্নয়ন সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেন, ‘কোথায় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর! তিনবার টেন্ডার হয়েছিল, কাজ করতে দেয়নি আওয়ামী লীগই! আওয়ামী লীগ টেন্ডারই করতে জানে, উন্নয়ন কাজ করতে জানে না।’ 
তিনি বলেন, ‘আমি উদ্যোগ না নিলে হোটেল মোটেল জোন হতো না। সরকারের এক টাকা অনুদান ছাড়া টেকনাফ বন্দর করলাম, সী-ট্রাক চালু করে সেন্টমার্টিনকে উন্নত করলাম। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যে ব্রীজ-কালভার্ট করে গিয়েছিলাম তারপর তো একটি কালভার্টও এই সরকার করতে পারেনি। যে গুলোর বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল সেই সব কালভার্টে ডাইভারসন ছাড়া একটারও ছাউনি হয়নি।’ 
সালাহউদ্দিন আহমদ কক্সবাজারের উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘কক্সবাজারের মানুষ উন্নয়ন দেখেছেন, উন্নয়ন অনুভব করেছেন, উন্নয়নের সুবিধা ভোগ করেছেন, তারপরই তারা বলেছেন, “ছেলেটা উন্নয়ন করেছে”। তার আগে নয়!’ 
তিনি আওয়ামী লীগের উন্নয়নকে ‘ফলকে’র উন্নয়ন বলেও উল্লেখ করেন। 
ইফতার মাহফিলের আলোচনার মাঝসময়ে শনিবার শপথ নেয়া কক্সবাজার পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল ফুলের তোড়া দিয়ে বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। 
সালাহউদ্দিন আহমদ পৌর মেয়রকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আগের পৌর পরিষদ কক্সবাজার শহরকে দুর্গন্ধময়, নালা-নর্দমার এক গলির শহরে পরিণত করে রেখেছিল।’ 
হোটেলের ওই বলরুমটি হয়ে উঠেছিল জাতীয়তাবাদী চেতনার মানুষের মিলন মেলা। শুধু বিএনপি নেতা-কর্মী নয়, বিএনপিকে ভালোবাসেন এমন গণ্যমান্য মানুষের উপস্থিতি পুরো মাহফিলকে গৌরবান্বিত করে তুলেছিল। সহ¯্রাধিক আমন্ত্রিত অতিথি এই মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন। 
ইফতার মাহফিলের আলোচনায় বক্তাগণ বলেন, ‘শেখ হাসিনার গণতন্ত্র মানেই শেখ তন্ত্র। এই সরকার বাংলাদেশের মুসলমানদের ১৪ নম্বর নাগরিক বানাতে চায়, যেমন ভাবে ১৭০০ সালে বৃটিশরা হিন্দুদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে মুসলমানদের ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল।’ 
তাঁরা বলেন, ‘দেশে এখন গণতন্ত্র নেই! দেশে কোন আইন নেই! দেশে কোন বিচার নেই! বর্তমান সরকার দেশকে নরকে পরিণত করেছে।
বক্তাগণ আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তারা কিভাবে রোজা রাখে, তারা কী রোজার মাহাত্ব বুঝে না!’
জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান জালিম এই সরকারের এই অপচেস্টা কী আমরা রুখে দাঁড়াবো না!’ 
মাহফিলে বক্তাগণ বলেন, ‘সূর্য অস্ত যাওয়া যেমন অপরিহার্য, তেমনি বর্তমান সরকারের পতনও তেমনি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তার জন্য কাধে কাধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামতে হবে।’ 
জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত এই অনুষ্টানে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, নেজামে ইসলাম পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা সভাপতি মাওলানা হাফেজ ছালামত উল্লাহ, খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি মাওলানা হাফেজ নুরুল আলম আল মামুন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার, মহেশখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক, চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া, কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল আহমদ, মহেশখালী উপজেলা সভাপতি এডভোকেট নুরুল আলম, টেকনাফ উপজেলা সভাপতি সরওয়ার কামাল চৌধুরী, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসিমা আকতার বকুল প্রমূখ।    
কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা ডা. সিরাজুল ইসলাম নূরী। দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন জেলা জামায়াতে ইসলামির এসিস্টেন্ট জেনারেল সেক্রেটারি এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন ফারুকী।  
পুরো অনুষ্টান সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী। অনুষ্টানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও অভ্যর্থনায় ছিলেন জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও উখিয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এস এম শাহআলম, যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট আবু সিদ্দিক ওসমানী ও দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী। শৃংখলা সমন্বয় করেন শ্রমিক দল সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, জেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক এম. মোকতার আহমদ ও জেলা ছাত্রদল সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জল। 
এই ইফতার মাহফিলে জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটি, উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিয়ন শাখার ৩ জন প্রতিনিধি ছাড়াও বিএনপির সকল অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সমাজের নানা শ্রেণী পেশার মানুষ ও বিএনপি সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।