কক্সবাজার স্বেচ্ছাসেবক দলের আজিজ গ্রুপে ইয়াবা ব্যবসায়ী : ৫০ লাখ টাকার বাণিজ্য!

ইয়াবা আজিজ
নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ক্ষমতার পট পরিবর্তনের আগেই দল বদলা রাজনৈতিক কর্মী ও ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কক্সবাজার জেলা বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে ঢুকে পড়ার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে সীমান্তের বাঘা বাঘা ১০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদল কক্সবাজার জেলা কমিটির আজিজ গ্রুপে ঢুকে পড়ার অভিযোগপাওয়া গেছে। 

জানা গেছে, আজিজ গ্রুপে ঢুকে পড়তে এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫০ লাখেরও বেশি টাকার লেনদেন করেছে। ফলে সদ্য ঘোষিত স্বেচ্চাসেবক দল জেলা কমিটির আজিজ গ্রুপে তাদের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি দেয়া হয়েছে। নগদ টাকার বিনিময়ে উক্ত কমিটিতে ১৮ দলীয় জোট বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের বেশ কয়েকজন সদস্যের পাশাপাশি এলাকার দাগি, অস্ত্রবাজ, রোহিঙ্গা এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদেরও পদ মিলেছে। 
ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, সদ্য ঘোষিত আজিজ গ্রুপে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে যেসব ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পদ-পদবি দেয়া হয়েছে তৎমধ্যে, উখিয়া-টেকনাফের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির এক নিকটাত্মীয়, সীমান্তের ইয়াবা গডফাদার আবদুল আমিনকে দেয়া হয়েছে অর্থ-সম্পাদকের পদ। 
অভিযোগ উঠেছে, কথিত উক্ত সংগঠনের সভাপতি দাবিদার আজিজ আবদুল আমিনের কাছ থেকে নগদ ১৫ লাখ টাকার অবৈধ সুযোগ নিয়ে সীমান্তের আলোচিত-সমালোচিত এই ইয়াবা গডফাদার ছাড়াও আরো বেশকয়েকজন খুচরা ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম ঢুকিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে আরো ২০ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, সরকারের পট পরিবর্তনের পরও সরকারি দলের নেতাকর্মী হতে ইচ্ছুক ভিন্ন মতাদর্শের আরো বেশ কয়েকজনকে স্বেচ্ছাসেবক দলের তালিকাভুক্ত করার অজুহাতে উক্ত আজিজ বিভিন্নভাবে আরো ১৫ লাখসহ শুধু মাত্র এই কমিটিকে কেন্দ্র করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে জানাজানি হলে এনিয়ে চরম ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নিবেদিত কিছু নেতাকর্মী আজিজ গ্রুপের ঘোষণা দেয়া এই ইয়াবা ও পকেট কমিটিকে অবাঞ্চিত আখ্যায়িত করে নিজেদের মধ্যে আরেকটি নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠায়। এতে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কক্সবাজার জেলার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ দেলোয়ার আলমকে সভাপতি, জেলার সহ-সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রনেতা সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানকে সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সাধারণ সম্পাদক তরুণ আইনজীবি, সাবেক ছাত্রদল নেতা এডভোকেট জাবেদুল আনোয়ার রুবেলকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের বেশকিছু সিনিয়র রাজনীতিবিদ জানান, বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে কক্সবাজারের এই আজিজুর রহমান নামক ব্যক্তিটিই যথেষ্ট। কারণ তিনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি ছেড়ে যখনই বিএনপির রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন, তখন থেকেই কক্সবাজার জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও বিভিন্ন সহযোগি সংগঠনের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে। কাজেই তার অতীত হরেক কুকর্ম ও সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে জিয়া রণাঙ্গনের সাধারণ সৈনিকেরা আজ দিশেহারা। রাজনৈতিক অঙ্গনে আজিজুর রহমানের কোন ভিত্তি নেই সেটা বড় কথা নয়, মূলত তিনি হচ্ছেন একজন সুবিধাবাদী, ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী গডফাদার ও দুষ্ট প্রকৃতির লোক। তার বিরুদ্ধে মামলাবাজিসহ সাধারণ লোকজনের জমি জবরদখলসহ নানা অভিযোগের গত জরুরি অবস্থায় সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত তার শ্বশুরের ক্ষমতার দাপট ও বদলিসহ হরেক কারিশমায় বান্ডেল বান্ডেল টাকা উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে। গুরুতর বিষয় হচ্ছে, ওই সময় তিনি সচিব শ্বশুরের দাপট দেখিয়ে তৎকালীন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্সের কাজ করতেন। ফলে তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হ্যাভিওয়েট নেতা ও ব্যবসায়ীদের কারাভাগ্য ও চাঁদাসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। 
জানা গেছে, ভদ্রলোকের মুখোশ পড়ে ভয়ংকর অপকর্মে লিপ্ত এই আজিজ সাম্প্রতিক সময়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে প্রায় অর্ধকোটি টাকা অনৈতিক রোজগারের পেছনে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রকাশ্যে যে যুক্তি উপস্থাপন করেছে তা হচ্ছে সরকার পরিবর্তন হলেও তিনি পুনর্বাসিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক সকল প্রকার আশ্রয়-প্রশ্রয় দিবেন। এই অবস্থায় জেলা জাতীয়তাবাদী পরিবারের সকল সচেতন জনগণ বিষয়টি জরুরিভিত্তিতে তদন্ত পূর্বক কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সংগঠনের কেন্দ্রিয় নেতাদের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে, আনিত সকল অভিযোগের কথা অস্বীকার করে অভিযুক্ত আজিজুর রহমান বলেন, কতিপয় ষড়যন্ত্রকারীরা আমার পেছনে লেগে আছে। একসময় আমি শিবিরের দায়িত্বশীল ছিলাম ঠিক, কিন্তু এখনতো বিএনপি করি। কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেয়ার কথাও ভিত্তিহীন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন