অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন!

মাহফুজ,টেকনাফঃ
এক সময় বিশ্বের মানচিত্র থেকে এই দ্বীপ হারিয়ে যেতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। ভয়াবহ পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ডের কারণে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। যার ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে এই প্রথম বারের মতো ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায়, সেন্টমার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষনা করে সরকার। এর পর থেকেই সেন্টমার্টিন বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
গত দুই বছর আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী সেন্টমার্টিনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শেষে সেন্টমার্টিনকে রক্ষায় সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ বন্ধ, পর্যটকদের রাত্রী যাপন নিষিদ্ধ, অতিরিক্ত জাহাজ চলাচল বন্ধ, অতিরিক্ত পর্যটক আগমন বন্ধসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সেসব এখনো ফাইল বন্দি হয়ে আছে। যার কারণে সেন্টমার্টিন দিন দিন বিপদজ্জনক হয়ে উঠছে।
গত কয়েক দিন ধরে পূর্ণিমার জোয়ারে সেন্টমার্টিনের ভূমি ভেঙ্গে সাগরে বিলীণ হতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা বালির বস্তা দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেও তা রক্ষা করতে পারেনি। জোয়ারের পানিতে ২১ বসতবাড়ী, ১০টি দোকান, বড় কবরস্থান সহ বিভিন্ন অবকাঠামো ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে। দ্বীপের উত্তর-পশ্চিমাংশ ও গলাচিপা এলাকায় ভাঙ্গন তীব্র হয়। ৮০ বছর বয়সী দ্বীপের পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা আবদুল গফুর এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ বয়সে এমন ভাঙ্গন ও জলোচ্ছ্বাস দেখিনি। ১৯৯১ সালের ভয়াবহ জলোচ্ছাসের সময়ও এ দ্বীপ ছিল অক্ষত। এখন এমন কি হলো যে হঠাৎ করেই দ্বীপে ভাঙ্গন দেখা দিলো-এই প্রশ্ন সবার।’ কিন্তু এসব প্রশ্নের হিসেব মিলাতে পারছেন না আবদুল গফুরের মতো অনেকেই। দ্বীপের আরেক প্রবীণ ব্যক্তি আবদুল খালেক বলেন,‘দ্বীপ এখন আগের মতো নেই। আগে এই দ্বীপ ছিল কেয়া বাগান, নারিকেল বাগান, নিশিন্দা বাগান সহ গাছ-গাছালীতে পরিপূর্ণ। ঘন জঙ্গলে ছিল বিচিত্র সব প্রাণীর দল। ছোট-বড় পাহাড় ছিল বিভিন্ন ধরনের পাথরের। আর এখন সে সবের অধিকাংশই নেই। দ্বীপে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। দ্বীপ নিয়েই চলছে এক ধরণের ব্যবসা।’ আর এসবই দ্বীপে ভাঙ্গন সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন এই প্রবীণ।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন-‘ইট, সিমেন্ট, লোহা সহ সব ভারী বস্তুই উঠছে একটি দ্বীপের উপর। অতি দ্রুতই দ্বীপটি একটি কংক্রীটের দ্বীপে পরিণত হতে চলেছে। আর এই দ্বীপ দাঁড়িয়ে আছে শুধু পাথরের উপর। সেসব পাথরও ধ্বংস করা হচ্ছে। এই অবস্থায় দ্বীপ টিকিয়ে রাখা কঠিন।’ দ্বীপের পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তিনি বলেন,‘জোয়ারের পানি আটকাতে আমরা এলাকাবাসীকে নিয়ে বালির বস্তা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আর সেখানে বাধা দিচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অথচ পরিবেশ ধ্বংস করে অনেক প্রভাবশালী মহল স্থাপনা নির্মান করেই চলছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন