থামছে না মালয়েশিয়া মানব পাচার

শুক্রবার বিজিবি’র হাতে আটক ৩ দালাল সহ ৯ জন।
নিজস্ব প্রতিনিধি
কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকূল থেকে সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়া থামানো যাচ্ছে না। সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী দালাল চক্র নানা কৌশলে পুরোদমে এ পাচার অব্যাহত রেখেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা দফায় দফায় অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় দালালসহ যাত্রীদের আটক করলেও পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালেও বিজিবি সদস্যরা চার দালালসহ ২৩ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে শুক্রবার রাতে তিন দালাল ও ছয় মালয়েশিয়াগামীকে আটক করা হয়। হোয়াইক্যং চেকপোস্টে বিজিবি সদস্যরা একটি মাইক্রোবাসে করে টেকনাফ যাওয়ার পথে এদের আটক করে। এর মধ্যে তিন দালালরা হলেন হবিগঞ্জ জেলার ফরিদপুর এলাকার আব্দুল মোতালেবের ছেলে মো. আলী আকবর (৩৮), টেকনাফের ঝিমংখালী এলাকার ছৈয়দ আলমের ছেলে ইসহাক (২৫) ও একই এলাকার রশিদ আহমদের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২০)। এসময় আটক ছয় যাত্রী হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। বিজিবি’র টেকনাফ-৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদ হাসান জানান, এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করে আটক ব্যক্তিদের টেকনাফ থানায় সোর্পদ করা হয়েছে।
সকালে তিনি জানান, শনিবার সকাল ৯টায় একই চেকপোস্টে একটি মাইক্রোবাসে করে যাওয়ার সময় দালালসহ আরো ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারেও মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে এদের নাম জানা যায়নি। অনুসন্ধানে জানা যায়, অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষে গত ১৬ জুন টেকনাফে এমনই একটি ট্রলার ডুবির ঘটনায় মাঝি ও ছয় যাত্রী মারা যান। পরে এদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া গত ১৫ দিনে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মালয়েশিয়ায় যাত্রাকালে বিজিবি ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৭ এর সদস্যরা প্রায় তিন শতাধিক যাত্রীকে আটক করেছে। এসব আটকের ঘটনায় দালালদের আসামি করে মামলাও হয়েছে। কিন্তু এসব মামলা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়।
আদালত, পুলিশ ও বিজিবি’র একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুলিশ এ মামলার তদন্ত নিয়ে ব্যাপক বাণিজ্য করে আসছে। এমন কি গত এক মাসে দু’টি মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে অভিযুক্তদের বাদ দিয়েই। 
স্থানীয়দের অভিযোগ, মালয়েশিয়ায় মানব পাচার রোধে বিজিবি ও র‌্যাব তৎপর থাকলেও টেকনাফ থানার পুলিশ রয়েছে তার উল্টো অবস্থানে। বরং অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ পাহারায়ই ট্রলারে যাত্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ পাচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। একই সঙ্গে মামলা নিয়েও চলছে ব্যাপক বাণিজ্য। 
এ ব্যাপারে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফরহাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে যা পায় এর ভিত্তিতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এ ধরনের মামলায় আসামি শনাক্তও করা যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে মানব পাচারের মূল পয়েন্ট কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে সরেজমিন ঘুরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হলে এর সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক তৎপরতা শুরু করলেও পাচারকারী গডফাদাররা থামছে না। বরং পুলিশের একটি শ্রেণীকে ম্যানেজ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্র ছায়ায় পাচার অব্যাহত রেখেছে। অনুসন্ধানে উঠে আসে মানব পাচারের মূল হোতার নাম।