উখিয়া-টেকনাফ এখন মিয়ানমারের অঙ্গ শহরে পরিণত হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট: ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে উখিয়া-টেকনাফের ৩৫টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পাচার হয়ে আসছে দৈনিক কোটি কোটি টাকার বার্মিজ ও থাইল্যান্ডের অবৈধ নিষিদ্ধ চোরাইন পন্য। অতীতের তুলনায় এসব অবৈধ পন্য পাচার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় দেশীয় উৎপাদিত পন্য উখিয়া-টেকনাফের হাট-বাজারে প্রায় বিলুপ্তির পথে। উখিয়ার কয়েকটি দোকান ও হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকানে সাজানো বার্মিজ ও থাইল্যান্ডের পণ্যের সমাহার।
সীমান্ত রক্ষী (বিজিবি) ও উখিয়া স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তির সহযোগিতায় উখিয়ায় কয়েকটি চোরাচালানী সিন্ডিকেট অতি উৎসাহিত হয়ে, বানের স্রোতের মত প্রতিযোগিতামূলক এসব বার্মিজ ও থাইল্যান্ডের পণ্য চোরাই পথে এনে উখিয়ার দক্ষিণ ষ্টেশন, বালুখালী, থাইংখালী চোরাচালানী সিন্ডিকেটের গুদামে মজুদ রাখার পর, স্থানীয় হাট-বাজার ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অত্যান্ত হাইফাই নোহা মাইক্রো ও উন্নত মানের কার যোগে পাচার করে আসছে। অপরদিকে এসব মালামালের সাথে আসা বর্মী নাগরিকেরা অবাদে উখিয়া-টেকনাফ ও কক্সবাজার শহরে ঘুরাফেরা করার পর, চোরাকারবারী সিন্ডিকেট সদসদের জামাই আদরে থাকার পর, উক্ত বর্মী নাগরিকদের টার্গেট অনুযায়ী এদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসহ মূল্যবান জীবন রক্ষাকারী ঔষুধ সামগ্রী, সদ্য বিলুপ্ত নাসাকা বাহিনীর ক্যাম্পে ব্যবহারের জন্য মিনি জেনেরটর, জ্বালানী তেল, পেট্রোল, ডিজেল, পাম্প অয়েল, সার, প্যারাক সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য বার্মার পাচার করে দিচ্ছে, উখিয়া-টেকনাফের এসব চোরাকারবারীরা। স্থানীয় সূত্র মতে, বর্তমান সারা দেশে জঙ্গী গ্রেফতার তৎপরতা কমে গেলেও কতিপয় জঙ্গী সদস্যরা উখিয়া-টেকনাফের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আশ্রয় নেওয়ার পাশাপাশি এরা ব্যবসায়ী সেজে উখিয়া-টেকনাফ, নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্তের গহীন অরণ্য আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে সারাদেশ ব্যাপী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিভিন্ন প্রশাসন গোয়েন্দা সংস্থা কঠোর নজরদারী রাখলেও উখিয়া-টেকনাফের চোরাচালান এবং অচেনা লোকজনের আনাগোনা এবং বর্মী ও নাগরিকদের অনুপ্রবেশ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে  বলে সচেতন ও অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির এসব সীমান্ত পয়েন্ট এবং উখিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় প্রশাসনের এসব নজরদারী হস্তক্ষেপ না থাকায় যে কোন মূহুর্তে নাশকতা মূলক কর্মকান্ড ঘটার আশংকা প্রকাশ করেছেন সীমান্ত এলাকার লোকজন। অপরদিকে যে হারে বর্মী ও থাইল্যান্ডের পণ্য অবাধে প্রবেশ করছে তার বাস্তব চিত্র দেখে নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে উখিয়া উপজেলা বার্মার অঙ্গ শহরে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে যেসব এই চোরাই পয়েন্ট দিয়ে প্রতিযোগিতা মূলক বর্মী পণ্য এবং নাগরিকেরা প্রবেশ করছে তাদের মধ্যে উখিয়ার রেজু আমতলী, করইবনিয়া, ডেইলপাড়া, হাতিমোড়া, ডিগলিয়া, দারগাহ্ বাজার, তুলাতলী, বালখালীর পান বাজার, ঘুমধুম, থাইংখালী, রহমতের বিল সহ টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে। এসব চোরাকারবারীদের নেতৃত্বে যে সমস্ত পণ্য অবাধে পাচার হয়ে আসছে, এসব পণ্যের মধ্যে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে গরু-ছাগল, ছাড়াও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, লুঙ্গি, পলিথিন, থান কাপড়, আগরবাতি, সাবান, ইয়াবা ট্যাবলেট, টর্চ লাইট, মাদকদ্রব্য। মরিচ্যা যৌথ চেকপোষ্ট বিজিবির সুবেদার নুরুল ইসলাম বলেন, বিজিবির তৎপরতায় চোরাচালান অনেকটা কমে গেছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে চোরাইপণ্য সহ চোরাচালানীদের আটক করতে বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে। কক্সবাজার ১৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল খালিদ হাসান জানান, সীমান্তে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে দেশে চোরাচালান প্রবেশ করতে পারে। তবে বিজিবি সাধ্যমত তা প্রতিরোধ করতে সচেষ্ট রয়েছে। উখিয়া-টেকনাফের সচেতন মহল দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এসব পণ্য পাচার রোধ, ব্যবসায়ী ছদ্মবেশ বর্মী নাগরিক অনুপ্রবেশ রোধ এবং চোরাচালানীদের গ্রেফতার পূর্বক যে কোন ধরনের নাশকতা মূলক কর্মকান্ড থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষাসহ এলাকার আইন-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল পরিবেশ রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন