ফাশিয়াখালীর একটি বাগান থেকে ১০লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লুট

ছবি: সিবিএন
চকরিয়া সংবাদদাতা: সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে পালিয়ে বেড়াচ্ছে নুর আহমদ (৮২) নামে এক বাগান মালিক। তার ওই বাগান মালিকের গত এক সপ্তাহে সন্ত্রাসীরা বাগান থেকে নির্বিচারে কেটে নিয়ে গেছে প্রায় ১০লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় গাছ। সন্ত্রাসীদের ধারাবাহিক নিধনযজ্ঞে বাগানটি এখনে বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের রাইম্যাখোলা এলাকায়। পালিয়ে থাকাবস্থায় বাগান মালিক নুর আহমদ গতকাল চকরিয়া প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার বাগান ও জমি রক্ষা এবং তিনিসহ পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাইম্যাখোলা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ ইসমাইলের ছেলে নুর আহমদ জানান, ১৯৮০-৮১ সালে বন্দোবস্ত মামলা মুলে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে তিনি ফাইতং মৌজার ১৬৬নম্বর আর হোল্ডিংয়ে তৃতীয় শ্রেনীর ৫একর জমি বরাদ্ধ পেয়েছেন। এরপর ওই জমিতে বসতবাড়ি নির্মান করে পরিবার নিয়ে শান্তিপুর্নভাবে বসবাস করার পাশাপাশি বিপুল টাকা বিনিয়োগ করে একটি বাগান গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তার বাগানের প্রায় গাছ বড় হয়ে উঠেছে। বন্দোবস্ত পাওয়ার পর থেকে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবছর খাজনাও পরিশোধ করে আসছেন। নুর আহমদ জানান, বরাদ্ধকৃত তার জমি থেকে প্রায় ১৪শতক জমি স্থানীয় আবদুল গফুর গং জোরপুর্বক দখল করে নেন। এ ঘটনায় তিনি ২০০১সালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি নাশিলী মামলা দায়ের করেন। মামলার রায় তার পক্ষে হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে তৎকালীন প্রথমশ্রেনীর ম্যাজিষ্ট্রেট সৈয়দ মো.মুজিবুল হকের উপস্থিতিতে ২০০১সালের ২৮জুন লামা থানা পুলিশ অবৈধ দখলদার গফুরের স্থাপনা উচ্ছেদ করে জমিটি উদ্ধার করে দেন। ভুক্তভোগী নুর আহমদ অভিযোগ করেছেন, আদালতের নির্দেশে পুলিশ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে জমিটি উদ্ধার করলেও পরে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে দখলবাজ গফুর গং ফের ওই ১৪শতক জমি দখল করে নেয়। গেল ১২বছর ধরে এ জমি গফুর অবৈধভাবে দখলে রেখেছে।
ভুক্তভোগী সংবাদ সম্মেলনে আরো জানান, দখলবাজ আবদুল গফুরের দেখাদেখিতে কিছুদিন পর স্থানীয় মফিজুর রহমান, আবুল কাশেম, আহমদ হোসেন ও শফির নেতৃত্বে অপর একটি দখলবাজ সন্ত্রাসী চক্র পেশিশক্তি দেখিয়ে বাগানসহ তার আড়াই একর জমি দখল করে নেয়। এসময় তাদের বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে অভিযুক্তরা উল্টো বাগান মালিক নুর আহমদ ও পরিবার সদস্যদের বিরুদ্ধে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে একটি ও উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আরো একটি সাজানো মামলা জড়িয়ে দেন। মামলা দুটিতে দীর্ঘ শুনানী শেষে আদালতের রায় বাগান বাগান নুর আহমদের পক্ষে আসে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী।
চকরিয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে কান্নাজড়িত কন্ঠে ভুক্তভোগী বয়োবৃদ্ধা নুর আহমদ জানান, একের পর এক মামলায় জড়িয়ে দীর্ঘ হয়রানী করার পরও দখলবাজ সন্ত্রাসীরা তার জমি দখল ছেড়ে দেয়নি। পক্ষান্তরে তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী জড়ো করে গত এক সপ্তাহে বাগানে হানা দিয়ে কেটে নিয়ে গেছে প্রায় ১০লাখ টাকার ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। সাংবাদিকদের সামনে গাছ কাটার কিছু ছবি উপস্থাপন করে নুর আহমদ জানান, এখন তার বাগানটি বিরান ভুমিতে পরিণত হয়েছে। গাছ কাটার সময় তাদের বাঁধা দিতে গিয়ে নুর আহমদসহ পরিবারের প্রায় সদস্য সন্ত্রাসীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। দফায় দফায় হুমকির কারনে তিনিসহ পরিবার সদস্যরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
জানতে চাইলে ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বন্দোবস্তমুলে ওই জমির বৈধ মালিক ভুক্তভোগী নুর আহমদ। অভিযুক্তরা প্রভাব খাটিয়ে বাগানের গাছ লুটসহ জবরদখলের ঘটনা সংগঠিত করছে। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি উপজেলা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন