সাগরে জেলেরা নিরাপত্তাহীনতায় : জলদস্যু আস্তানা গুটিয়ে দেওয়ার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া মোহনা ও কুতুবদিয়ার  মোহনায় জলদস্যুরা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পুলিশের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় জলদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। উপকূলেরে জলদস্যু সম্রাট আবদুল গফুর নাগু, মোকারম জাম্বু, কুতুবদিয়ার রমিজ, কালারমারছড়ার মজিদ ও মাতারবাড়ির ওয়াসিম পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও প্রায় অর্ধশতাধীক জলদস্যু রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের আস্তানাগুলো অক্ষত থাকায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন জেলেরা। যার ফলে ফিশিং ট্রলার নিয়ে জেলেরা সাগরে না গিয়ে সোনাদিয়ার মোহনা থেকে উপকূলে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
যারা এখনো  সাগরে রয়েছে তাদের পরিবারে আতংক বিরাজ করছে।
বঙ্গোপসাগরে সোনাদিয়ার মোহনা, ও কুতুবদিয়ার পশ্চিমে জলদস্যুরা ব্যাপক তান্ডব শুরু করায় জেলে পল্লী গুলোতে আতংক বিরাজ করছে। জলদস্যুরা স্পীডবোট ব্যবহার  করায় ফিশিং ট্রলার মালিক শ্রমিকদের মধ্যে আতংক আরো বেড়েছে।
ফিশিং ট্রলার মালিক ও মাছ ব্যবসায়ি সেলিম উদ্দিন জানান, বঙ্গোপাসাগরে জলদস্যুরা যেভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এতে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাদের নির্মুল করতে জলদস্যুদের আস্তানাগুলো গুটিয়ে দেওয়া জরুরি। অতিরিক্ত বেতন দিয়েও মাঝি-মাল্লা জোগাড় করা দুরহ হয়ে পড়েছে। ট্রলারের মাঝিরা জানিয়েছেন, সোনাদিয়ার নাগু মেম্বার, মোকারম জাম্বু,কুতুবদিয়ার রমিজ, কালারমারছড়ার মজিদ, মাতারবাড়ির ওয়াসিম গ্রেপ্তার হলেও পুনরায় ছাড়া পাওয়ায় সাগরে জলদস্যুতা আরো বেড়েছে। সোনাদিয়া এলাকায়  ল্যং ফরিদ, ও জামাল বাহিনীর লোকজন সক্রিয় রয়েছে। একই সাথে পেকুয়ার রহিমা বাহিনী, মাতারবাড়ী শিমুল বাহিনী, ধলঘাটার জসু, আবু ছৈয়দ, বেলাল ও বাঁশি বাহিনী সাগরে সক্রিয় থাকায় জেলেরা সাগরে যেতে ভয় পাচ্ছে। শুধু মাছ নিয়ে আসার সময় নয়, মাছ ধরতে যাওয়ার সময়ও তেল, ডালসহ মুল্যবান জিনিসপত্র জলদস্যুরা লুকরে নিয়ে যায়। যার কারণে গতকাল থেকে বিপুল পরিমাণ ট্রলার সাগরে যাচ্ছে না। আর যারা সাগরে রয়েছে সে সব মাঝি মল্লাদের পরিবারে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
মহেশখালী কুতুবজোমের আবদু শুক্কুর মাঝি জানান, বঙ্গোপাসাগরে জলদস্যুদের সম্প্রতি তান্ডবের কারণে বিভিন্ন জেলে পল্লীতে আতংক বিরাজ করছে। মহেশখালী জলদস্যুদের  সাথে কুতুবদিয়া, আনোয়ারা ও বাশঁখালীর জলদস্যুরাও যুক্ত হয়েছে। জেলেদের বড় মাছগুলো ছিনিয়ে নিচ্ছে, চাহিদামত মাছ না পেলে মাঝি মাল্লাদের অপহরণ করে ঘটিভাঙ্গা ও কালারমারছড়ায় তাদের আস্তানায় নিয়ে যাচ্ছে। কোন মাঝি মাল্লারা জলদস্যুদের চিনে ফেললে জেলেদের হত্যা করে চলেছে। এই চিহ্নিত জলদস্যুদের জন্য প্রশাসনের কাছে এক ধরনের তদবির করায় প্রশাসনও বিব্রত হচ্ছেন।
কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইলের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত এক মাসে কুতুবদিয়ার মোহনায় প্রায় অর্ধশত ফিশিং ট্রলার জলদস্যু কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের বাশঁখালী, আনোয়ারা, সন্দীপ ও হাতিয়ার জলদস্যুরা কুতুবদিয়ায় অবস্থান করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাদের সাথে মহেশখালীর বদাইয়া, লেং ফরিদ, নাগু মেম্বার, জসু বাহিনীর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে। তাদের যে আস্তানা রয়েছে তা নির্মূল না হলে জলদস্যু দমন দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।
জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ স¤পাদক আবদুল হালিম মাঝি জানান, সাগরে নিরাপত্তা জোরদার না হলে শ্রমিকরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। সম্প্রতি নিহত জেলেদের কেউ কক্সবাজারের না হলে সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে। অনেক জেলের পরিবার ইতোমধ্যে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া তাদের পরিবারের লোকজনকে ফিরিয়ে আনতে আকুতি জানাচ্ছেন।
উপকূলীয় ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল খায়ের লিটু জানান, সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়ার মোহনা পাহারা দেওয়া কোস্টগার্ডের দায়িত্ব। পুলিশের ওই স্থানে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। জলদস্যুরা এতদিন ট্রলার নিয়ে ডাকাতি করলেও এখন ¯পীডবোট ব্যবহার করায় আমরা আতংকিত। জলদস্যুদের ব্যবহৃত ¯পীডবোট মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে সব নিয়ন্ত্রণে চলে আসত। জলদস্যুদের কারণে কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়ার মোহনা দিয়ে এখন ট্রলার চলাচল করা দূরহ হয়ে পড়েছে। শুধু ফিশিং ট্রলার নয় মালবাহি বিভিন্ন ট্রলার থেকে তারা নিয়মিত চাঁদা তুলে চলেছে। কুতুবদিয়ার মোহনা এখন স¤পূর্ণ জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের সাথে যুক্ত হচ্ছে বাঁশখালী, আনোয়ারা ও সন্দ্বীপের জলদস্যুরা। তারা সবাই সোনাদিয়া, ঘটিভাঙ্গার। সম্প্রতি পুলিশ ওই আস্তানায় দফায় দফায় অভিযান চালালেও তা গুটিয়ে দেওয়া এখনো সম্ভব হয়নি। কালারমারছাড়া পুলিশ ফাঁড়ির হাতে দস্যু স¤্রাট মোকারম জাম্বু, মজিদ, মোহাম্মদ উল্লাহ, হেলাল সহ ৬/৭ জন জলদস্যু গ্রেপ্তার হলেও লোকবল ও আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম না থাকায় তারা সাগরে অভিযান চালাতে পারছেন না।
ধলঘাট সুতরিয়ার ব্যবসায়ি সরওয়ার আলম জানান, কালারমারছড়ার জলদস্যুদের কারণে ধলঘাটার প্রায় ১৪ হাজার লোক অসহায়। তাদের অত্যচারে কোন ফিশিং ট্রলার না আসায় সরাইতলা মৎস্যপল্লী দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে।
মহেশখালী থেকে কক্সবাজার মানুষ পারাপারে জন্য যে ¯পীডবোটগুলো রয়েছে তা সন্ধ্যার পরে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের ভাড়া দেওয়া হয়। তারা সাগর থেকে উপকূলের দিকে আসা ফিশিং ট্রলারের মূল্যবান মাছগুলো জেলেদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে। ৫/৬ দিন সমুদ্রে থেকে যে মাছগুলো জেলারা পায় তা নিয়ে  সোনাদিয়া ও কোহেলিয়া নদীর  মোহনা পার হয়ে  জলদস্যুদের কারণে কক্সবাজার আসতে পারছেনা জেলেরা। জলদস্যুরা ¯পীডবোট ব্যবহার করায় আর পালানোর পথও থাকছেনা। তবে জানতে পেরেছি মহেশখালী এক প্রভাবশালীর লোকের ¯পীডবোট গুলোই জলদস্যুরা ব্যবহার করছে বেশি।
নুনিয়া ছড়ার মোক্তার মাঝি জানান, সন্ধ্যার আগেই সোনাদিয়ার মোহনায় ২/৩ টি করে ¯পীডবোট অবস্থান নেয়। তাদের ভয়ে গত দুই ট্রিপ মাছ বিক্রি করেছি চট্টগ্রামে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে মাছ বিক্রি করলে না পোষালেও অনেকটা বাধ্য হয়েই চট্টগ্রাম যেতে হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে কক্সবাজারে কোন ট্রলার মাছ নিয়ে আসবে না।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলমগীর জানান, সাগরে অভিযান চালানোর মত লোকবল ও আনুষাঙ্গিক কিছু পুলিশের নেই। তারপরও খবর পেলে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন জলদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত জলদস্যুদের ব্যপারে পুলিশ তীক্ষè নজর রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন