কক্সবাজারের ৪ আসনেই সুবিধাজনক অবস্থানে বিএনপি

সিবিএন: সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও নির্দলীয় সরকারের দাবীতে আন্দোলনে ব্যস্ত থাকলেও পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ করেছে বিএনপি। তবে বিএনপির কোন নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা সরাসরি বলতে রাজী না হলেও আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের মাঠ গোছানোর কথা বলছেন একাধিক নেতা। জেলা থেকে শুরু করে তৃণমুল পর্যায়ে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে জেলা বিএনপি। জেলার ৪টি আসনেই বিএনপির প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে।
নির্দলীয় সরকারের দাবীতে চলমান আন্দোলনে প্রতিদিনই জেলার উপজেলা, পৌরসভা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রাজপথ সরগরম রেখেছে বিএনপি। পাশাপাশি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরাও নির্দলীয় সরকার এবং আটককৃত দলীয় নেতাদের মুক্তির দাবীতে পালন করে যাচ্ছে মিছিল-সমাবেশ। কক্সবাজার জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগ একাধিক প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় থাকলেও বরাবরের মতোই সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বিএনপি। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র নেতারা বলছেন, দলীয় প্রার্থী নিয়ে কোন গ্রুপিং, দ্বন্ধ বা সংশয় না থাকায় দাবী আদায় সাপেক্ষে এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনে যেতে হলেও সেরকম প্রস্তুতি শেষ করে রেখেছে দলীয় নেতাকর্মীরা।
দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ। তবে যদি কোন আইনগত ঝামেলায় তিনি নির্বাচন করতে না পারেন তাহলে ওই স্থানে তার সহধর্মীনি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট হাসিনা আহমদ এমপি নির্বাচন করবেন এটা চূড়ান্ত। অন্যদিকে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও প্রার্থীদের প্রতিযোগিতা থামাতে বা দলীয় প্রয়োজনে এই আসন থেকেও নির্বাচন করতে পারেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ। আর যদি ১৮ দলীয় জোটে থেকে বিএনপি নির্বাচন করতে পারে তাহলে হয়তো বর্তমান সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর হামিদুর রহমান আযাদকে আসনটি ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। আর তা না হলে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কুতবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সাংসদ আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজল্লাহ ফরিদ এবং মহেশখালী পৌর বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক। তবে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের বিএনপির উপজেলা থেকে তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চাচ্ছেন সালাহউদ্দিন আহমদ সেখান থেকে নির্বাচন করুক। কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহীর সদস্য ও বর্তমান সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল। বিএনপি নির্বাচনে গেলে তিনি দল থেকে মনোনয়ন পাবেন এটা প্রায় চূড়ান্ত। কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলের ত্যাগি নেতা হিসেবে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে থেকে কক্সবাজার সদর-রামুতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনকে চাঙ্গা রেখেছেন। বর্তমানেও নির্দলীয় সরকারের দাবীতে বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে রাজপথে থেকে সকল আন্দোলন সফল করে যাচ্ছেন। দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি-জামায়াত তথা ১৮ দলীয় জোট যদি একসাথে নির্বাচন করে তাহলে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসন বিএনপির হাতে রেখে কক্সবাজার সদর-রামু আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দিতে পারে। আর এক্ষেত্রে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী জিএম রহিমুল্লাহর নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে কক্সবাজারে বিএনপির সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান যদি দল থেকে মনোনয়ন পান তাহলে তা হবে অলৌকিক ও আশ্চর্য্যজনক বিষয়। কারণ সম্প্রতি সংস্কারপন্থীদের দলে ফিরিয়ে আনতে তাদের সাথে কয়েকদফা বৈঠক করেছেন বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন সিনিয়র নেতা। তবে সদর-রামু আসনের দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিএনপি পাগল সাধারন মানুষের দাবী যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং দলকে সু-সংগঠিত করেছে তাকেই মনোনয়ন দেবার। আর এক্ষেত্রে শতভাগ এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সদর-রামু আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, বর্তমানে বিএনপির জন্য নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি মূখ্য নয়। মূখ্য বিষয় হচ্ছে আগে আন্দোলনকে সফল করে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্দলীয় সরকারের দাবী আদায় করে নেয়া। দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে থেকে দলের জন্য কাজ করেছেন, বর্তমানেও করে যাচ্ছেন। তাই তিনি শতভাগ আশাবাদী সদর-রামু থেকে তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন। পাশাপাশি জেলার ৪টি আসনেই বিএনপি তথা বেগম খালেদা জিয়ার প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী করে বর্তমান সরকারের অন্যায়-অবিচারের জবাব দিতে জেলাবাসী প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
দেশের ৩’শ সংসদীয় আসনের মধ্যে ভাগ্যবান আসন নামে পরিচিত কক্সাবজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে বিএনপির একক প্রার্থী নির্ধারিত হয়ে আছে। আর তিনি হচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ ও হুইপ শাহজাহান চৌধুরী। তিনি ইতোমধ্যে উখিয়া-টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনকে আগের চেয়ে আরো বেশী শক্তিশালী করে নির্দলীয় সরকারের দাবীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একদফা আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় রেখেছেন নেতাকর্মীদের। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাক বা না যাক আন্দোলনের পাশাপাশি জেলার ৪ সংসদীয় আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশি প্রার্থীরা স্ব-স্ব এলাকায় আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের কাজ সেরে ফেলছেন। তবে কৌশলগত কারনে প্রকাশ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলছেন না কেউই।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সময়ে নির্বাচনের বিষয় নিয়ে তেমন কোন মাথাব্যাথা নেই। এখন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সকল নেতাকর্মীদের একটাই মাত্র চাহিদা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবীতে চলমান আন্দোলনে চূড়ান্ত বিজয় নিয়ে এবং দাবী আদায় করেই নির্বাচনে যাওয়া। তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীরা চাঙ্গা এবং ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। যা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের বিজয়ের পথে পাথেয় হবে। জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না বলেন, এখন আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের সর্বশেষ সফলতা তথা দাবী আদায় সাপেক্ষে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যখন নির্বাচনের ডাক দিবেন তখনই আমরা নির্বাচনের কাজে জোরেশোরে নামবো। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে জেলার ১টি আসন হারালেও। এবার ৪টি আসনেই জয়লাভ করবে বিএনপি। জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইফসুফ বদরী বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবী আদায় করেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। জেলায় বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন আগামীতে ৪টি আসনেই বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করবে। কক্সবাজার পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক রাশেদ মোহাম্মদ আলী জানান, বিএনপি নির্বাচনমূখী দল। দলীয় চেয়ারপার্সন যে মুর্হুতে বলবেন সে মুর্হুতে দলীয় প্রার্থীকে সদর-রামু আসনে বিজয়ী করে আনতে সকল প্রস্তুতি রয়েছে। জামায়াতের প্রার্থী সদর আসনে নির্বাচন করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল বর্তমানে একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছে। বিএনপি জোটবদ্ধ অর্থাৎ ১৮ দলীয় জোট হলেও লুৎফুর রহমান কাজলই একক প্রাথী থাকবেন বলে দৃঢ় কণ্ঠে জানান তিনি।
উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, বাংলার মানুষ আজ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য অধির আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। কিন্তু আওয়ামীলীগ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে সর্বদলীয় সরকার গঠনের নামে নাটক সাজিয়ে বিএনপিকে বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশনেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্দলীয় সরকারের দাবীতে আন্দোলন চলছে। সে আন্দোলনের চূড়ান্ত সফলতা নিয়ে নির্বাচনের যাওয়ার কথা বলেন তিনি। জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি ও পৌর প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে এক তরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু জনগণ তা হতে দেবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে জেলাবাসী বেগম খালেদা জিয়ার প্রার্থীদের জয়ী করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন