সরকারের পরিণতি হবে আরও করুণ : মওদুদ

বেঙ্গলিনিউজ: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘সরকার যদি সমঝোতার পথ ছেড়ে সংঘাতের পথ বেছে নেয়, তাহলে ১৮ দলীয় জোট বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করবে। সেক্ষেত্রে সরকারের পরিণতি হবে আরও করুণ।’

শনিবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে বাজেট পরবর্তী বিরোধী দলের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত সংঘাত এড়ানোর জন্য বিরোধী দল আশাবাদী। আমরা মনে করি সরকার সংসদ ভেঙে দেওয়ার আগেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে। সেক্ষেত্রে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে যত রকমের সহযোগিতা করা দরকার তা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশ গণতন্ত্র ও সকল রাজনৈতিক দলের জন্য মঙ্গলজনক হবে, যদি সরকার নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে।’

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সংসদে আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম জনগণের মনের কথা তুলে ধরে সরকারের জবাবদিহীতা নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি যে, যখনই আমরা ‘পয়েন্ট অব অর্ডারে’ কোনো সমস্যা বা প্রশ্ন উত্থাপন করেছি তখন সরকারি দলের তরফ থেকে একজন নয় দুই তিন জন সংসদ সদস্য মূল প্রশ্ন এড়িয়ে অনেক অবান্তর অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য রেখেছেন। শুধু তাই নয় প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা আমাদের চরিত্র হনন করে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করেছেন। অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুর ক্ষেত্রে তারা অনেক সময় সত্য কথা শুধু গোপনই করেননি বরং ডাহা মিথ্যা কথা বলেছেন।’


এ বিষয়ে মওদুদ আহমদ তার লিখিত বক্তব্যে ২১টি পয়েন্ট উল্লেখ করেন।


লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের কন্টেইনার স্থাপন করার ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন টেন্ডার আহ্বান করবে তার কোনো উত্তর সরকার পক্ষ দিতে পারেনি।’


মওদুদ বলেন, ‘টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প, তিস্তা নদীর পানির হিস্যা, ট্রানজিট কোরিডোরের উপর চুক্তি, স্থল ভূমির চুক্তি বাস্তবায়ন, গঙ্গা ও তিস্তা ছাড়া আরো ৫২টি নদীর পানির হিস্যা, সমুদ্র সীমাসহ কোন বিষয়ই সরকার কোন সুস্পষ্ট জবাব দিতে পারেন না।’


তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, আইনশৃঙ্খলা অবনতি, ছাত্রলীগ-যুবলীগের তাণ্ডবলীলা সম্পর্কেও কোনো উত্তর দেয়নি।’


তিনি আরও বলেন, ‘শেয়ার বাজার লুণ্ঠন, রেলওয়ের ঘুষ, হলমার্কের অর্থ আত্মসাত, পদ্মা সেতুসহ অন্যান্য অনেক দুর্নীতির অভিযোগের কোনো উত্তর সরকার দিতে পারেনি।’


মওদুদ বলেন, ‘সরকারের অদক্ষতার কারণেই অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সংকট, যুবলীগ নেতার মালিকানায় সাভারের রানা প্লাজায় এক হাজার ৩০০ শ্রমিক হত্যাকাণ্ড, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পোশাক শিল্পের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করণের বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতার কোনো ব্যাখ্যা আমরা পাইনি।’


তিনি বলেন, ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এবং ৮৪ লাখ নারীর মালিকানায় গ্রামীণ ব্যাংকের উপর সরকারের হস্তক্ষেপ সম্পর্কে আমাদের বক্তব্যের উত্তরে অর্থমন্ত্রী ডাহা মিথ্যা কথা বলেছেন।’


ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরসহ পাঁচ সিটি করপোরেশনের জনগণ দ্বারা নির্বাচিত মেয়রদের ‘দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যায়িত করে সারা দেশের মানুষ এবং সংসদসহ সকল নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কেন অপমানিত করেছেন তার কোনো উত্তর আমরা পাইনি।’


তিনি বলেন, ‘সংসদীয় সরকার পদ্ধতির অধীনে অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই বাংলাদেশে নির্বাচন হবে এবং কোনো অনির্বাচিত নির্দলীয় সরকারের অধীনে হবে না।’ প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তির প্রেক্ষাপটে যখন বলা হয়েছে, ১৯৯৪-৯৫ সালে নির্দলীয় সরকার গঠন করার যে আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তখনও দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা থাকা সত্বেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। তাই সেই সকল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ স্বগর্বে অংশগ্রহণ করার পর এখন কেন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারবে না এই প্রশ্নের কোনো উপযুক্ত উত্তর সরকার দিতে পারেনি।’


তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন কায়েম করে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল-এই বক্তব্যের কোনো জবাব আমরা পাইনি।’


বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার আওয়ামী লীগ চরম মৌলবাদী ইসলামী সংগঠন খেলাফতে মজলিসের সঙ্গে ২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর ‘ফতোয়ার’ যৌক্তিকতাসহ ৫ দফার সমঝোতা কেন স্বাক্ষর করেছিলেন তার কোনো জবাব তারা দেননি।’


মওদুদ আহমদ বলেন, ‘৫ মে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের উপর একটা গুলিও ব্যবহার করা হয়নি এবং কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি’ বলে সরকারের এই দাবি যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে সেই রাত্রে শাপলা চত্বরে কেন বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছিল? কেন সংবাদ মাধ্যমের কোনো কর্মীকে সেখানে থাকতে দেওয়া হয়নি এবং কেন দিগন্ত ও ইসলামীক টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এই প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর সরকার পক্ষ দিতে পারেনি।’


তিনি বলেন, ‘এই সরকারের আমলে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও অবাধ হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাশেদ খান মেনন ও সরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ ২২ জন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও ভোট চুরির মাধ্যমে তাদের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগই দেশে প্রথম ভোট চুরির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে’


সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আবুল খায়ের ভূইয়া, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, রাশেদা বেগম হীরা, আসিফা আশরাফি পাপিয়া, শাম্মী আকতার, রেহানা আকতার রানু, নিলোফার চৌধুরী মনি উপস্থিত ছিলেন।