চকরিয়ায় উপকূলীয় চিংড়ি জোনের ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত

হুমকির মুখে ৫৮৭ চিংড়ি প্রকল্প, আতঙ্কে চাষীরা 

এম.রায়হান চৌধুরী,চকরিয়া: 
চকরিয়া উপজেলার রামপুর উপকূলীয় চিংড়ি জোনের  সাত হাজার একর আয়তনের বিশাল এলাকায় ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।বেড়িবাঁধ সমূুহের রক্ষাকবচ ঝুকির্পূন হওয়ায় চিংড়িজোনের ৫৮৭টি চিংড়ি প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। বিগত ২৬ বছর ধরে সময়ে অসময়ে সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে ভাসছে এসব চিংড়ি প্রকল্প। এঅবস্থার কারণে এখানকার প্রকল্প মালিক ও চাষীরা চরমভাবে আতঙ্কে রয়েছে।
বিগত ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫১৫ কিলোমিটার ও মৎস্য বিভাগের ৮০ কিলোমিটার বেড়িবাধ বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে মূলত উপজেলার এই চিংড়ি জোনটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় চিংড়ি প্রকল্প মালিক ও চাষীরা জানিয়েছেন, বেড়িবাঁেধর সাথে একই সময়ে পানি নিষ্কাষনের ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে চিংড়িজোনের ২০-২২টি স্লুইচ গেইট। ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এসব স্লুইচ গেইটের ২০টি গার্ড সেট। এসবের কারণে বর্তমানে চিংড়ি শিল্পে বড় ধরণের বিপর্যয়ের আশংকা করছেন সংশিস্লষ্টরা। এতে করে যে কোন মহূর্তে অনিশ্চিয়তা দেখা দিতে পারে বছরে হাজার কোটি টাকার চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ উৎপাদনে। 
জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে মৎস্য বিভাগ কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পাঁচটি  সাব পোল্ডারের আওতায় চকরিয়ার সুন্দরবনস্থ রামপুর মৌজার প্রায় ৭ হাজার একর চিংড়িজোন রক্ষণাবেক্ষণ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে এডিবি’র আর্থিক সহায়তায় প্রায় ৮০ কিলোমিটার বেড়িবাধ, ২৭টি ৩ বেন্ডের স্লুইচ গেইট ও ২০টি গার্ড সেট নির্মাণ করা হয়। নির্মিত এসব স্থাপনার মধ্যে বিগত ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় ও ২০০৪, ২০০৭ ও সর্বশেষ ২০১২সালের ভয়াবহ বন্যায় বেশির ভাগ বেড়িবাধ ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে। অপরদিকে ২৭টির মধ্যে বর্তমানে ২০-২২ টি স্লুইচ গেইট প্রায়ই অকেজো হয়ে গেছে। রোদে শুকিয়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে গার্ড সেট গুলো। 
          পাউবো’ সুত্র জানায়, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে জেলার পেকুয়ার দুটি ফোল্ডার, চকরিয়ার দশটি, কুতুবদিয়ায় একটি, মহেশখালীতে চারটি, টেকনাফে চারটি ও কক্সবাজার সদরে তিনটি ফোল্ডারের প্রায় ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাধ ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় ও ১৯৯৭ সালে আইলা ও ২০১২সালে ভয়াবহ বন্যার আঘাতে বিধ্বস্থ হয়েছে। বিগত ২৬বছরে ক্ষতিগ্রস্থ কিছু ঝুকিপুর্ন স্থানে পাউবো সংস্কার কাজ করেছে। তবে পর্যাপ্ত বরাদ্ধ না পাওয়ায় এখানো অনেকস্থানে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। 
       পাউবো চকরিয়ার বদরখালী শাখা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী ও চিরিঙ্গা শাখা প্রকৌশলী মিঠুন দাশ জানিয়েছেন, রামপুর মৌজার ৭ হাজার একর জমির চিংড়ি জোনে ১০ একর বিশিষ্ট ৪৬৭টি ও ১১ একর বিশিষ্ট ১২০ টিসহ ৫৮৭টি চিংড়ি প্রকল্প রয়েছে। এসব চিংড়ি প্রকল্পের পানি নিষ্কাশন ও দুর্যোগ কালীন নিরাপত্তার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বেড়িবাধ ও স্লুইচ গেইট সমুহ। আর এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গার্ড সেটগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। 
     স্থানীয় চিংড়ি চাষীরা জানিয়েছেন, এখানকার একটি চিংড়ি প্রকল্পে প্রতিবছর কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকার চিংড়ি ও বিবিধ প্রজাতের মাছ উৎপাদন হয়।এ অনুযায়ী ৫৮৭ টি চিংড়ি প্রকল্পে প্রতিবছর প্রায় হাজার কোটি টাকার বেশি মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। তারা জানান, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্থ এসব বেড়িবাধ ও স্লুইচ গেইট সমুহ  সংস্কার না করলে আগামীতে চকরিয়ার চিংড়ি শিল্পে বড় ধরণের বিপর্যয় নেমে আসবে।
      কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ গুলো মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ চেয়ে উর্ধবতন প্রশাসনে অনেক গুলো প্রকল্প পাঠানো হয়েছে অনেকদিন আগে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু প্রকল্পের বিপরীতে  বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তিনি বলেন, জরুরী প্রয়োজন যেখানে জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে সেখানেই বাঁধ মেরামতের কাজ চালানো হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন