ডেস্ক রিপোর্ট: মিয়ানমারে পোর্ট অব কল সুবিধা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশি এ দেশটির সঙ্গে আগামী ফেব্র“য়ারি মাসে শুরু হতে যাচ্ছে নন-কনভেনশনাল জাহাজ চলাচল। এর আগে জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই করবে। চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া পর্যালোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন উভয় দেশের প্রতিনিধিরা। মিয়ানমারকে পাঁচটি পোর্ট অব কল সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ। পোর্ট অব কল সুবিধা হচ্ছে এক দেশের জাহাজ বা নৌযান অন্য দেশের নৌবন্দর ব্যবহার করার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এই বন্দরগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, মংলা, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ ও টেকনাফ। আর বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছ থেকে পাচ্ছে চারটি পোর্ট অব কল সুবিধা। এই নৌবন্দরগুলো হচ্ছে ইয়াঙ্গুন, পাথাইন, সিটু ও মংডু।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ছয়টি রুটের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। মূলত রুট তিনটি, তবে আসা-যাওয়া করায় আন্তর্জাতিকভাবে ছয়টি বলে বিবেচিত হবে। রুটগুলো হচ্ছে ইয়াঙ্গুন-পাথাইন-সিটু-চট্টগ্রাম-মংলা-খুলনা, ইয়াঙ্গুন-পাথাইন-সিটু-চট্টগ্রাম-নারায়ণগঞ্জ-পানগাঁও এবং সিটু-মংডু-টেকনাফ। নৌ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন অর্থনীতি প্রতিদিনকে জানান, আগামী জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল আসবে। আশা করছি, ওই সময় নন-কনভেনশনাল জাহাজ চলাচলের মানসম্পন্ন পরিচালন প্রক্রিয়া (এসওপি) চূড়ান্ত করা হবে। এর পরের মাসে আনুষ্ঠানিক নন কনভেনশনাল জাহাজ চলাচল শুরু হতে পারে। ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ কমিটির সভা ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চলে। ওই সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন নৌমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। ওই সভায় পোর্ট অব কল এবং নন-কনভেনশনাল জাহাজ চলাচলের মানসম্পন্ন পরিচালন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। নৌ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার সফর করেন। ওই সময় যোগাযোগ ও বাণিজ্য বিষয়ে কয়েকটি চুক্তি সই হয়। নন কনভেনশনাল জাহাজ মূলত ৫০ থেকে ৫০০ টন পণ্য পরিবহন করতে পারে। এসব জাহাজ স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য শেখ মাহফুজ হামিদ জানান, এসব জাহাজ পরিচালনার অভিজ্ঞতা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের রয়েছে। এতে করে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে। উদ্যোক্তারা মনে করেন, এই জাহাজ চলাচল শুরু হলে ইয়াঙ্গুন থেকে পণ্য পরিবহনের ব্যয়ও কমে যাবে। বর্তমানে ইয়াঙ্গুন থেকে কোনো পণ্য চট্টগ্রামে আনতে চাইলে সিঙ্গাপুর ঘুরে আসতে হয়। এতে প্রতি টন পণ্যের জাহাজ ভাড়া লাগে গড়ে ৬০ ডলার। সময়ও প্রয়োজন হয় বেশি। এ চুক্তি সম্পাদিত হলে ইয়াঙ্গুন থেকে নারায়ণগঞ্জ বা পানগাঁও পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে ভাড়া লাগবে গড়ে প্রতি টন ২০ ডলার, সময়ও লাগবে অনেক কম। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ১৯৯৪ সাল থেকে চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। বাণিজ্য পরিস্থিতি এখন মিয়ানমারের অনুকূলে। গত অর্থবছরে উভয় দেশের বাণিজ্য হয়েছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রাক্কলন করা হয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি এস এম নুরুল হক মনে করেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এর পাশাপাশি ব্যাংক যোগাযোগ বাড়লে উভয় দেশের মধ্যে আরো বাণিজ্য বাড়ানো সম্ভব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন