আর কতো মানসিক চাপ সইবে মানুষ


ডেস্ক রিপোর্ট:  অশুভর আগমন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সবারই থাকে, আস্তিক বা নাস্তিক, অভিজাত বা সাধারণ, ধনী বা গরিব কিংবা মেহনতী বা সাদা কলারওয়ালা মানুষ। কিন্তু সেই অশুভটা যখন এসে পড়ে তখন উৎকণ্ঠা পরিণত হয় ভীতিতে। কোন আলোকিত দুপুরে হঠাৎ ঈশান কোণ থেকে ধেয়ে আসা ঝড়ের মেঘ যখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে তখন প্রকৃতিতে যে দৃশ্যের অবতারণা হয় অনেকটা সে রকমই অনুভূতি হয় মানুষের মনোজগতে। আলোকে খেয়ে ফেলে কালো। অন্ধকারে ছেয়ে যায় চরাচর। সে সময়ও মৃত্যু চিন্তা নিয়ে মানুষ দ্রুত আশ্রয় খোঁজে। যতো রকম কুসংস্কার আছে সব দিয়ে ঠেকাতে চায় প্রকৃতির রোষ।



যদিও এখন প্রকৃতিতে কোন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা নেই কিন্তু রাজনীতির অশনি গিলে ফেলেছে সব আলোকিত বস্তু ও প্রাণীকে। অশনি আর ‘সঙ্কেত’ আকারে নেই আর অন্ধকার গর্ভের ভয়ঙ্কর রূপ দেখাচ্ছে যেন। নরক নেমে এসেছে - সত্যি সত্যি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভেঙে চুরে ছাড়খার করছে আর সবচেয়ে ভয়াবহভাবে ভাঙছে মানুষের মন - মানসিক বিকল অবস্থা এখন কার নেই?

গ্রাম-শহরের প্রতিটি মানুষ এখন এই মহামারীতে আক্রান্ত। প্রথম শুরু হয়েছে নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক দিয়ে, তারা দেখল সবকিছুই কতো অপ্রতুল-কতো ক্ষমতাহীন ও অশক্ত। সব ভেঙে পড়ছে, জ্বলে যাচ্ছে উপড়ে উল্টে-পাল্টে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। বিশৃঙ্খল জনপদগুলোতে কেবল দানবীয় চিৎকার করছে উচ্ছৃঙ্খল কতিপয়। 

রাজনীতি দেউলিয়া হয়ে গেলে, ক্ষমতা অসুর হয়ে উঠতে গিয়ে নিজেই ভীত ও অথর্ব হয়ে পড়লে কী হয় তা আবার দেখছে এদেশের মানুষ। আগেও দেখেছে একবার ১৯৭৪-৭৫ সালে আর একবার ১৯৮৭-৯০ সালে। নতুন প্রজন্মের জন্য আবার তা দেখা বা সেই রকম অভিজ্ঞতা অর্জন বোধ হয় বাকি ছিল।

এখন সবাই সবাইকে প্রশ্ন করছে - ব্যাকুল - উদ্বেগাকুল প্রশ্ন। টেলিভিশন আবার সত্যিই বোকা বাক্সে পরিণত। আগেরবার নামকরণটা যখন হয়েছিল তখন বেহায়া এরশাদের আমলে ছিল একটাই মাত্র টেলিভিশন আর রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলেই বানোয়াট খবর আর ক্রমাগত সিনেমা দেখাতো ওই রাষ্ট্রীয় যন্ত্র, বাংলা-ইংরেজি ভারতীয় কোন বাছ-বিচার ছিল না। ১৯৮৭ সালে একবার ওই করতে করতে বিটিভি দেখিয়ে দিয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে।’ সবাই বুঝে গিয়েছিল করণীয় - দড়ি ধরে টান মারতে হবে।

কিন্তু এখন অনেক টেলিভিশন, তবে গুচ্ছ হয়ে গেছে মাত্র দুটি, এই সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে পরস্পর বিরোধী প্রবল বক্তারা কেমন যেন ম্রিয়মান। কারণ এই সঙ্কট যখন আসি আসি করছে সেই আট-নয়মাস আগের জেল্লা আর বাকময়তা নেই, মিউ মিউ করে কেবল আলোচনা আর সংলাপের কথা বলে চলেছেন তারা। দোষ ধরাধরিতেও অতি মাত্রার ক্লান্তি এসে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা এই সমাজের বাইরে তো তারা নন, অন্যরা যেমন ‘বোকা-বিকল’ হয়ে গেছে তারাও হয়েছেন। আর ততোধিক নালায়েক উপস্থাপকগুলোকে দেখুন - বোকা প্রশ্ন করে চলছে বার বার - কদিন আগেও যারা প্রতিভার স্ফুরণ ঘটানোর চেষ্টায় রত ছিল, জাতির জন্য অবদান রাখার অভিপ্রায় ছিল তাদের। সবকিছুর লেজ গুটিয়ে গেছে।

১৯৮৯ সালের দিকে এক কবি বলেছিলেন, ‘বেহায়াটা আমাদের মাথায় লাঙল চালাচ্ছে।’ প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভুগছিলেন তিনি - সাধারণ মানুষও ভুগছিল। এ চাপটা এমনই যেন মনে হয় বিশাল এক বস্তার নিচে চাপা পড়া অবস্থা। বস্তাটা তুলোর কিন্তু বিশাল চাপ তার অসহনীয়। এটা আরও অসহ্য হয়ে ওঠে তখনই যখন যাদের ওপর আস্থা রাখতে চায় মানুষ তারা অনাস্থার কাজগুলো করে বসে - আমাদের মান তাদের প্রত্যাখ্যান করতে চায় অত্যন্ত অনিচ্ছায়। জার্মান কবি-নাট্যকার-ঔপন্যাসিক গ্যাটে তার (টৎড়িৎঃব:ঙৎঢ়যরপয) ডরব ঃযব উবস ঞধম অর্থাৎ প্রবীণ বিজ্ঞদের উক্তি : অর্ফিক-এ লিখেছেন - ‘আমাদের ইচ্ছারাও নিয়তির দাস, তারা যন্ত্রবৎ নিয়ন্ত্রিত হয়। নিয়মজনিত প্রয়োজনের দ্বারা, আমাদের স্বাধীন ইচ্ছার কোন মূল্য নেই। ‘ফলে যা আমাদের অতি আকাঙ্খিত, যা আমরা অন্তর দিয়ে ভালোবাসি. তাদের প্রত্যাখ্যান করে আমাদের অন্তরই ,করতে বাধ্য হয় অবস্থার চাপে। তার ফল এই হয় যে, আমরা যারা নিজেদের স্বাধীন বলে মনে করি এবং সেই মতো চলি,তাদের অবস্থা হয়ে ওঠে আরও খারাপ, আরও দুঃখজনক।’

আমরা এখন সেই চাপটার মধ্যেই আছি - বিশ্বাস নষ্টের ব্যাপার - ধর্ষিত হওয়ার পর যে মানসিকতা হয় ভিকটিমের। যুক্তিসঙ্গ প্রয়োজন আর গণতান্ত্রিক স্বাধীন ইচ্ছা মূল্যহীন হয়ে গেছে। অন্তরই প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের আমরা বিশ্বাস করতাম। বেয়াহাটা মগজে লাঙল চালাচ্ছে এখনো। আর অন্যরা যার যা অস্ত্র তাই চালাচ্ছে - পিঠে বাড়ি মারছে, মাথায় পেরেক ঠুকছে আর বুকে চাপিয়েছে ওজন। চাপ - চাপ - অশুভ চাপে পড়েছে সবাই। আমাদের বুধবার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন