স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতির নাম ভাঙিয়ে কক্সবাজারে এক ভয়ংকর অপরাধীর আবির্ভাব

বেরিয়ে আসছে অসংখ্য কুকীর্তি

এম. আমান উল্লাহ: কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি দাবি করে সম্প্রতি দু’য়েকটি গণমাধ্যমে আজিজুর রহমান নামের এক বিতর্কিত ব্যক্তির নাম প্রকাশ হওয়াকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে গণ অসন্তোষ। 
নেতাকর্মীরা জানান, কেন্দ্র থেকে অনুমোদনের কথা বলে আজিজুর রহমান নামক যে ব্যক্তিটি সাম্প্রতিক সময়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন সভাপতি দাবি করছেন, এলাকার রাজনৈতিক অঙ্গনে তার কোন ভিত্তি নেই সেটা বড় কথা নয়, মূলত তিনি হচ্ছেন একজন সুবিধাবাদী, ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী গডফাদার ও দুষ্ট প্রকৃতির লোক। তার বিরুদ্ধে মামলাবাজিসহ সাধারণ লোকজনের জমি জবরদখল এমনকি নিজ সংগঠনের টাকা-পয়সা চুরির
অভিযোগ ছাড়াও সর্বমোট কয়টি অভিযোগ থানা, আদালত ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে রয়েছে তার সঠিক কোন হিসাব বের করা না গেলেও অনুসন্ধানে যা পাওয়া গেছে তা পিলে চমকানো।
সূত্র জানায়, ক্ষমতা ও নিজের আখের গোছাতে সীমাহীন ধূর্ত উক্ত আজিজুর রহমান প্রকাশ লেদু একসময় কক্সবাজার সরকারি কলেজের ছাত্র রাজনীতি করা অবস্থায় শিবিরের প্যানেল থেকে কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সদস্য পদে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। ছাত্র অবস্থায়ও তার স্বভাব-চরিত্র তেমন ভাল ছিল না দাবি করেছেন আজিজুর রহমানের তৎকালীন বেশকিছু সহপাঠী তার অগণিত কুকর্মের ফিরিস্তির বর্ণনা দিয়েছেন। তারা বলেন, আজিজের স্বভাব-চরিত্র কোন সময় পছন্দের ছিল না। শিবির ক্যাডার হয়ে তিনি জাতীয়তাবাদী ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অনেক নেতাকর্মীকে নির্যাতন করেছেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিবির ক্যাডার হিসেবে ভয়ানকভাবে তার আবির্ভাব হয়। তিনি ছাত্র শিক্ষকসহ অনেককে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাঞ্ছিত করেছেন। শিবির ক্যাডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন কলকারখানা থেকে তিনি ও তার বাহিনী চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। গঠন করেন লেদু গ্রুপ। একসময় এ গ্রুপই নিয়ন্ত্রণ করত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাণিজ্য। জনশ্রুতি আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেন্সিডিল ও গাঁজার প্রচলন শুরু করে তারা। তৎকালীন সময় তাদের হাতে একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে নির্যাতন ছাড়াও ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 
জানা গেছে, হরেক কুকর্মে জড়িয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে পুরো বিশ্ববিদালয় এলাকায় এক মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত উক্ত আজিজুর রহমান ছাত্রজীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনে লঙ্কাকাণ্ড সৃষ্টি করেন। ওই সময় তার বাহিনীর সদস্যরা সংশ্লিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকে হলের জিএস ঘোষণা করতে বাধ্য করান।
ফলে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় তিনি স্যার এফ.আর. রহমান হলের জি.এস. হয়ে বাড়িয়ে দেন তার বহুমুখী অপকর্ম। ওই সময় তার অনুগত ক্যাডার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাননি উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রী ও ছাত্র সমাজসহ নিরপরাধ অভিভাবকরাও। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন সময় আজিজুর রহমান লেদু বাহিনী এতই ভয়ংকর ছিল যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা এবং সেখানে ভর্তিসহ নানাকিছু নিয়ন্ত্রণে দিব্যি অপকর্মে ব্যস্ত ছিল। সময়ের ব্যবধানে সেই আজিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লেও কক্সবাজারে এসে ব্যক্তি, পারিবারিক ও কর্মজীবনে ছড়িয়ে পড়ে তার একই কুকীর্তি। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেন আরো হিংস্র। কর্মজীবনে কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের মত একটি প্রতিষ্ঠানে প্রভাষকের চাকরি পেলেও জানা গেছে, নিজ কর্মদোষে সেখানে তিনি খুব বেশিদিন টিকতে পারেননি। তবে আজিজুর রহমান কলেজে চাকরি ছাড়ার পেছনে সবসময় নিজেকে আরো সক্রিয়ভাবে বিএনপির রাজনীতি ও সদর-রামু আসনে নির্বাচনের ইচ্ছার কথা জানালেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। কেউ বলছেন, মহিলা কলেজে চাকরির সুবাধে তিনি রাতের অন্ধকারে অনৈতিক কাজে হোস্টেলে ঢুকে ছাত্রীদের গণপিঠুনির শিকার হন। আবার কেউ বলছেন, সার্টিফিকেট কেলেংকারির কারণেই মূলত তার এই সরকারি চাকুরিটি ছাড়তে হয়েছে। আবার অনেকেই বলছেন, ফেনি জেলার সাবেক এক সময়ের ডিসি কর্মকালীন তিনি সংস্থাপন সচিব হয়েছিলেন, সেই সরকারি কর্মকর্তা উচ্চ পদস্থ শ্বশুরের নাম দিয়ে বিভিন্ন তদবির বাণিজ্যের পাশাপাশি মুক্ত জীবনে এসে সুবিধামত রাজনৈতিক মুকুট পড়ে অথবা অন্যকোন কর্মে লিপ্ত হওয়ার জন্যই তিনি চাকুরি ছেড়েছেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নিজেকে কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক বানানোর জন্য উক্ত আজিজুর রহমান বৈধ অবৈধ এমন কোন ব্যবসা নেই, যা তিনি করতে পারেন না। সূত্র মতে, আজিজুর রহমান গত জরুরি অবস্থায় সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত তার শ্বশুরের ক্ষমতার দাপট ও বদলিসহ হরেক কারিশমায় বান্ডেল বান্ডেল টাকা উপার্জনের পাশাপাশি বৃহত্তর চট্টগ্রামে তার তালিকাভুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক  ব্যক্তিবর্গ ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি করেছেন। গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, ওই সময় তিনি সচিব শ্বশুরের দাপট দেখিয়ে তৎকালীন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্সের কাজ করতেন। ফলে তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হ্যাভিওয়েট নেতা ও ব্যবসায়ীদের কারাভাগ্য ও চাঁদাসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। 
জানা গেছে, ভদ্রলোকের মুখোশ পড়ে ভয়ংকর অপকর্মে লিপ্ত এই আজিজের কারণে ওয়ান ইলেভেনের সময় কক্সবাজারের অনেক সিনিয়র নেতা গ্রেপ্তার ও পলাতক ছিলেন। বিলম্বে হলেও তার তৎকালীন এক ঘনিষ্ট সহচরের কাছ থেকে প্রাপ্ত এই তথ্য ছাড়াও আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের শহরের চন্দ্রিমা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কোটি  টাকা আত্মসাৎ, একজনের প্লট আরেকজনকে দেওয়া, মামলাবাজি ও সাধারণ লোকজনের জায়গা-জমি কেড়ে নেওয়াসহ অসংখ্য অপকর্মের দলিলাদি এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে, যা তদন্ত সাপেক্ষে প্রকাশিত হবে শীঘ্রই। 
এদিকে, উল্লেখিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে আজিজুর রহমান বলেন, এসব সংবাদের কোন ভিত্তি নেই। সবই আমার বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন