এসএসসি পরীক্ষার্থী যখন মেয়র প্রার্থী!



বাংলানিউজ
সিলেট: বার বার মেয়র প্রার্থী হওয়ার খায়েশ তার। ভোট যা-ই পাওয়া যায় ব্যাপার না। তবে প্রার্থী হওয়া চাই— এই লক্ষ্য নিয়েই প্রার্থী হন। তিনি ছালাহ উদ্দিন রিমন। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এ নিয়ে দুইবার মেয়র প্রার্থী হলেন তিনি। কোনো আয় নেই আবার এসএসসি পরীক্ষা দেবেন এটা তার হলফনামার তথ্য । তার কথা-বক্তব্য আর প্রার্থীতা এখন সিলেট সিটিতে হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রার্থী হলেও নগর ঘুরে তার কোনো প্রচার কিংবা লিফলেট পোস্টার খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গত সোমবার বিকেলে মেয়রপ্রার্থীদের নিয়ে শাবির ডিবেটিং সোসাইটির বিতর্ক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়ে ছুটে আসেন তিনি। কিন্তু অপরপ্রার্থীরা না এলেও তিনি উপস্থিত থাকেন অনুষ্ঠানে। এক ফাঁকে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন ছালাহ উদ্দিন রিমন। 

কেন প্রার্থী হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কামরানের খবর তো জানইন, মানসে আর তানরে ছাইরা না, চান্স লইয়া দেখরাম আমি ফারি কি না, তবে উন্নয়ন করমো মেয়র ওইলে।”

নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। জীবনে ৬ বার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ৬ বারই ফেল করেছেন। তার মতে “তাতে দোষ কী, আবার ফরীক্ষা দিলাম।” সিলেটের দক্ষিণ সুরমার হাজী ইসরাব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন— বলে জানান তিনি। 

তিনি আরো জানান, গত বছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে পাঁচ বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। আগামী বছর আরো পাঁচ বিষয়ে পরীক্ষা দেবেন। তারপর ইন্টারমিডিয়েট পড়বেন তিনি।

অন্য মেয়রপ্রার্থীরা ইশতেহার ঘোষাণা করেছেন, আপনার ইশতেহার কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইশতেহার তো আমার মনের ভেতরে।”

প্রতিদ্বন্দ্বি যেখানে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী সেখানে আপনার বিজয়ের আশা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হাতে গোণা দু’একজন কামরান আর আরিফ ভাইয়ের কথা বলছেন। তারাই লাফালাফি করছেন। কিন্তু যত গর্জে তত বর্ষে না।”

রিমন এর আগে ২০০৮ সালের সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪২৪ ভোট পেয়েছিলেন। তার কথা বার্তা আচারণ সবই এখন নগরবাসীর হাসির খোরাক। টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে যেতে পাগল প্রায় তিনি। কয়েকদিন আগে সচেতন নাগরিক কমিটির একটি অনুষ্ঠান ছিল মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে। তাকে আমন্ত্রণ জানানো মাত্র তিনি অনুষ্ঠানটি কোনো টিভি চ্যানেলে সরাসরি দেখানো হবে কিনা জানতে চান । পরবর্তীতে কোনো টিভি চ্যানেলে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে না শুনে তিনি সাফ জানিয়ে দেন— “যাবেন না।”

এ পর্যন্ত তিনি বিবিসি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি ও এসএ টিভির সরাসরি অনুষ্ঠানে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও আরিফুল হকের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তবে সব অনুষ্ঠানে তার কথা শুনে হেসে গড়াগড়ি খেয়েছে দর্শক।

এদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী সালাহ উদ্দিন রিমন সোমবার দুপুরে মোটরসাইকেল যোগে জিন্দাবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে যানজটে পড়লে এক পথচারী রিমনকে উদ্দেশ্য করে “খইবা মেয়র” বললে প্রতি-উত্তরে রিমন কিছুটা রাগান্বিত হয়ে ঐ পথচারীকে বলেন, “মেয়ররে অলা মাতাইননিবা”— রিমনের কথা শুনে এসময় পথচারীরা হাসাহাসি করেন...।

দক্ষিণ সুরাম থানা পুলিশ সূত্র জানায়, একসময় ছিনতাইয়ের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ছালাহ উদ্দিন রিমন। ছিনতাই কেন হয় নগরীতে এমন প্রশ্ন করা হলে রিমন বলেন, “মা-বাবা সন্তানদের প্রতি যত্নশীল হলে সন্তান বিপথগামী হয় না। ছিনতাইকারী হয় না।”

ছালাহ উদ্দিন রিমনের প্রার্থিতার বিষয়ে সচেনতন নাগরিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এ বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার নির্বাচন কমিশনকে। এত সহজে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকার ফলে ভূঁইফোড় অনেকেই প্রার্থী হয়ে বিষয়টি হালকা করে ফেলছেন।

ছালাহ উদ্দিন রিমন সিসিকের মেয়রপ্রার্থী হলেও তার তেমন গণসংযোগও দেখা যাচ্ছে না। বিপরীতে তিনি যেখানেই যাচ্ছেন হাসির খোরাক হয়ে যাচ্চেন মানুষের। 

শাবির মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠানে তরুণদের একটি প্রশ্ন ছিল তার প্রতি যে, ব্যাংকের অলস টাকা তাকে বিনিয়োগ করতে দিলে তিনি কী করবেন। জবাবে রিমন বলেন, “সিটি করপোরেশনের তরুণ ও বেকার যুবকদের মধ্যে তিনি তা বিলিয়ে দেবেন।” কৌতুকের মতো হাস্যকর উত্তর শুনে হেসে উঠেছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে দর্শক হিসেবে আসা কয়েক হাজার তরুণ।

এমনভাবেই হেসে উঠেছিলেন তারা, বেসরকারি টিভি চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে তার কথা শুনে। মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আরিফের ভিড়ে তাকে নিয়ে আলাপ আলোচনা কম হলেও হাসি কৌতুক তাকে নিয়েই হচ্ছে বেশি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন