একদিন বাংলাদেশেও নিশ্চয় শ্যুটিং করবো

বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান।
বিনোদন ডেস্ক: এই প্রথম ঈদে মুক্তি পাচ্ছে শাহরুখ খানের ছবি। ছবির নাম ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’। ছবির পরিচালক রোহিত শেঠি ‘হিট মেশিন’ হিসেবেই খ্যাত। 

এতোদিন যে কোনো উৎসবে ছবি মুক্তির ক্ষেত্রে সালমান খানের একচেটিয়া অধিকার বলে গণ্য হতো। আর এবার সে ধারা ভাঙতে চলেছেন এস আর কে। এই প্রথম রোহিতের সঙ্গে কাজ করলেন তিনি। ২০০৭ এর ব্লকব্লাস্টার ‘ওম শান্তি ওম’ ছবির পরে আবার শাহরুখের নায়িকা দীপিকা পাড়।

সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এই বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান। আড্ডার আমেজে শাহরুখের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শুভ পাল।

বাংলানিউজকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। 


রোহিত শেঠির সঙ্গে প্রথম কাজ করলেন। অভিজ্ঞতা কেমন ?

রোহিতের সঙ্গে কাজ করে খুব মজা পেয়েছি। একটাই অসুবিধা হয়েছে। সেটে মেয়েদের কাছে আমার পরিচালক আমার থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় ছিলেন। আমি আবার ওর সঙ্গে কাজ করবো। কিন্তু শর্ত থাকবে যাতে তিনি নিজের মুখ ঢেকে রাখেন। 

‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এ আপনি প্রচুর ট্রেনে ঘুরেছেন। বাস্তবে আপনি কতোটা ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন ?

শাহরুখ খান হওয়ার আগে আমি প্রচুর ট্রেনে চড়েছি। আমি দিল্লির ছেলে। মাঝে মাঝেই ট্রেনে জয়পুর যেতাম। বেঙ্গালুরু, চেন্নাইতেও গিয়েছি। মুম্বইতে এসে একটা দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমার জানা ছিল না যে, দিল্লি থেকে কোনো ট্রেন মুম্বইতে ঢুকলে লোকাল ট্রেন হয়ে যায়। আমি তো নিশ্চিন্তে আমার সিটে শুয়ে আছি। এমন সময় একটি মেয়ে এসে সিট ছাড়তে বললে আমি রাজি হইনি। মেয়েটি তখন রাগে অগ্নিশর্মা। 

দীপিকা পাড়–কোনের সঙ্গে আবার কাজ করে কেমন লাগলো ?

দীপিকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শান্তি প্রিয়ার থেকে অনেক আগে এগিয়ে গেছেন। কিন্তু মানুষ হিসেবে ‘ওম শান্তি ওম’-এর থেকে এতোটুকু বদলায়নি। আমার সঙ্গে ওর প্রথম কাজ বলে হয়তো দীপিকা আমার বেশি প্রিয়। কিন্তু সত্যি ও ভালো অভিনেত্রী। প্রচণ্ড পরিশ্রমী। স্টারডম একদম নেই। ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’-তেও দারুণ কাজ করেছেন। 

এবার আপনার ছবির গানগুলো একেবারে অন্যরকম....

যেহেতু ছবিটি কমেডি, তাই সংগীতও অন্যরকমভাবে করেছেন বিশাল - শেখর। এস পি বালাসুব্রহ্মনিয়ম সাহেব দারুণ গেয়েছেন ‘চেন্নাই-আই-আই-আই এক্সপ্রেস’ গানটা। ‘রেডি স্টেডি গো’ একটা মজার গান। ‘তিতলি’ গানটা শাহরুখের ছবির মতো, দীপিকার ফেভারিট। আমার নিজের পছন্দ ‘তেরা রাস্তা ছোড়ো না’ গানটি। এছাড়া একটা ‘লুঙ্গি ড্যান্স’ আছে, যেটা রজনীকান্ত স্যারকে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। 

ছবিতে আপনি ৪০ বছর বয়স হয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। এতে আপনার রোমান্টিক ইমেজে ধাক্কা লাগবে না ?

গার্লস স্টিল লাইক মি। ৪০ বছর একটা সংখ্যা মাত্র। তাছাড়া প্রেমের ক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা নয়। ৪০ হোক বা ৪০০ মেয়েরা আমার সঙ্গেই প্রেম করবে। 

উৎসবের সময় আপনার সব ছবি রিলিজ হয়। এটা কি কোনো কুসংস্কার ?

দিওয়ালি, ক্রিসমাস, ঈদে মুক্তি পাওয়া সব ছবিই পারিবারিক ছবি। আমি যদিও ছবি মুক্তির জন্য এ দিনগুলো ইচ্ছে করে বাছি না। প্রযোজকরাই ছবি মুক্তির দিন ঠিক করেন। যশ চোপড়া যেমন তার সব ছবি দিওয়ালিতে রিলিজ করতেন।

আপনার কাঁধের চোট এখন কেমন?

অনেকটা ভালো। তাও হাত বেশি ঘোরাতে কষ্ট হয়।

এতো ঝুঁকি নিয়ে স্টান্ট করেন কেন?

স্টান্টম্যানরা আমাদের ট্রেনার। অনেক সময় তারা সাবধান করেন, শাহরুখ ভাই ঝুঁকি নিয়ে এসব কোরো না। কিন্তু আমি চাই তারা যেমন স্বত:স্ফুর্তভাবে ‘স্ট্যান্ট’ করেন, সেভাবে করতে। অনেক সময় এমনও হয়েছে প্রচণ্ড ঝুঁকি থাকলে কিছুতেই অনুমতি দেননি। তবে আমি স্ট্যান্ট করতে ভালোবাসি। 

শুনলাম, সালমান খানের সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। সালমান কি আসছেন ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর প্রিমিয়ারে ?

আপনাকে একটা কথা জানাই যে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর কোনো প্রিমিয়ার হচ্ছে না। তাছাড়া সালমানই হোক বা অন্য যে কেউ, কারও সঙ্গে আমার ঝামেলা বা বন্ধুত্ব সেসব নিয়ে আমি প্রকাশ্যে মুখ খুলি না। আমার সম্পর্কে অনেকে অনেকে কথা বলেন। আমি কোনো মন্তব্য করি না। আসলে আমার মনে হয় আমার সম্পর্কে বলে আমাকেই তারা বিনোদন উপহার দিচ্ছেন। 

পশ্চিমবাংলার মতো বাংলাদেশেও আপনার অনেক অনুরাগী আছেন.....

(মুখের কথা কেড়ে নিয়ে) আমি জানি। দুই বাংলার মানুষের ভালোবাসা আমাকে আপ্লুত করে। কয়েকদিন আগে আমি, দীপিকা আর মাধুরী ঢাকার ‘আর্মি স্টেডিয়ামে’ একটা অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলাম। বহু মানুষ আমাদের অনুষ্ঠান দেখতে সেখানে ভিড় করেছিলেন। পরে শুনেছি, বহু মানুষ আমাদের চোখের দেখাটাও দেখতে পারেন নি। এজন্য আমি দুঃখিত। আসলে আমার ছবি কলকাতার মতো বাংলাদেশেও খুব ভালো ব্যবসা করে। দুই বাংলার মানুষদের জন্যই তো আজ আমি স্টার। 

‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর পরে আপনি কোন ছবি করছেন?

ফারহা খানের ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। দীপিকা ও ক্যাটরিনার অভিনয় করার কথা ছিল। মনে হয়, ক্যাটরিনাই চূড়ান্ত হয়েছেন।

আর বাংলা ছবি কবে করবেন?

ভালো চিত্রনাট্য পেলেই বাংলা ছবি করবো। তবে তার আগে বাংলা ভাষাটা ভালো করে শিখতে হবে। আরেকটা হতে পারে, যদি আমাকে কোনো চুম্বক চরিত্রে নেওয়া হয়। আমার ইঙ্গিত করা ছাড়া তখন তো কিছু করার থাকবে না। চালিয়ে নেবো।

কলকাতা বা বাংলাদেশ কবে আপনার ছবির প্রেক্ষাপট হবে?

এভাবে বলা খুব কঠিন। গল্পের প্রয়োজন না হলে শুধু শুধু একটা শহরকে তো ঢোকানো যায় না। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর গল্পই তামিলনাড়ু– কেন্দ্রিক। আবার ‘বরফি’, ‘কাহানি’-র মতো ছবি কলকাতায় শ্যুট করা হয়েছে। ঠিক তেমনই দেবব্রত পাইন ‘চিটাগং’ বাংলাদেশে শ্যুট করেছেন। আমার তরফ থেকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ঈদ শুভেচ্ছা রইল। 

সংস্কৃতি, ইতিহাস সৌন্দর্যের দরকার হলে প্রথমেই বাংলার কথা আমার মনে পড়বে। এ পর্যন্ত যে কটা ছবি করেছি একমাত্র ‘দেবদাস’ এইসব অঞ্চলে শ্যুট করা যেতো। কিন্তু প্রচণ্ড ব্যয়বহুল সিনেমা, সেটের গ্যাঞ্জার তৈরি করতে অসুবিধে ছিল। ইনশাল্লাহ, একদিন বাংলাদেশেও নিশ্চয় শ্যুটিং করবো। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন