কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিচ্ছে সরকার


কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিচ্ছে সরকার

ঢাকা: দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা তথা সনদের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। এজন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সনদের স্বীকৃতি দিলে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের মতো চাকরির জন্য আবেদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে কওমি শিক্ষার্থীদের। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৃহস্পতিবার বাংলানিউজকে জানান, কওমি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সরকার নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন আলিয়া মাদ্রাসার বাইরে সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজার কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসা থেকে আলাদা কারিকুলামে শিক্ষা নেওয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হয়। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম অনুসরণ হয় সেখানে। তাদের সদন দেওয়া হলেও তার স্বীকৃতি নেই সরকারের। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বিধায় কওমি মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা নেওয়া শিক্ষার্থীরা চাকরির ক্ষেত্রে সমান সুযোগ-সুবিধা পায় না। কওমি ধারার আলেমরা বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় থেকে শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি দাবি করে আসছেন। কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সরকার গত বছরের ১৫ এপ্রিল ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সভাপতি ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে ১৭ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। এর কো-চেয়ারম্যান হন শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। কিন্তু বেফাকের নামে কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়া, বেফাককে অ্যাফিলিয়েটিং ইউনিভার্সিটি করা, সরকারি অনুদান গ্রহণ না করা ও কওমি মাদ্রাসার পাঠপদ্ধতি পরিবর্তন না করাসহ আটটি প্রস্তাব করেন। এসব দাবি পূরণ না হওয়ায় আহমদ শফী কমিশনে সক্রিয় ছিলেন না। 
এদিকে চলতি বছরের মার্চ মাসে আহমদ শফী হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে হেফাজত। ওই কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ দিলে সরকার ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ গঠনের উদ্যোগ নেয়। কমিশনের প্রধান হিসেবে কওমি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট শীর্ষ একজন আলেমকে চেয়ারম্যান করা হবে, তাকে সরকার নিয়োগ দেবে।
এই কর্তৃপক্ষে থাকবেন সাতজন সদস্য। তারাও শীর্ষ আলেম। বর্তমানে কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা আলাদা পাঁচটি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালতি হয়ে আসছে। এই পাঁচ বোর্ডের চেয়ারম্যানরা পদাধিকার বলে এর সদস্য হবেন। সরকারের পক্ষে যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদা একজনকে কর্তৃপক্ষের সদস্য করা হবে। কর্তৃপক্ষ পছন্দ মতো একজনকে সদস্য সচিব করবেন। 
কর্তৃপক্ষের কাজ হবে কওমি মাদ্রাসার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির সনদ প্রদান। এছাড়াও অন্যান্য বোর্ডের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও নিজেদের মতো করে পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করে শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন করা। এর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসাই উদ্দেশ্য। 
কওমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কওমি মাদ্রাসাগুলোর অ্যাফিলিয়েটিং হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ সদনের স্বীকৃতি পেতে হলে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে অবশ্যই এই কর্তৃপক্ষের অধিভুক্ত হতে হবে।
এসব বিষয়ে একটি আইন মন্ত্রিসভার উপস্থাপনের পর সংসদে পাসের জন্য পাঠানো হবে। 
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই কর্তৃপক্ষ গঠনের মধ্যে দিয়ে সরকার কওমি মাদ্রাসার ওপর হস্তক্ষেপ নয়, বরং তারা চাইলে সহযোগিতা দেবে। 
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে এই উদ্যোগ। সরকার মনে করে কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের দাবি ন্যায্য। যথা শিগগির সম্ভব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন