সৌদিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপর অত্যাচার কক্সবাজারের হাজারো পরিবার উৎকণ্ঠায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: সৌদি আরবে অবৈধভাবে অবস্থারত প্রবাসীদের ধরতে চালু হওয়া বিশেষ অভিযানের কারণে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলা থেকে সৌদিতে যাওয়া হাজার হাজার পরিবার। সম্প্রতি সেই দেশে অবস্থানরত বিদেশীদের দেশে ফেরত ও আটকের সংবাদ গণমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রকাশিত হলে কক্সবাজার জেলা জুড়ে সৃষ্টি হয় এ অবস্থা।
জানা গেছে, স্বাধীনতার আগে ও পরে এই দেশের বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলা থেকে হাজার হাজার লোক জীবন ও জীবিকার সন্ধানে সৌদি আরব যান। তৎমধ্যে অনেকের আকামা থাকলেও আবার অনেকেই রয়েছেন অবৈধভাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীমান্ত জেলা হওয়ায় কক্সবাজারের পাসপোর্ট নিয়ে অনেক রোহিঙ্গারাও দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে অবস্থান করছে। তাদের কেউ কেউ সেদেশে মানবিক আশ্রয় পেলেও বাংলাদেশী পরিচয়ে যারা থেকে গেছেন তারাও এখন চরম বেকায়দায় পড়েছে।
সৌদি আরব থেকে সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে এক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে জানান, বিদেশীদের মধ্যে বিশেষ করে বাংলাদেশীদের ব্যাপারে সৌদি সরকার ইতিপূর্বে অনেক বার কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই পদক্ষেপ গুলো এবারের মতো এত কড়াকড়ি ছিলনা। বর্তমানে সৌদিতে অবস্থানরত লাখ লাখ বাংলাদেশীদের মধ্যে যাদের বৈধ ভিসা-আকামা রয়েছে, তারাও চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, বাংলাদেশী যেখানেই পাচ্ছেন সৌদি আরবের বিশেষ অভিযান টিম তাদের ধর পাকড় করছেন। তৎমধ্যে যাদের ভিসা রয়েছে এরকম বাংলাদেশীদেরও বাদ দিচ্ছেন না সৌদি বিশেষ অভিযানকারী টিম। শুধু তাই নয়, ইতিপূর্বে সেদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশী অবস্থানরত যারা অবৈধভাবে রয়েছেন, তারা ইচ্ছে করলে বাংলাদেশী ৪০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে স্বেচ্ছায় সৌদি আরব ছাড়তে পারবেন। 
জানা গেছে, এজন্য হাজার হাজার বাংলাদেশী লাইন ধরে সৌদি সরকারের নিয়ম মতে জরিমানা দিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে আসার চেষ্টা করলেও অভিযোগ উঠেছে, সৌদি সরকার লাইনে থাকা হাজার হাজার বাংলাদেশীদের মধ্য থেকে লোক দেখানো কয়েকজনের কাছ থেকে জরিমানা নিয়ে বাকিদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। ফলে সৌদি আরব থেকে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে তথ্য জানানো ওই ব্যক্তিটি জানান, সৌদি সরকারের এ আচরণের কারণে এখনো হাজার হাজার বাঙ্গালী রয়েছে, যারা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে ইচ্ছুক তারা দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। 
সূত্রটি আরো জানায়, এ কারণে দেশে ফেরার ইচ্ছে থাকা সত্বে তিনি নিজেও চিন্তিত হয়ে পড়ছেন যে, কিভাবে দেশে আসবেন। তিনি জানান, সৌদি সরকার বর্তমানে বাংলাদেশীদের প্রতি এমন বিরূপ আচরণ করছেন যে, দেশে ফিরতে ইচ্ছুক বাঙ্গালীদেরও তারা ধরে ধরে সেদেশের জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। অতএব, প্রবাসী ওই ব্যক্তিটি এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, আমাদের এই দুর্দিনে আপনারা রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা  কিছু করেন। না হয়, লাখ লাখ বাংলাদেশীদের সৌদি জেলখানায় বছরের পর বছর আটকে থাকতে হবে তা বড় কথা নয়, তাদের অনেকেই সেখানে মারাও যাবেন।
এদিকে, সোমবার থেকে শুরু হওয়া অভিযানের কারণে গ্রেপ্তার আতঙ্কে সময় পার করছেন বহু প্রবাসী বাংলাদেশি। আতঙ্কিত শুধু অবৈধ প্রবাসীরাই নন, বৈধ শ্রমিক যারা মালিকের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছিলেন তারাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে কর্মস্থলে যাননি।
নতুন আইন অনুযায়ী আকামায় উল্লেখিত পেশায় কাজ করা বাধ্যতামূলক, অন্যথায় অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এজন্য সোমবার সকাল থেকেই বন্ধ ছিল অনেক মুদি দোকান, রেস্টুরেন্ট ও সেলুন। সুপার মার্কেটেও অনেক দোকান বন্ধ দেখা গেছে। অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়েছিল রিয়াদের বিভিন্ন সড়ক ও মাহসড়কে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা ‘হারা’ ও ‘বাথহা’ ছিল অনেকটাই ফাঁকা। অথচ ইতোপূর্বে এটি ছিল অবৈধ শ্রমিকদের অভয়ারণ্য। 
এদিকে, জরিমানার ভয়ে অনেক কো¤পানি আগে থেকে কর্মরত অবৈধ শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করছে। অনেক বৈধ লোকও ৪/৫ মাসের ছুটিতে দেশে চলে যাচ্ছে। এমন একজন শ্রমিক চট্টগ্রামের আব্দুল্লাহ ছুটিতে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, আমার কফিলের (মালিকের) কাজ নাই, তাই আল জাবর কো¤পানি কাজ করতাম। এখন ওই কো¤পানিতে কাজ করা নিরাপদ নয়। যে কোনো সময় পুলিশ ধরে নিয়ে যেতে পারে। এজন্য ছুটিতে যাচ্ছি। আশা করি ৪/৫মাস পর এমন কড়াকড়ি থাকবে না। তখন এসে অন্য কাজ করবো যোগ করেন তিনি।
অভিযানে ইতোমধ্যে পাঁচ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা মদীনায় হিলটন হোটেলে কাজ করতেন। কর্মক্ষেত্রে আসার সময় তাদের কাছে আকামা না পেয়ে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে বলে জানায় হোটেলের এক ভারতীয় কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, সৌদি সরকার অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সময় দিয়েছিল। সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন দেশের অনুরোধে সেই সময় বৃদ্ধি করা হয়। গত রবিবার সেই বর্ধিত সময়ও শেষ হয়ে যায়। এরপর সোমবার থেকে শুরু হয় বিশেষ অভিযান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন