কবে বন্ধ হবে ইয়াবার ঝড় : মাদক নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর টিমের অভিযান জরুরী

সিবিএন: টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত আসছে ইয়াবা। সে ইয়াবা প্রতিদিনই বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে থাকে। পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও র‌্যাবের বিভিন্ন অভিযানের পরও থামছে না এ ইয়াবার ঝড়। প্রশাসন কঠোরভাবে বিভিন্ন কৌশলে অভিযান চালিয়ে আটক হলেও ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিত্য নতুন কৌশলে অভিজ্ঞতা অবলম্বন করে পুনরায় সেই ব্যবসায় ঝাপিয়ে পড়ে।
তার নির্মুলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ৫০/৬০ জনের একটি টিম টেকনাফে এসে পুলিশ, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড থেকে কিছু সংখ্যক সদস্য নিয়ে সর্বমোট ৭০/৮০ জনের টিম টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালালে কমে যায় ইয়াবার লেনদেন। পালিয়ে যায় গডফাদাররা। প্রায় মাস খানেক অভিযানে টেকনাফ থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে বিভিন্ন মামলা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টিম ঈদের ছুটিতে গেলে ঈদের মাস খানেক গত হলেও এখনো ফিরে আসেনি সেই টিম। ইয়াবা নির্মুলে জনপ্রতিনিধি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অবহেলায় টেকনাফে ইয়াবার বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারে পরিণত হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়- ২০০০ সাল থেকে টেকনাফে ইয়াবার প্রচলন শুরু হয়। তখনকার সময়ে দাম বেশী হওয়ায় ইয়াবার অহরহ আনাগোনা না থাকলেও তারপরপরই দাম একটু কম হওয়ায় দেদারশে বেচা-বিক্রি শুরু হয়। দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে ইয়াবার লেনদেন। তখন থেকে আর ফিরে থাকাতে হয়নি ইয়াবাকে। প্রতিদিনই আটক হচ্ছে ইয়াবার চালান। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের অভিযান ঈদের পূর্বে কিছুদিন করা হলেও বর্তমানে অনেক দিন ছুটিতে থাকায় ইয়াবার বড় বড় চালান আবার দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হতে শুরু করেছে। সম্প্রতি সময়ে ঈদের পর ৮০ হাজার ও ১লক্ষ ৫০ হাজার পিচের ২টি ইয়াবার বড় চালান আটক হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে মামলা না হয়ে কতিপয় ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের হয়ে পার পেয়েছে মূল হোতারা। তাই মূল হোতাদের সাহস দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে তারা আরো বড় ইয়াবার চালান পাচারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই তড়িৎ সময়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান জরুরী মনে করছেন সচেতন মহল। র‌্যাবের ক্রেতা সেজে অভিযান ও বিজিবির ডকস্কোয়াডের কার্যকারিতা না থাকায় ইয়াবা ব্যবসা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ীদের জন্য বিজিবির তিনটি চেক পোস্ট ছাড়াও ডিবি’র চেকে হয়রানীর শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এমতাবস্থায় ইউপি মেম্বার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত ইয়াবা নির্মুলে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ইয়াবা নির্মুল অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করে অভিজ্ঞ মহল।
টেকনাফ জামেয়া ইসলামিয়ার অধ্যক্ষ মুফতি কেফায়ত উল্লাহ সফিক জানান- ইয়াবা একটি সর্বনাশা দ্রব্য। এটি দেশ ও পুরো জাতি ধ্বংসকারী দ্রব্য। এটা নির্মুলে বর্তমান আইন যথেষ্ট নয়। ইহা প্রতিরোধে সংসদীয়ভাবে নতুন আইন পাশ করে তা কার্যকর করত: নির্মুল করতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কেউ ইয়াবা থেকে বাঁচতে পারবে না।
টেকনাফ কোস্ট গার্ড কমান্ডার রফিকুল আউয়াল জানান- ইয়াবা নির্মুলে সরাসরি ক্রসফায়ারের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ইয়াবা নির্মুল করা যাবে। তাছাড়া বর্তমানে কোস্ট গার্ড যে পরিসরে রয়েছে তা থেকে সংখ্যা বৃদ্ধি করে আরো জোরালো অভিযান চালাতে হবে।
সাবেক সাংসদ ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জানান- কিছু অসৎ প্রশাসনিক কর্মকর্তার কারণে আজ ইয়াবা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। তাছাড়াও ইয়াবা গডফাদারদের দুদকের আওতায় এনে মামলা দায়ের করলে ইয়াবা নির্মুল সম্ভব হবে।
টেকনাফ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফরহাদুজ্জামান জানান- ইয়াবা নির্মুল করা আমাদের কাজ নয়। তবে মামলা দায়ের হলে তাদের যথাযথ গ্রেফতার পূর্বক আদালতে সুপর্দ করি। তবে ইয়াবা নির্মুলে প্রথমে নেভী, কোস্ট গার্ড ও বিজিবি অগ্রণী ভূমিকা পালন করলে ইয়াবার আগ্রাসন থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যাবে। তাছাড়া টেকনাফে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের একটি স্থায়ী কার্যালয় টেকনাফে স্থাপন করা হলে ইয়াবা নির্মুল করা যাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন