সরাসরি গুলি, লাশ পড়লেও সমস্যা নেই

মাহমুদ সাদিক: হরতাল চলাকালে বিক্ষোভ মিছিল কিংবা সাধারণ কোনো বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে এক সময় পুলিশকে বেশ সতর্ক দেখা যেত। মিছিলের পেছনে পেছনে পুলিশের অবস্থান চোখে পড়ত। কখনও কখনও মিছিলের সামনে এবং পেছনেও পুলিশ দেখা গেছে। পুলিশের মূল লক্ষ্য থাকত মিছিলকারীদের ওপর কোন আক্রমণ হয় কী না। আবার মিছিল থেকে কোন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটে কী না সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকত পুলিশ। মিছিলকারীদেরও অনেক সময় মারমুখো হতে দেখা গেছে।
মিছিল থেকে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোঁড়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেক। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে পুলিশকে যথেষ্ট ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে দেখা গেছে। পত্রিকার পাতায় দেখা যেত পুলিশের মৃদু লাঠিচার্জের খবর। কখনও কখনও ব্যাপক লাঠিচার্জের খবরও চোখে পড়ত। তবে মিছিলকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠলে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ার খবর পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হত। আর এক বা দু’টি ফাঁকা গুলি হলে সেটা হত পত্রিকার প্রধান খবর।

সরাসরি গুলি করা হলে সেটা শুধু প্রধান খবরই হত না, কোন কোন পত্রিকা সেটিকে ব্যানার শিরোনাম করত। আর এই গুলির খবরে পুরো দেশে তোলপাড় হয়ে যেত। সংবাদপত্রে তো বটেই, বিভিন্ন সভা-সমিতি আর সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে সমালোচনার ঝড় উঠত। রাজপথও গরম হয়ে উঠত গুলির প্রতিবাদে। 

এসব এখন শুধুই ইতিহাস। আজও বাংলাদেশে হরতাল হচ্ছে, হচ্ছে বিক্ষোভ মিছিল। পুলিশও থাকছে। তবে পুলিশের চেহারায় পরিবর্তন এসেছে। তারা থাকছে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত। আর তারা যেন ধৈর্য ধারণের শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সেই প্রশিক্ষণও যেন তাদের নেই। তারা এখন আর মৃদু লাঠিচার্জের ঝুঁকি নিতে চায় না। ব্যাপক লাঠিচার্জও অনেক পরিশ্রমের কাজ। আর কাঁদানে গ্যাস-- সেও তো বিট্রে করতে পারে, বাতাসের ঝাপটায় ধেঁয়ে আসতে পারে নিজের দিকেই। তার চেয়ে বরং অত্যাধুনিক অস্ত্রের সহজ ব্যবহারকেই শ্রেয় মনে করছে পুলিশ। সরাসরি গুলি, এতে লাশ পড়লেও সমস্যা নেই। কোন জবাবদিহিও করতে হবে না। কারণ সরকারই এই গুলি আর হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গাইবে। তাই লাঠিচার্জের মত ঝুঁকি নিতে এখন আর পুলিশ প্রস্তুত নয়। 

পুলিশ সরকারের হয়েই সব সময় কাজ করে। শ্বেতাঙ্গ বৃটিশ শাসনামল, পাকি¯ত্মানী শাসক গোষ্ঠী আর স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার সবার পক্ষেই পুলিশ থেকেছে অনুগত। তবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এই পুলিশ এত ধৈর্যহারা হল কেন? সরকারের বিপক্ষে মিছিল দেখলেই পুলিশ মারমুখো কেন? কখনও কখনও মিছিল দেখলেই গুলি করার ঘটনাই বা কেন ঘটছে? আত্মরক্ষার্থে পলায়নপর নীরিহ মানুষের ওপরও গুলি হচ্ছে কেন? 

সাধারণত হরতালের আগের দিন পুলিশের ব্রীফিং অনুষ্ঠিত হয়। এই ব্রীফিং-এ হরতালে পুলিশের ভূমিকা কি হবে তা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের এবং কর্তব্যরত সব পুলিশকে জানিয়ে দেয়া হয়। এখানে শুধু পিকেটিং ঠেকানো নয়, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পিকেটারদের ওপর পুলিশের আচরণ কি হবে তাও জানিয়ে দেয়া হয়। আর এই ব্রীফিংএ সরকারের নীতিরই প্রতিফলন ঘটে। সরকার যদি ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চায় তাহলে পুলিশ তা করতে বাধ্য। কিন্তু সেই ধৈর্য থাকছে না কেন? সরকারই বা কী চায়?

সোমবার বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাসুল হক টুকু বলেছেন, পুলিশকে হরতালের মধ্যে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরাধীরা যে প্রকৃতিতে যে ধরনের আক্রমণ করবে জনগণের ওপর, গাড়ির ওপর এবং জানমালের ওপর, তা প্রতিরোধ করতে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে, তাদের বিরত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ক্ষমতা আছে, তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে আমরা পরামর্শ দিয়েছি। বিবিসি’র প্রশ্ন ছিল, এবার কি পুলিশকে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যাবে? জবাবে টুকু বলেন, অবশ্যই। যদি হরতালের নামে খালেদা জিয়ার উস্কানিতে জামায়াত শিবির, নাশকতা চালায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকবে না। পাশাপাশি দেশবাসিকেও তিনি বলেন, যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ হরতাল করছে, নাশকতা করছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙ্গালী জাতি যে অস্ত্র হাতে নিয়ে পাকি¯ত্মানি বাহিনী ও জামায়াত শিবিরকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করেছিল এবারো বাঙ্গালী যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওই সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করে দেশ ও জাতির জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে পারে।

তার এ বক্তব্য উস্কানিমূলক কিনা, বিবিসির এমন পশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিশ্চয় নয়। সাধারণ মানুষ যখন বিপদগ্র¯ত্ম হবে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পাশে তারা অবশ্যই দাঁড়াবে। জনগণ যদি আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পাশে এসে দাঁড়ায় এতে তো দোষের কিছু নেই। 

স্বরাষ্ট্র পতিমন্ত্রীর এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয় পুলিশকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে পুলিশ সেই ক্ষমতাই ব্যবহার করছে। শুধু বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারেই নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক মন্ত্রীও এমন কথা বলছেন। এমন কি সংসদেও পুলিশের এসব এ্যাকশনের পক্ষে কথা বলছেন মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারি দলের সদস্যরা। এর বিপক্ষেও কিন্তু কথা হচ্ছে, হচ্ছে প্রতিবাদ। পত্র পত্রিকায় এর সমালোচনা হচ্ছে। টেলিভিশনের টকশোগুলোতেও এ নিয়ে কথা হচ্ছে। আর সদস্য পদ রক্ষার জন্যই হোক কিংবা দায়িত্ব থেকেই হোক বিরোধী দল যদি কখনও সংসদে যায় তাহলেও এর বিপক্ষে কথা বলছে। রাজপথও হচ্ছে গরম। তবে রাজপথ গরম করতে গিয়ে আবারও পুলিশের গুলির মুখে পড়ছে অনেকে।

তবে হরতালের কর্মসূচীতেও যে পরিবর্তন এসেছে সে কথা না বললেই নয়। হরতালও এখন হচ্ছে সহিংস। এ প্রসঙ্গে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে বিবিসি প্রশ্ন করেছিল, আপনারা তো শাšিত্মপূর্ণ হরতালের পক্ষে আছেন বলছেন কিন্তু,রোববার অনেক যানবাহন ভাংচুর এবং অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে। তাহলে এবারের হরতাল শাšিত্মপূর্ণ থাকছে কি? তার জবাব, গত ১০০ বছরের ইতিহাসে দেখা গেছে স্বৈরাচারী সরকাররা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বিভিন্ন মদদপুষ্ট এজেন্ট দিয়ে যে নাশকতা করেছিল সেই নাশকতারই আমরা পুনরাবৃত্তি দেখছি বর্তমান বাংলাদেশে। 

হরতালের বিকল্প কর্মসূচী দেয়া যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায়, মানুষের নাগরিক স্বাধীনতার জন্য বিখ্যাত সব স্বাধীনতাপ্রেমী নেতারা হরতাল কর্মসূচি পালন করেছেন। দেশের মানুষের নাগরিক অধিকার সংকুচিত হচ্ছে, সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। তাই গণতান্ত্রিক অস্ত্র হিসেবে জনগনের মাঝে এই আন্দোলন এখনও কার্যকর আছে বলে তিনি মনে করেন। 

গত সপ্তাহে ব্যাপক সহিংসতায় অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনার জন্য আপনারা সরকারকে দায়ী করেছেন। কিন্তু এর দায় কিছুটা হলেও তো আপনাদের উপর বর্তায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই কর্মসূচি পালন করার সময় আমাদের অনেক নেতাকর্মীর উপর সরকারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারী দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা কর্মীরা  সশস্ত্র অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর ফলে আমাদের অনেক সাথী শহীদ হন। আমরা নিরস্ত্র, আমাদের হাতে কোনো অস্ত্র নেই। আমাদের কন্ঠ উচ্চকিত। আমরা কন্ঠ দিয়েই প্রতিবাদ করছি। আর এই প্রতিবাদের প্রত্যুত্তর পাচ্ছি গুলির মাধ্যমে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সহিংসতা হলে পুলিশও যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। সেক্ষেত্রে আপনারা কি পদক্ষেপ নেবেন। তাহলে সংঘাতই কি একমাত্র পথ? এই প্রশ্ন করা হলে রিজভী বলেন, আমরা তা মনে করি না। আমরা শাšিত্মর জন্য, জনগণের আত্মমর্যাদার জন্য লড়াই করছি। আমাদের অস্ত্র হচ্ছে কন্ঠ। আমরা প্রতিবাদ করছি দেশের মানুষের অধিকারের জন্য। 

একই দিনে সরকার ও বিরোধী দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে। আর এই সহিংসতার জন্য একে অন্যকে দোষারোপ করছে। কিন্তু এই দোষারোপ সংঘাত বন্ধ করবে না।  দেশের মানুষের জন্য কোন শাšিত্মও বয়ে আনবে না। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর কোন রাজনৈতিক কর্মসূচীকে ঘিরে মানুষ সংঘাত চায় না। দেখতে চায় না পুলিশের মারমুখী ভূমিকা। রাজনৈতিক কর্মসূচী হবে শাšিত্মপূর্ণ, আর এই কর্মসূচী দুর্ভোগ নয়- মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। পুলিশও ধৈর্যের সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। মানুষ হত্যা নয়- মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে আšত্মরিকতার সাথে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।  সরাসরি গুলি, লাশ পড়লেও সমস্যা নেই


মাহমুদ সাদিক: হরতাল চলাকালে বিক্ষোভ মিছিল কিংবা সাধারণ কোনো বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে এক সময় পুলিশকে বেশ সতর্ক দেখা যেত। মিছিলের পেছনে পেছনে পুলিশের অবস্থান চোখে পড়ত। কখনও কখনও মিছিলের সামনে এবং পেছনেও পুলিশ দেখা গেছে। পুলিশের মূল লক্ষ্য থাকত মিছিলকারীদের ওপর কোন আক্রমণ হয় কী না। আবার মিছিল থেকে কোন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটে কী না সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকত পুলিশ। 

মিছিলকারীদেরও অনেক সময় মারমুখো হতে দেখা গেছে। মিছিল থেকে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোঁড়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেক। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে পুলিশকে যথেষ্ট ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে দেখা গেছে। পত্রিকার পাতায় দেখা যেত পুলিশের মৃদু লাঠিচার্জের খবর। কখনও কখনও ব্যাপক লাঠিচার্জের খবরও চোখে পড়ত। তবে মিছিলকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠলে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ার খবর পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হত। আর এক বা দু’টি ফাঁকা গুলি হলে সেটা হত পত্রিকার প্রধান খবর। 

সরাসরি গুলি করা হলে সেটা শুধু প্রধান খবরই হত না, কোন কোন পত্রিকা সেটিকে ব্যানার শিরোনাম করত। আর এই গুলির খবরে পুরো দেশে তোলপাড় হয়ে যেত। সংবাদপত্রে তো বটেই, বিভিন্ন সভা-সমিতি আর সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে সমালোচনার ঝড় উঠত। রাজপথও গরম হয়ে উঠত গুলির প্রতিবাদে। 

এসব এখন শুধুই ইতিহাস। আজও বাংলাদেশে হরতাল হচ্ছে, হচ্ছে বিক্ষোভ মিছিল। পুলিশও থাকছে। তবে পুলিশের চেহারায় পরিবর্তন এসেছে। তারা থাকছে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত। আর তারা যেন ধৈর্য ধারণের শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সেই প্রশিক্ষণও যেন তাদের নেই। তারা এখন আর মৃদু লাঠিচার্জের ঝুঁকি নিতে চায় না। ব্যাপক লাঠিচার্জও অনেক পরিশ্রমের কাজ। আর কাঁদানে গ্যাস-- সেও তো বিট্রে করতে পারে, বাতাসের ঝাপটায় ধেঁয়ে আসতে পারে নিজের দিকেই। তার চেয়ে বরং অত্যাধুনিক অস্ত্রের সহজ ব্যবহারকেই শ্রেয় মনে করছে পুলিশ। সরাসরি গুলি, এতে লাশ পড়লেও সমস্যা নেই। কোন জবাবদিহিও করতে হবে না। কারণ সরকারই এই গুলি আর হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গাইবে। তাই লাঠিচার্জের মত ঝুঁকি নিতে এখন আর পুলিশ প্রস্তুত নয়। 

পুলিশ সরকারের হয়েই সব সময় কাজ করে। শ্বেতাঙ্গ বৃটিশ শাসনামল, পাকি¯ত্মানী শাসক গোষ্ঠী আর স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার সবার পক্ষেই পুলিশ থেকেছে অনুগত। তবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এই পুলিশ এত ধৈর্যহারা হল কেন? সরকারের বিপক্ষে মিছিল দেখলেই পুলিশ মারমুখো কেন? কখনও কখনও মিছিল দেখলেই গুলি করার ঘটনাই বা কেন ঘটছে? আত্মরক্ষার্থে পলায়নপর নীরিহ মানুষের ওপরও গুলি হচ্ছে কেন? 

সাধারণত হরতালের আগের দিন পুলিশের ব্রীফিং অনুষ্ঠিত হয়। এই ব্রীফিং-এ হরতালে পুলিশের ভূমিকা কি হবে তা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের এবং কর্তব্যরত সব পুলিশকে জানিয়ে দেয়া হয়। এখানে শুধু পিকেটিং ঠেকানো নয়, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পিকেটারদের ওপর পুলিশের আচরণ কি হবে তাও জানিয়ে দেয়া হয়। আর এই ব্রীফিংএ সরকারের নীতিরই প্রতিফলন ঘটে। সরকার যদি ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চায় তাহলে পুলিশ তা করতে বাধ্য। কিন্তু সেই ধৈর্য থাকছে না কেন? সরকারই বা কী চায়?

সোমবার বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাসুল হক টুকু বলেছেন, পুলিশকে হরতালের মধ্যে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরাধীরা যে প্রকৃতিতে যে ধরনের আক্রমণ করবে জনগণের ওপর, গাড়ির ওপর এবং জানমালের ওপর, তা প্রতিরোধ করতে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে, তাদের বিরত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ক্ষমতা আছে, তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে আমরা পরামর্শ দিয়েছি। বিবিসি’র প্রশ্ন ছিল, এবার কি পুলিশকে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যাবে? জবাবে টুকু বলেন, অবশ্যই। যদি হরতালের নামে খালেদা জিয়ার উস্কানিতে জামায়াত শিবির, নাশকতা চালায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকবে না। পাশাপাশি দেশবাসিকেও তিনি বলেন, যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ হরতাল করছে, নাশকতা করছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙ্গালী জাতি যে অস্ত্র হাতে নিয়ে পাকি¯ত্মানি বাহিনী ও জামায়াত শিবিরকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করেছিল এবারো বাঙ্গালী যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওই সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করে দেশ ও জাতির জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে পারে।

তার এ বক্তব্য উস্কানিমূলক কিনা, বিবিসির এমন পশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিশ্চয় নয়। সাধারণ মানুষ যখন বিপদগ্র¯ত্ম হবে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পাশে তারা অবশ্যই দাঁড়াবে। জনগণ যদি আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পাশে এসে দাঁড়ায় এতে তো দোষের কিছু নেই। 

স্বরাষ্ট্র পতিমন্ত্রীর এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয় পুলিশকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে পুলিশ সেই ক্ষমতাই ব্যবহার করছে। শুধু বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারেই নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক মন্ত্রীও এমন কথা বলছেন। এমন কি সংসদেও পুলিশের এসব এ্যাকশনের পক্ষে কথা বলছেন মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারি দলের সদস্যরা। এর বিপক্ষেও কিন্তু কথা হচ্ছে, হচ্ছে প্রতিবাদ। পত্র পত্রিকায় এর সমালোচনা হচ্ছে। টেলিভিশনের টকশোগুলোতেও এ নিয়ে কথা হচ্ছে। আর সদস্য পদ রক্ষার জন্যই হোক কিংবা দায়িত্ব থেকেই হোক বিরোধী দল যদি কখনও সংসদে যায় তাহলেও এর বিপক্ষে কথা বলছে। রাজপথও হচ্ছে গরম। তবে রাজপথ গরম করতে গিয়ে আবারও পুলিশের গুলির মুখে পড়ছে অনেকে।

তবে হরতালের কর্মসূচীতেও যে পরিবর্তন এসেছে সে কথা না বললেই নয়। হরতালও এখন হচ্ছে সহিংস। এ প্রসঙ্গে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে বিবিসি প্রশ্ন করেছিল, আপনারা তো শাšিত্মপূর্ণ হরতালের পক্ষে আছেন বলছেন কিন্তু,রোববার অনেক যানবাহন ভাংচুর এবং অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে। তাহলে এবারের হরতাল শাšিত্মপূর্ণ থাকছে কি? তার জবাব, গত ১০০ বছরের ইতিহাসে দেখা গেছে স্বৈরাচারী সরকাররা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বিভিন্ন মদদপুষ্ট এজেন্ট দিয়ে যে নাশকতা করেছিল সেই নাশকতারই আমরা পুনরাবৃত্তি দেখছি বর্তমান বাংলাদেশে। 

হরতালের বিকল্প কর্মসূচী দেয়া যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায়, মানুষের নাগরিক স্বাধীনতার জন্য বিখ্যাত সব স্বাধীনতাপ্রেমী নেতারা হরতাল কর্মসূচি পালন করেছেন। দেশের মানুষের নাগরিক অধিকার সংকুচিত হচ্ছে, সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। তাই গণতান্ত্রিক অস্ত্র হিসেবে জনগনের মাঝে এই আন্দোলন এখনও কার্যকর আছে বলে তিনি মনে করেন। 

গত সপ্তাহে ব্যাপক সহিংসতায় অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনার জন্য আপনারা সরকারকে দায়ী করেছেন। কিন্তু এর দায় কিছুটা হলেও তো আপনাদের উপর বর্তায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই কর্মসূচি পালন করার সময় আমাদের অনেক নেতাকর্মীর উপর সরকারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারী দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা কর্মীরা  সশস্ত্র অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর ফলে আমাদের অনেক সাথী শহীদ হন। আমরা নিরস্ত্র, আমাদের হাতে কোনো অস্ত্র নেই। আমাদের কন্ঠ উচ্চকিত। আমরা কন্ঠ দিয়েই প্রতিবাদ করছি। আর এই প্রতিবাদের প্রত্যুত্তর পাচ্ছি গুলির মাধ্যমে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সহিংসতা হলে পুলিশও যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। সেক্ষেত্রে আপনারা কি পদক্ষেপ নেবেন। তাহলে সংঘাতই কি একমাত্র পথ? এই প্রশ্ন করা হলে রিজভী বলেন, আমরা তা মনে করি না। আমরা শাšিত্মর জন্য, জনগণের আত্মমর্যাদার জন্য লড়াই করছি। আমাদের অস্ত্র হচ্ছে কন্ঠ। আমরা প্রতিবাদ করছি দেশের মানুষের অধিকারের জন্য। 

একই দিনে সরকার ও বিরোধী দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে। আর এই সহিংসতার জন্য একে অন্যকে দোষারোপ করছে। কিন্তু এই দোষারোপ সংঘাত বন্ধ করবে না।  দেশের মানুষের জন্য কোন শাšিত্মও বয়ে আনবে না। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর কোন রাজনৈতিক কর্মসূচীকে ঘিরে মানুষ সংঘাত চায় না। দেখতে চায় না পুলিশের মারমুখী ভূমিকা। রাজনৈতিক কর্মসূচী হবে শান্তিপূর্ণ, আর এই কর্মসূচী দুর্ভোগ নয়- মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। পুলিশও ধৈর্যের সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। মানুষ হত্যা নয়- মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে আšত্মরিকতার সাথে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন