ক্রিড়া ডেস্ক: পর্যটন মন্ত্রণালয় ও
বাংলাদেশ ক্রিকেট
বোর্ড (বিসিবি)’র মধ্যে
রশি টানাটানির
কারণে নবনির্মিত
কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
ষ্টেডিয়ামের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা
দিয়েছে।
এরই মাঝে
ক্রিকেট ভেন্যু
স্থানান্তরের সংবাদে জেলাবাসী চরমভাবে ক্ষুব্ধ
হয়ে উঠেছে।
এ নিয়ে ধারাবাহিক
আন্দোলনও করছে
কক্সবাজারবাসী।
সূত্র জানায়, ২০১৪
সালের মার্চে
অনুষ্ঠিতব্য টি-টুয়েন্টি প্রমিলা বিশ্বকাপ
ক্রিকেটের ভেন্যু হিসাবে পর্যটন গলফ
মাঠের ৮০
একর জমি
অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ নেয় বিসিবি।
তবে তারা
এখন ‘স্থায়ী
ক্রিকেট স্টেডিয়াম’
গড়ে তুলতে
চায় এখানে। এ লক্ষ্যে ৫৫.৬৬ একর
জমির উপর
কাজও চলছে। গ্যালারী
বাদে অধিকাংশ
কাজ ইতিমধ্যে
শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে
এ মাঠে
বাংলাদেশ-ভারতের
মধ্যপ্রদেশের ম্যধকার ৩দিনের অনুর্ধ-১৬
ক্রিকেট ম্যাচও
শেষ হয়েছে।
তবে জাতীয় উন্নয়নের
জন্য পর্যটন
শিল্পের বিকাশ
অত্যাবশ্যক মনে করে পর্যটন মন্ত্রণালয়
চাইছে, ইন্টার
এশিয়া গ্র“পের প্রস্তাবিত
পাঁচতারকা হোটেল, পর্যটন রিসোর্ট ও
১৮ হোল
বিশিষ্ট গলফ
কোর্স প্রকল্পটি
অনুমোদন দিয়ে
পর্যটন শিল্পকে
আরেকটু এগিয়ে
নিতে।
অন্যদিকে কক্সবাজার
জেলাবাসির আশা, পর্যটন গলফ মাঠে
নির্মাণাধীন ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
স্টেডিয়াম’টি অস্থায়ী নয়, স্থায়ী
ক্রিকেট ভেন্যুর
মর্যাদা পাবে। সাগরপাড়ের
সৌন্দর্যময় কক্সবাজারই হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক
ক্রিকেটের তীর্থভূমি!
ঝঃধফরঁস ঢ়রপ-৪থ১সংশ্লিষ্ট
সূত্রগুলো মতে, ২০১৪ সালের ১৬
মার্চ থেকে
৬ এপ্রিল
পর্যন্ত স্বাগতিক
বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশের টি-টোয়েন্টি
বিশ্বকাপের খেলা হওয়ার কথা রয়েছে
বাংলাদেশে।
তারই পাশাপাশি
টি-টুয়েন্টি
প্রমীলা বিশ্বকাপ
ক্রিকেটের খেলাও হবে বাংলাদেশেই।
স্বাগতিক বাংলাদেশসহ
১০টি দেশের
প্রমীলা ক্রিকেট
দল এই
টুর্ণামেন্টে খেলবে।
সূত্র মতে, দেশের
অন্য ৩টি
ভেন্যুর পাশাপাশি
পর্যটন শহর
কক্সবাজারেও একটি নতুন ভেন্যুতে বিশ্ব
ক্রিকেটের এই ম্যাচগুলো হওয়া কথা
রয়েছে।
সেই হিসেবে
বাংলাদেশ ক্রিকেট
বোর্ড দ্রুততার
সাথে আইসিসির
নির্দেশনা মতে ক্রিকেট ভেন্যু তৈরিতে
মরিয়া হয়ে
উঠে।
কক্সবাজারের পর্যটন হোটেল শৈবাল সংলগ্ন
গলফ কোর্সের
৮০ একর
জমির প্রতি
প্রতি চাহিদা
তৈরি হয়
বিসিবির।
পরে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার
হস্তক্ষেপে গলফ মাঠের ৫০ একর
জমিতে ‘অস্থায়ী’
ভিত্তিতে ক্রিকেট
ভেন্যু তৈরির
কাজ শুরু
করে।
তাদের মতে, ২০১৩
সালের ১৮
এপ্রিল পর্যটনের
এই জমিতে
অস্থায়ী ক্রিকেট
তৈরির অনুমোদন
পাওয়ার পর
১৯ এপ্রিল
বাংলাদেশ ক্রিকেট
বোর্ডের প্রধান
কিউরেটর মোহাম্মদ
জাহিদ রেজা
বাবুর নেতৃত্বে
বিসিবির একটি
দল কক্সবাজারে
এসে জমি
বুঝে নিয়ে
‘ক্রিকেট স্টেডিয়াম’
নির্মাণ কাজ
শুরু করেন। ১৫ হাজার দর্শকের
ধারণ ক্ষমতা
নিয়ে ভেন্যুটি
গড়ে তোলা
হচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের
পরিচালক ও
চট্টগ্রাম ক্রিকেট ভেন্যু চেয়ারম্যান আ.জ.ম নাছির উদ্দিন
গত ২
নভেম্বর কক্সবাজারে
এক সংবাদ
সম্মেলনে জানান,
জমির দখল
পাওয়ার জন্য
‘অস্থায়ী’ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কথা বলা
হয়েছিল।
কিন্তু এটি
হবে ‘স্থায়ী’
ক্রিকেট ভেন্যু।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন,
কয়েকদিন আগে
প্রধানমন্ত্রীর সাথে হয়েছে। তিনি
কক্সবাজারে নির্মাণাধীন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক
ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি
স্থায়ী ভেন্যু
হবে।
আমি দায়িত্ব
নিয়ে এই
কথা বলছি।
অথচ পর্যটন মন্ত্রণালয়
২০১৩ সালের
১১ জুলাই
‘বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের নিজস্ব জমিতে
বাংলাদেশ ক্রিকেট
বোর্ড কর্তৃক
আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়াম নির্মাণ’
সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ¯পষ্টভাবে জানানো
হয়, ‘বাংলাদেশ
পর্যটন করপোরেশনের
নিজস্ব মালিকানাধীন
হোটেল শৈবালের
জমিতে বাংলাদেশ
বোর্ড শুধুমাত্র
আইসিসি টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট
টুর্ণামেন্ট আয়োজনের জন্য স¤পূর্ণ
অস্থায়ী ভিত্তিতে
স্থাপনা নির্মাণ
করে খেলা
পরিচালনা করবে। পরবর্তীতে
খেলা শেষ
হওয়ার সাথে
সাথেই সমুদয়
স্থাপনা বাংলাদেশ
ক্রিকেট বোর্ড
নিজস্ব খরচে
অপসারণ করবে।’
বেসামরিক বিমান পরিবহণ
ও পর্যটন
মন্ত্রী মুহাম্মদ
ফারুক খান
এমপির সভাপতিত্বে
অনুষ্ঠিত ওই
সভায় গৃহীত
৫টি সিদ্ধান্তের
মধ্যে চতুর্থটিতে
বলা হয়,
‘ভবিষ্যতে বিসিবি বা যুব ও
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়
এই জমি
কোন ক্রমেই
দাবি করতে
পারবে না।’ ওই
সভায় একই
মাঠে ‘ইন্টার
এশিয়া গ্র“প’ নামের
একটি প্রতিষ্ঠানের
প্রস্তাবিত পাঁচতারকা হোটেল, পর্যটন রিসোর্ট
ও ১৮
হোল বিশিষ্ট
গলফ কোর্স
প্রকল্প ‘নীতিগত
ভাবে’ অনুমোদনের
সুপারিশ করা
হয়।
ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের
পর্যটন মন্ত্রণালয়
সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে
পর্যটন গলফ
মাঠে ‘এস্টাবলিশমেন্ট
অব ফাইভ
স্টার স্ট্যান্ডার্ড
বিচ হোটেল
উইথ এইট্টিন-হোল গলফ
কোর্স অ্যাট
কক্সবাজার’ শীর্ষক প্রকল্পটি মন্ত্রী সভা
কমিটির সভায়
নীতিগত ভাবে
অনুমোদন করা
হয়।
ওই প্রকল্পটি
পাবলিক প্রাইভেট
পার্টনারশীপের (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত
নেয়া হয়।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের
কক্সবাজারস্থ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
ও হোটেল
শৈবালের ব্যবস্থাপক
মোহাম্মদ নুরুল
ইসলাম জানান,
শুধুমাত্র টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য
বিসিবিকে পর্যটন
গলফ মাঠটি
দেয়া হয়েছে। খেলা
শেষ হলেই
তারা মাঠটি
পর্যটন কর্পোরেশনকে
হস্তান্তর করবে। তিনি জানান,
আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর প্রস্তাবিত প্রকল্প
সংশ্লিষ্টরা কয়েকদফা ওই জমি পরিদর্শন
করেছেন।
চুড়ান্ত অনুমোদনের
পর গলফ
মাঠে পাঁচতারকা
হোটেল, পর্যটন
রিসোর্ট ও
১৮ হোলের
গলফ কোর্সের
কাজ শুরু
হবে।
পর্যটন কর্মকর্তা নুরুল
ইসলাম অবশ্য
জানিয়েছেন, ১১ জুলাইয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর আর কোন
সভা হয়নি। মন্ত্রণালয়ের
বৈঠকেই চুড়ান্ত
সিদ্ধান্ত হবে। অন্যদিকে কক্সবাজার
জেলাবাসি আশা
করছেন, পর্যটন
গলফ মাঠে
নির্মাণাধীন ‘অস্থায়ী’ ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি ‘স্থায়ী’
ভেন্যূই হবে। এটি
জেলাবাসির প্রত্যাশা।
কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া
সংস্থার সাধারণ
স¤পাদক
অধ্যাপক জসীম
উদ্দিন জানান,
কক্সবাজারবাসি ৭/৮ বছর ধরে
ক্রিকেট স্টেডিয়ামের
জন্য সংগ্রাম
করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে জেলাবাসির স্বপ্ন
পূরণ হয়েছে। ‘পর্যটন
মন্ত্রণালয় যদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম তুলে
নিতে চায়,
তাহলে জেলাবাসি
রক্ত দিয়ে
তা প্রতিরোধ
করবে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নির্দেশনা
মতো সঠিক
সময়ে স্টেডিয়ামের
কাজ শেষ
করতে না
পারায় ইতিমধ্যেই
কক্সবাজার ভেন্যূতে টি-টুয়েন্টি প্রমীলা
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের
ম্যাচ বাতিল
করা হয়েছে। শুধুমাত্র
বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে
সামনে রেখেই
তড়িগড়ি করে
স্টেডিয়ামটির নির্মাণ শেষ পর্যায়ে নিয়ে
আসা হয়েছে। এখন
সবার মাঝে
সংশয়, আদৌ
কি স্টেডিয়ামটি
থাকবে, নাকি
পর্যটন মন্ত্রণালয়
নিজেদের প্রকল্প
বাস্তবায়ন করবে!
অন্যদিকে বাংলাদেশে পর্যটন
শিল্পের বহুমাত্রিক
বিকাশ এবং
এই লক্ষ্যে
বেসরকারি খাতকে
উৎসাহিত করতে
সরকার পাবলিক
প্রাইভেট পার্টনারশিপের
(পিপিপি) আওতায়
দেশের বিভিন্ন
স্থানে পর্যটন
সুবিধা প্রবর্তনের
পরিকল্পনা নেয়। ইতিপূর্বে ২০০৯
সালের ২৮
জুন জাতীয়
সংসদের বেসামরিক
বিমান পরিবহন
ও পর্যটন
মন্ত্রণালয় স¤পর্কিত স্থায়ী কমিটির
পঞ্চম বৈঠকে
কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের একটি গলফ
কোর্স ও
একটি হোটেলসহ
আনুষঙ্গিক সুবিধা পিপিপির আওতায় গড়ে
তোলার জন্য
সুপারিশ করা
হয়।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ
মজিবুর রহমানের
বড় ছেলে,
আবাহনী ক্রীড়া
চক্রের প্রতিষ্ঠাতা
ও প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার
বড় ভাই
শেখ কামালের
নামে কক্সবাজার
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নামকরণ করা
হয়।
গত ৩
সেপ্টেম্বর উখিয়ায় জনসভা মঞ্চে অন্য
৩৬টি উন্নয়ন
প্রকল্পের সাথে ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক
ক্রিকেট স্টেডিয়াম’টিরও ফলক
উম্মোচন করেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে হিসাবে এটি
হবে বাংলাদেশের
৮ম ক্রিকেট
ভেন্যু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন