যৌন ছবি বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ায় চকরিয়ার পর্নো তারকা ডাক্তার শিল্পীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিজের যৌন ছবি বাজারে ছড়িয়ে রাষ্ট্রদ্রোহীতায় জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে চকরিয়া উপজেলার সেই বহুল আলোচিত-সমালোচিত পর্নো তারকা ইসরাত জাহান শিল্পীর বিরুদ্ধে এবার মামলা হয়েছে কক্সবাজার আদালতে।
রবিবার সকালে কক্সবাজার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সদর-৪ নম্বর আদালতে জাতীয় স্বার্থে মামলাটি দায়ের করেন স্থানীয় এম. আমান উল্লাহ নামের এক সাংবাদিক। ফলে বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফুল ইসলাম পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৪র্থ ধারার অপরাধ, যা একই আইনের ৮(১) ধারার
শাস্তিযোগ্য মামলা হিসেবে আমলে নিয়ে ওসি, কক্সবাজার সদর থানাকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। যার নাম্বার (সি.আর ১০৬৪/১৩)।
মামলায় বাদি পক্ষে ওকালতি করেন, কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী এড. মোহাম্মদ আব্দুল মন্নানের নেতৃত্বে এড. হুমায়ুন কবির, এড. মুহিবুল্লাহ, এড. আবুল কাশেম, এড. জাবেদুল আনোয়ার রুবেলসহ কয়েক ডজন আইনজীবী। এ সময় কক্সবাজার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের জরাজীর্ণ কক্ষে এক ভিন্ন রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আইনজীবীরা সম্মনিত কণ্ঠে আদালতের কাছে এই ঘটনায় জড়িত আসামীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান। 
বাদির আবেদনে উল্লেখ করা হয়, তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিক। গত বেশকিছুদিন যাবত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কক্সবাজারের মেয়েরা পর্নোগ্রাফিতে জড়িয়ে পড়ছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকলে, তিনি একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর দৈনিক মানবজমিনের ৪র্থ পৃষ্ঠায় ‘কক্সবাজারে যৌন ভিডিও নিয়ে তোলপাড়’, একই শিরোনামে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম িি.িপড়ীংনধুধৎহবংি.হবঃ –এ, ২৮ আগস্ট িি.িপযধশধৎরধহবংি.পড়স–এবং গত ২৯ আগস্ট দৈনিক কক্সবাজারবাণী পত্রিকায় ‘চকরিয়া ডা. শিল্পীর পর্নোছবির ছড়াছড়ি’ শিরোনামে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়। ফলে তিনি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঘটনাস্থল স্থানীয় একটি কম্পিউটারের দোকানে ঘটনার দিন বিকেলে গিয়ে নিশ্চিত হয়, নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে আসামী ইসরাত জাহান শিল্পী এ রকম অহরহ পর্নোসিডি বাজারে বাণিজ্যিকভাবে ছেড়ে দিয়েছেন। 
বাংলাদেশ যেহেতু একটি মুসলিম প্রধান দেশ। আর কক্সবাজার একটি পর্যটন নগরী। তাই শিল্পী নিজের নগ্ন ছবি এবং দৈহিক মিলনের দৃশ্য ভিডিও করে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতেও চরম আঘাত করেছেন।
বাদি জানান, আসামীর পর্নোছবি দেখলে পরিস্কার দেখা যায় যে, তিনি স্ব-ইচ্ছায় এই ভিডিও চিত্র ধারণ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে সংঘবদ্ধভাবে পর্নোছবির ভিডিও চিত্র পুরো দেশ তথা বিদেশেও ছড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতি, প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাসহ দেশের মান-মর্যাদাকে চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে। 
বাদি আরো বলেন, শিল্পী পর্নোভিডিও চিত্র ধারণ করে তা বাজারজাত করে জঘন্য অপরাধের পাশাপাশি নিজেকে একজন আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থার অধীনে প্যারামেডিক্স (আইসিডিডিআরবি) ধাত্রী বিদ্যায় প্রশিক্ষিত ডাক্তার পরিচয় দিয়ে নারী-পুরুষকে জিম্মি করে এ রকম জঘন্য ঘটনা সংগঠিত করে অর্থ উপার্জন করেন। এতে করে দেশের যুব সমাজ দিন দিন নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হওয়ার পাশাপাশি সমাজে অপরাধ প্রবণতা ক্রমশঃ বাড়ছে। তাই রাষ্ট্র ও মানবতার স্বার্থে মামলাটি করা হয়েছে, যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আমাদের বাংলাদেশের মেয়েরা পর্নো ভিডিও করতে অনুৎসাহিত হবে। এ কারণে মুসলমান প্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতো বাড়বে, ক্রমশঃ ধ্বংসের দিকে যাওয়া যুব সমাজে ফিরে আসবে নৈতিকতা। 

আসামী শিল্পীর বক্তব্য:
৫ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের যে ভিডিওটি নিয়ে মামলাসহ এত ধরণের আলাপ-আলোচনা উঠছে তা নিজের ভিডিও স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি পর্নো তারকা নয়। বিষয়টি নিয়ে মামলা হাওয়ার মতো কোন অপরাধ আমি করিনি। তিনি জানান, এটি আমরা স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও। তার স্বামীই ওই ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন। সন্তানের স্বীকৃতি না দিতে এবং আমাকে খারাপ মেয়ে প্রমাণ করতেই আমার স্বামী মূলতঃ এই ভিডিওটি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু শিল্পী এমন বক্তব্য দিলেও ভিডিওটি দেখলে স্পষ্ট বুঝা যায়, এটি ধারণ করার সময় তিনি নিজেও রাজি ছিলেন।
শিল্পী আরো বলেন, যেহেতু আমাদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছিল, তাই আমি এ ব্যাপারে তৎকালীন সময় আইনের আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার সময় আমার বিরুদ্ধে দেওয়ায় আমি সাথে সাথে নারাজি দিয়ে তা পুন: তদন্তের ব্যবস্থা করেছি। বর্তমানে ওই মামলাটি কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশ ডিবিতে তদন্তাধীন। 

ডিবি পুলিশের বক্তব্য : 
ডিবি পুলিশে খবর নিয়ে জানা গেছে, শিল্পীর দায়েরকৃত মামলাটি এর আগেও একবার তদন্ত হয়েছে। ওই তদন্তের রিপোর্ট শিল্পীর বিরুদ্ধে যাওয়ায় বাদির নারাজির প্রেক্ষিতে তারা পুনঃ তদন্ত করছে মাত্র। তবে মামলায় শিল্পী যাকে স্বামী দাবি করে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করেছেন, আমাদের তদন্তেও বিষয়টি মিথ্যা ধারা তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭ ধারা মতে হবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, যার বিরুদ্ধে শিল্পী মামলা করেছেন, তাকে বিয়ে করার স্বপক্ষে শিল্পীর কোন দালিলিক প্রমাণ নেই। 

শিল্পীর এলাকাবাসির কথা :
চকরিয়া উপজেলার হারবাংয়ের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। পিতা ছিলেন স্থানীয় এক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মর্মান্তিক এক সড়ক দূর্ঘটনায় তিনি মারা যান। শিল্পীর মাও একজন শিক্ষিত ভদ্র মহিলা। তিনি বর্তমানে হারবাংয়ের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। শিল্পী একজন ধাত্রী চিকিৎসক। তিনি বর্তমানে চকরিয়া সেন্ট্রাল হাসপাতালে কর্মরত। 
শিল্পী কলেজ জীবনের ক্লাসফ্রেন্ড মাহাবুবকে প্রথম বিয়ে করেছিলেন। তাদের সংসারে একটি বাচ্চাও আছে। কিন্তু স্বামী মাহবুব চাকরির প্রয়োজনে প্রায় সময় বাইরে থাকতেন। সিভিল ডিফেন্সে চাকরির করার কারনে স্ত্রীকে সময় দিতেন কম। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। কিছুদিন তারা আলাদাও থাকেন। এরই মধ্যে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েন শিল্পী। নতুন করে তার জীবনে বাবর নামের আরেক প্রেমিক আসার খবরটি লোকমুখে শোনা গেলেও শেষের দিকে শিল্পীর চালচলন এতই খারাপের দিকে দৃশ্যমান হচ্ছে যে, তাকে এখন অনেকটা অসুস্থের মত দেখাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রথম সংসার ভাঙ্গার পর তার আরেকটি সন্তান প্রসব হওয়ায় এলাকার মানুষ হিসেবে আমরা এখনো বুঝতে পারছি না যে, আসলে সন্তানটির পিতা কে?

শিল্পীর দাবিকৃত স্বামীর বক্তব্য :
শিল্পী যাকে স্বামী বলে দাবি করছেন, সেই বাবর জানান, তার সঙ্গে আমার শারীরিক সম্পর্ক থাকলেও বৈবাহিক কোন স¤পর্ক ছিল না। শিল্পীর সন্তানের পিতাও আমি নই। তার সাথে দীঘদিন স¤পর্ক ছিল স্বীকার করে বাবর বলেন, তার সাথে আমার যে সম্পর্কটি ছিল মূলত তা ছিল বোঝাপড়ার স¤পর্ক। যে স¤পর্ক শিল্পীর সাথে অনেকেরই রয়েছে। বিবাহ করলে নিশ্চয় ডকুমেন্ট থাকতো। বিয়ের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র থাকতো। দালিলিক কোন কাগজ-পত্র ছাড়া স্বামী দাবী করা দুর্ভিসন্ধিমূলক। তিনি বলেন, শিল্পীতো বাচ্ছা মেয়ে নয়। তার বয়স ৪০ ছুই ছুই। তারতো ভূল হওয়ার কথা নয়। মূলত অনেকের সাথে মেলামেশা করে অসতর্কতার কারনে গর্ভে সন্তান চলে আসায় শিল্পী লোকলজ্জা থেকে বাঁচতে স¦ামী হিসাবে তার নাম বলছে। এক প্রশ্নের জবাবে বাবর বলেন, হইতো অন্য অনেক পুরুষের চেয়ে তাকে তিনি তৃপ্ত করতে পেরেছিলেন, তাই স্বামী হিসাবে তার নাম বলছে। বাবর জোর দিয়ে জানান, শিল্পীর সাথে শারিরীক স¤পর্কের কোন ভিডিও আমি বাজারজাত করিনি, বরং আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও ব্ল্যাক মেইলের জন্যই তিনি তা প্রকাশ করেছেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন