ভাঙছে নাইক্ষ্যংছড়ি খাল

মোহাম্মদ ইউনুছঃ বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছিল এক সময় বন্যা মুক্ত,সন্ত্রাস মুক্ত ও রাজনৈতিক সহিংসতা মুক্ত এক নিরাপদ আবাসস্থল । বিগত ২০১২ সাল থেকে এই গন্ডি পেরিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় হাতির আক্রমন,সন্ত্রাস,মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান বৃদ্ধি,রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বন্যার খরাল গ্রাস পুরো
উপজেলাকে ডালমাটাল করে ফেলেছে । প্রলয়ংকারী ১৯৯১ সালের ঘূর্নিঝড়ে যে পরিমান ক্ষতি হয়নি গত বছর ২৬জুন বন্যায় তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় । এর রেশ কাটতে না কাটতেই গত ২৯ ও ৩০ জুন বর্ষপূতি পূর্ণ হওয়ার পর আবার ২দিনের টানা বর্ষণে ৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় পুরো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা । গত ২৯ ও ৩০ জুনের দুই দিনের প্রবল বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে । গত ২৯ জুন  সকাল ৬ .০০ঘটিকা থেকে অব্যাহত বর্ষণে উপজেলা নির্বাহী অফিসের নিচ তলার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়,উপজেলা সার্ভেয়ার অফিস,উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়সহ ১৯টি বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়,নাইক্ষ্যংছড়ি ছালেহ আহমদ সর ঃ উচ্চ বিদ্যালয়,নাইক্ষ্যংছড়ি মডেল সরঃ প্রাঃ বিদ্যালয়,নাইক্ষ্যংছড়ি বাজার,হরি মন্দির,হরি মন্দির পাড়া,মার্মা পাড়া,চাক পাড়া,স্কুল পাড়া,বিজিবি সদর জোন বিছামারা,বাইশারী ইউনিয়ন,ঘুমধুম,সোনাইছড়ি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী গর্জনিয়া,কচ্ছপিয়া,কাওয়ারকূপ এলাকায়  অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও বাকঁখালী নদী হয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে এই এলাকার ঘর -বাড়ি,মৎস্য প্রকল্প,পুকুর ও সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলো জল মগ্ন হয়ে পড়ে । পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলা সদরের গ্রামগুলোসহ সরকারী দপ্তর ও বাজার ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় । এই বর্ষণে আমন চাষের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয় ।  টানা বৃষ্টিতে বাইশারী ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকার মো ঃ শফির পুত্র আবু ছৈয়দ (২৭) বাড়ী থেকে বাইশারী বাজারে আসার পথে পানির জোয়ারে ভেসে গিয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন । এছাড়া বাইশারী লম্বাবিল এলাকার সিরাজ মিয়ার স্ত্রী শাহেদা বেগম ( ৩২) মাটি চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন  ।   নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেস ক্লাব সভাপতি নুরুল আলম সাঈদ বলেন,-নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রাচীন নাইক্ষ্যংছড়ি খাল ,পাহাড়ী ঝিরি ও ড্রেইন গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিগত বছরের ন্যায় এই বছর ও ২৯ ও ৩০জুন দুইদিনের বর্ষণে পানিতে তলিয়ে যায় । এই দুইদিনে ফসলসহ পুরো উপজেলায় ২ কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয় । এছাড়া বর্ষাকাল এ টানা ২ থেকে ৩ ঘন্টা বৃষ্টি হলে পুরো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ৪ -৫ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় । নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের কেন্দ্রীয় বাজার,উপজেলা প্রশাসনের দপ্তর,অধিকাংশ গ্রাম তলিয়ে যায় পানিতে । পুকুর,মৎস্য ঘামারসহ ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গুলো পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয় । সচেতন মহল এর মতে নাইক্ষ্যংছড়ির প্রাচীন খালটি দিন দিন ভরাট হয়ে যাওয়ায় একটিু বৃষ্টি হলে পাহাড় হতে নেমে আসা পানি এবং বাকখালী নদীর জোয়ারে তলিয়ে যায় উপজেলা সদর । এবং দীর্ঘ দিনের পাহাড়ী ঝিরি-ঝর্ণা গুলো ভরাট ও ছোট হয়ে যাওয়ায় পানি চলাচলে বাধাঁ সৃষ্টি হওয়ায় বন্যার সৃষ্টি হয় । এছাড়া কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন সংস্থা ও দফতর হতে নির্মিত ড্রেইন গুলো সংস্কার ও ভরাটের ফলে বৃষ্টির পানি নেমে যেতে না পারায় বন্যার সৃষ্টি হয় । তাই সচতেন মহলের মতে তড়িৎ গতিতে প্রাচীণ নাইক্ষ্যংছড়ি খাল খনন,ঝিরি-ঝর্ণা,ড্রেইন গুলো সংস্কার ও পরিস্কার করা হলে টানা বর্ষণেও তলিয়ে যাবে না নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা । সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, পাহাড়ী ঝিরি-ঝর্ণার পাশে কিছু ব্যক্তি বসতি স্থাপন করে দখলে নিয়ে নিয়েছে। ঝিরি-ঝর্ণার পার্শ্বে ও উপরে গড়ে তুলেছে ঘর বাড়ি এবং স্থাপনা । এসব স্থাপনা উপজেলা প্রশাসনকে তুলে ফেলার উদ্যোগ নিতে হবে  বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সমাজবাদীরা। এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর সহ সোনাইছড়ি,দৌছড়ি,ঘুমধুম,বাইশারী ইউনিয়নে বিগত দেড় বছরে আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বন্যা হাতির আক্রমন । বন বিভাগ সূত্রে জানা যায় গত দেড় বছরে পুরো উপজেলায় ২৭ জন শিশু,পুরুষ-মহিলা নিহত হন । আহত হন -৩১ জন । ঘর বাড়ি বিধস্তসহ ৭ কোটি টাকার উর্দ্ধে ক্ষতি সাধিত হয় । এর মধ্যে ৪জন কে বনবিভাগ ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতি পূরণ দেয় । বছরের ভয়াবহ ও নির্মম রামুর বৌদ্ধ মন্দির,বসতিতে হামলার পরিকল্পনা হয় নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে । হামলার দিন রাতে বাস নিয়ে এই এলাকা থেকে গিয়ে হামলা চালানো হয় । হামলাকারীদের পক্ষে বাজারে মিছিল হয় এবং মিছিল এর পর পুলিশ সহ নিরহ জনগনের উপর হামলা চালায় । এসবের পরিকল্পনাকারী সদ্য অপসারণকৃত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাইল আহমদ । এসবের কারনে বৃদ্ধি পেয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা । এছাড়া ও অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে গেছে মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা,মাদকসহ বৃদ্ধি পেয়েছে চোরাচালান । দেশ হতে পাচার হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ,সরকারী ঔষধ ,সিমেন্ট,সার,ঢেউ টিন,খাদ্য সামগ্রী ও প্রভৃতি পণ্য ।