ডেস্ক রিপোর্ট: চরম বেকায়দায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নির্বাচনে উভয়কুল রক্ষার কৌশল নিয়ে এখন তিনি তার দলের অস্তিত্ব নিয়েই চিন্তিত। নির্বাচনের আগেই একদফা ভাঙনের পর তিনি যে কৌশল নিয়েছিলেন নির্বাচনের পর তা তার জন্য বড় বিপদ ডেকে এনেছে। এখন তিনি নিজ দলেও ক্ষমতাহীন। স্ত্রী রওশন এরশাদ বিরোধী দলের নেতা হওয়ার পর দলীয় মন্ত্রী ও এমপিরা এখন রওশনের পাশে। দলের সংসদীয় দলের বৈঠক হচ্ছে রওশনের নেতৃত্বে। রওশনের নেতৃত্বে স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়া হয়েছে এরশাদকে ছাড়াই। এদিকে নির্বাচনের আগে এরশাদের বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পর যেসব প্রার্থী সরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারাও ক্ষোভ আর অভিমান নিয়ে এরশাদ থেকে দূরে। এ নেতারাও এখন এরশাদকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। দলের মধ্যে এমন অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যেই এরশাদের সামনে হাজির হয়েছে আরেক পরীক্ষা। মঞ্জুর হত্যা মামলার খড়্গ তার মাথার ওপর। মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করার পরের দিন এরশাদ বিবৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার সহযোগী হওয়ার ঘোষণা দেন।
তার এ বিবৃতি দেয়ার পর অনুগত নেতাকর্মীরাই বলছেন, এরশাদ চরম এক অস্বস্তিকর সময় পার করছেন। দলে যেমন তার নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনি রাজনৈতিক অঙ্গনেও তিনি আস্থাহীন। সর্বশেষ সংরক্ষিত আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নিজের ক্ষমতা নিয়ে দলেই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। এ বিষয়ে কর্তৃত্ব চেয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেন সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। যদিও মনোনয়নপত্র বিক্রি ও প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এরশাদ। এরপর নিজের পছন্দের প্রার্থীদের একটি তালিকাও করেছিলেন। এরশাদের বোন, ভাই জিএম কাদেরের স্ত্রীসহ এরশাদের পছন্দের ৬ প্রার্থীর নাম কোন কোন গণমাধ্যমে ছাপাও হয়েছে। কিন্তু এ তালিকা প্রকাশের পর রওশন এরশাদ ও দলীয় এমপিরা আপত্তি তোলেন। তারা এরশাদ ঘনিষ্ঠ প্রার্থীদের এমপি করার বিপক্ষে মত দেন। এ নিয়ে রওশন এরশাদের বিরোধিতার মুখে চূড়ান্তভাবে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ থেকে বিরত থাকেন এরশাদ।
দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, এরশাদ ও রওশন এরশাদ পরামর্শক্রমে প্রার্থী ঠিক করবেন। দলে কোন দ্বন্দ্ব নেই এবং সংসদ অধিবেশন শুরু হলে জাতীয় পার্টি নিয়ে সব ধরনের বিভ্রান্তি কেটে যাবে।
এদিকে মহাসচিব এমন দাবি করলেও নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় পার্টিতে চলছে চরম অস্থিরতা। নির্বাচনের আগেই এরশাদকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ এরশাদের নেতৃত্ব ত্যাগের ঘোষণা দেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসিহকে মহাসচিব করে তিনি জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষণা করেন। গতকাল রাতে কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটে যোগ দিয়েছে। কাজী জাফরের জাতীয় পার্টিতে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য যুক্ত হয়েছেন।
এ ছাড়া এরশাদের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো আরও কয়েকজন নেতা কাজী জাফরের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্যদিকে নির্বাচনের পরে এরশাদের নেতৃত্বে থাকা জাতীয় পার্টিতেও চরম বিভক্তি দেখা দিয়েছে। সরকারি সুবিধা নেয়া নিয়ে সংসদ সদস্যরা রওশন এরশাদকে ঘিরে ক্ষমতার বলয় তৈরি করেন। এ ক্ষেত্রে দূরে রাখা হয় এরশাদকে। এরশাদকে ক্ষমতাহীন করার কৌশলের অংশ হিসেবে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদেরকে এমপি হিসেবে সংসদে নেয়া হয়নি। দলের নেতাদের মধ্যে যে প্রক্রিয়ায় এরশাদকে বিজয়ী করা হয়েছে একই প্রক্রিয়ায় জিএম কাদেরকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। এরশাদের আদেশ-নির্দেশমতো কাজ করায় জিএম কাদের এখন রওশনপন্থি নেতাদের অপছন্দ।
এদিকে এরশাদ ও তার অনুগত নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়ায় তৃণমূলের কর্মীরাও হতাশ। দিকভ্রান্ত অবস্থানে আছেন তারা। এ অবস্থার মধ্যেই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন এরশাদ। একই সঙ্গে বলা হয় নির্বাচনে একক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। কিন্তু এই একক প্রার্থী কারা ঠিক করবে এ সম্পর্কে এ পর্যন্ত স্পষ্ট কোন নির্দেশনা পাননি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা। রওশন এরশাদ দলীয় এমপিরা চাইছেন তাদের অনুগত নেতাদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করতে। অন্যদিকে এরশাদের অনুগত নেতারা চাইছেন পার্টির চেয়ারম্যানের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে। এমন টানাপড়েনের মধ্যে জাতীয় পার্টির সমর্থিত প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দলের নেতাকর্মীদের মতে, দলের এমন অগোছালো অবস্থায় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে তেমন সুবিধা করতে পারবেন দল সমর্থিত প্রার্থীরা। একই সঙ্গে সুবিধাজনক উপজেলায় একাধিক প্রার্থী থাকায় তাদের জয়ের সম্ভাবনাও কমে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন