ডেস্ক রিপোর্ট: চলতি নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্মচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি নিম্মচাপ শক্তি সঞ্চয় ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে গত ৩ নভেম্বর (রোববার) ঢাকাস্থ আবহাওয়া অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির নিয়মিত সভায় এই পূর্বাভাস প্রদান করা হয়। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, এ মাসে রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে।
ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চল, পার্বত্যাঞ্চলসহ দেশের অনেক এলাকায় গুটি গুটি পায়ে শীতের আগমন ঘটেছে এবং কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে বিস্তীর্ণ গ্রাম-জনপদ। এ মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। এ সময় দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গত অক্টোবর মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৬.১ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নভেম্বর মাসের কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, এ মাসে দেশে দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ২.৭৫ থেকে ৩.২৫ মিলিমিটার এবং গড় সূর্য কিরণকাল ৬ থেকে ৭.০ ঘণ্টাকাল স্থায়ী থাকতে পারে।
প্রাপ্ত আবহাওয়া উপাত্ত, ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়ুম-লের বিভিন্ন স্তরের বিশে¬ষিত আবহাওয়া মানচিত্র, জলবায়ু রিগ্রেশন ও এনালগ মডেল, ইসিএমডব্লিউএফ এবং জেএমএ মডেল পূর্বাভাস, এসওআই (এলনিনো/লানিনা অবস্থা), উপগ্রহ ও রাডার চিত্র ইত্যাদি যথাযথ বিশে¬ষণ করে উপরোক্ত পূর্বাভাস দেয়া হয়।
এদিকে গত অক্টোবর মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে উক্ত বিশেষজ্ঞ সভায় জানানো হয়, এ সময় ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া দেশের অপর ৬টি বিভাগে স্বাভাবিক হার ও পরিমাণের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে ৪৬.১ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়। এ সময় বঙ্গোপসাগরে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। প্রথম লঘুচাপটি ৭ অক্টোবর উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়। পরদিন লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং পরে নি¤œচাপে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করে।
পরবর্তীতে এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ৯ অক্টোবর আরও ঘনীভূত হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘পাইলিন’ এ পরিণত হয়। এর পর ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ১০ অক্টোবর অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।
ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ১২ অক্টোবর ভারতের পুরীর দক্ষিণে গোপালপুরের নিকট দিয়ে ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করে। ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগের উপর দিয়ে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয় এবং বিহার ও সংলগ্ন এলাকায় স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করে। এর প্রভাবে ১৪ থেকে ১৬ অক্টোবর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়। দ্বিতীয় লঘুচাপটি ২১ অক্টোবর দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট হয় এবং পরদিন এটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। পরবর্তীতে এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ভারতের অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করে এবং উপকূলীয় এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবে অবস্থান করে। তবে এর বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকায় ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়। সেইসাথে কিছু কিছু জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়। ২২ অক্টোবর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসসহ দেশের নদ-নদীর অবস্থা অক্টোবর মাসের পূর্বাভাসের সাথে সংগতিপূর্ণ ছিল বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন