মহেশখালী প্রতিনিধি: কক্সবাজারের উপকুলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর আশ্রয়কেন্দ্র গুলি যেন একেকটি মরণ ফাদেঁ পরিনত হয়েছে। সংস্কারের অভাবে বেশীর ভাগ আশ্রয় কেন্দ্র গুলি ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে ফলে যে কোন সময় র্দূঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে বলে এলাকাবাসীরা জানান। প্রতিদিন সতর্ক সংকেত। ব্যাপসা গরম। সামনে আসছে দূর্যোগ মোকাবেলার সময়। প্রতি বছর এ সময়ে দেশে বিভিন্ন ধরনের জলোচ্ছ্বাস ও দূর্যোগ হয়ে থাকে। মহেশখালীতে বিশেষ করে ধলঘাট, মাতারবাড়ী, হোয়ানক ও কুতুবজোম সোনাদিয়া এলাকার দেড় লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে নতুন করে আতংক বিরাজ করে। কারণ মানুষের তুলনায় আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা অতি নগন্য। যা আছে তার মধ্যে অনেক গুলো আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহারের অনুপযোগি। যার ফলে বড় ধরনের ঘূর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে আশ্রয় কেন্দ্রের অভাবে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানির আশংকা করছে এলাকার সচেতন মহল।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকারী ঘুর্নিঝড়ের আঘাতের সময় আশ্রয় কেন্দ্রের অভাবে মহেশখালী উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলা করার জন্য বিদেশী সংস্থা সিসিডিবি, বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি,বিশ্ব ব্যাংক, রেড় ক্রিসেন্ট আইডিএ জাইকা, সৌদিয়া, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,গনস্বাস্থ্য, জার্মান এফডবি-উও, ইউনিসেফের অর্থায়নে এ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ৮৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এসব আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে কোন রক্ষণাবেক্ষনা এবং সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে ৪১ টি আশ্রয় কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে।
এলাকায় বর্তমানে চার লক্ষ মানুষের বসবাস হলে ও জনসংখ্যা অনুপাতে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা অতি নগণ্য। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আশ্রয়কেন্দ্র গুলোর কোন সংস্কার না হওয়ায় সামনে কোন বড় ধরনের দূর্যোগ আসলেই তা ভেঙ্গে গিয়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা করছেন এলাকাবাসী সহ সচেতন মহল।
এদিকে জরুরী আশ্রয়নের জন্য গড়ে ওঠা আশ্রয়কেন্দ্র গুলো ভিবিন্ন ভুইফোড় সংগঠনের কার্যালয়ের নামে দখল, স্থানীয় প্রভাশালী লোকজনের থাকার ও বসার অফিস, জেলে বহদ্দারদের জালরাখা ও জলতুনার ডেরা, ট্রলারের সরঞ্জাম রাখার ঘর, বখাটে জুয়াড়িদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। যা জরুরী প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবেনা বলে মনে করেন অনেকে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়,কুতুবজোমের তাজিয়া কাট ও ঘটিভাংগা,ছোট মহেশখালীর তেলী পাড়া, ধলঘাটা ইউনিয়নের বনজামিরা ঘোনা, সরইতলা, নাছির মোহাম্মদ ডেইল ও দক্ষিন সুতরিয়া এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র গুলো কিছুটা সংস্কার হলেও বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। ধলঘাটার স্থানীয় বাসিন্দা মহিলা মেম্বার জানান, ১৯৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ের পর বড় ধরনের দূর্যোগ থেকে এলাকার জনগণকে রক্ষা করার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এসব আশ্রয়কেন্দ্র গুলোর কোন রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কার না করায় বর্তমানে কেন্দ্র গুলোর জনগনের আশ্রয়কেন্দ্র না হয়ে মরণ কেন্দ্র পরিণত হয়েছে।
ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহছান উল্লাহ বাচ্চু জানান, জনসংখ্যার তুলানায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা অত্যন্ত কম। যেসব আশ্রয়কেন্দ্র এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে তা দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন ঝুঁকিপূর্ণ আশ্রয়কেন্দ্র গুলো সংস্কারের পাশাপাশি এ এলাকায় আরো ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা অতিব দরকার। একই কথা বললেন মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক রুহুল। তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র গুলো সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর করুন অবস্থা।
তিনি বলেন, মাতারবাড়িতে ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপনের অতিব প্রয়োজন। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী বাংলাদেশ রেড়ক্রিসেন্ট সোসাইটির জুনিয়ার সহকারী পরিচালক মামুনার রশিদ বলেন, এ উপজেলায় জনসংখ্যার তুলনায় আরো ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের খুবই প্রয়োজন। আর বর্তমানে এ এলাকায় যতগুলো আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে অনেককাংশ ব্যবহারের অনুপযোগি একদিকে আশ্রয়কেন্দ্র সংকট, অন্যদিকে যে সব আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে অনেক গুলো আশ্রয় কেন্দ্র সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়ায় এ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানায়, মহেশখালীতে বিভিন্ন এলাকায় ৮৪’টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগি হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া এ এলাকায় আরো ৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ইতোমধ্যে ইউএনও একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তার মধ্যে মাতারাবাড়ি ১৬টি, ধলঘাটা ৮টি, কালারমারছড়া ৭টি, শাপলাপুর ৬টি, হোয়ানক ৮টি, বড় মহেশখালী ৭টি, কুতুবজোম ১৩টি, ছোট মহেশখালী ১টি এবং পৌরসভায় ৩টি আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ারুল নাসের বলেন, এলাকায় ৮৪টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে ঝুঁিকপূর্ণ আশ্রয় কেন্দ্রগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবং আরো কিছু আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে যে আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য। এ উপকূলীয় এলাকায় পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট অবহিত করা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন