উখিয়ায় জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

৫টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার নেই

কায়সার হামিদ মানিক
উখিয়ার গ্রামীন জনপদের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ৫টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার নেই দীর্ঘদিন ধরে। সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কে সম্প্রতি ৫০ শয্যায় উন্নীতি করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলেও ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে দায়সারা ভাবে।
এক্সরে মেশিন থাকলেও চালু করা হয়নি। টেকনেশিয়ানের অভাবে এনেস্থেসিয়া ও ইসিজি বন্ধ রয়েছে। ফলে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে বৃহত্তর জনসাধারণ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বললেন, জনবল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, প্রত্যন্ত এলাকার অবহেলিত মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে এ উপজেলার রতœাপালং, ওয়ালা পালং, ইনানী, হলদিয়া পালং ও বালুখালী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ৫ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন করে মেডিকেল অফিসার, একজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন এম.এল.এস.এস থাকার বাধ্যবাদকতা থাকলেও এসব উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে দায়িত্ব পালন করছে একজন করে মেডিকেল এসিসটেন্ট। তাকে চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু করে যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বিধায় স্থানীয় জনসাধারণ যথাযথ সেবা পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় হলদিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, দায়িত্বরত মেডিকেল এসিসটেন্ট তখনও কর্মস্থলে আসেননি। বাহিরে ১০/১২ জন মহিলা রোগী ডাক্তারের জন্য অধীর আগ্রহে বারান্দায় বসে আছে। অপেক্ষামান রোগীরা জানালেন, ডাক্তার থাকলে ঔষধ থাকেনা, ঔষধ থাকলে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়না। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, একজন চিকিৎসকের অভাবে এই ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। গরীব দুঃখী অনেকেই টাকার অভাবে উন্নত হাসপাতালে যেতে পারছেনা। তারা এখানে এসেও চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে। 
উখিয়া সদরে প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ৩১ শয্যার হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে গত ফেব্র“য়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকতা সর্ম্পন্ন করলেও চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা হয়নি। হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সম্প্রসারিত ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবন তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ৩১ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসার কার্যক্রম চালানো হলেও ডাক্তার ও নার্স সংকটের কারণে ঠিকমতো ঔষধ সরবরাহ ও সেবা পাচ্ছেনা বলে রোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে টিকেট কাউন্টারের ৫০/৬০ জন মহিলা রোগী লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে। বহিঃবিভাগে প্রায় ২ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তুতুরবিল গ্রামের বদিউল আলম, ভালুকিয়া গ্রামের নজির আহমদ সহ একাধিক রোগী জানালেন, তারা সকাল ৯টায় হাসপাতালে এসে ১১ পর্যন্ত ডাক্তারের দেখা পায়নি। হাসপাতালে ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের প্রচন্ড ভিড়। কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডাঃ রিদুয়ান তারিন জানালেন, ডাক্তার উত্তম বড়–য়া রাতে ইমারজেন্সি ডিউটি করে বিশ্রামে আছেন। তাকে একাই রোগী দেখতে হচ্ছে এবং ব্যবস্থাপত্র দিতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় অপেক্ষামান রোগীদের মাঝে বিরক্তের কারণ ও হতে পারে। এতে আমার করার কিছুই নেই। 
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ইসিজি, এনেস্থেসিয়া, রক্ষ পরীক্ষা সহ একাধিক ল্যাব্রটারীর দরজা বন্ধ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মচারী জানালেন, টেকনেসিয়ানে অভাবে হাসপাতালের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তারা জানান, ২০০৪ সালে একটি উন্নত মানের এক্সরে মেশিন সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। উক্ত এক্সরে মেশিনটি ব্যবহৃত না হওয়ায় বর্তমানে তা অকেজো হয়ে পড়েছে। ঔষধের গুনগত মান ধরে রাখার জন্য দুইটি কক্ষে স্থাপিত শীততাপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্রগুলো বিকল হয়ে পড়েছে। এভাবেই হাসপাতালের অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। এব্যাপারের জানাতে চাওয়া হলে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এস.এম আবু সাঈদ বলেন, এ হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সমপরিমাণ জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ঔষধ বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি। তাছাড়া ৩১ শয্যার হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কারণে শত চেষ্টা করেও রোগীদের যথাযত সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি এব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে একাধিক বার পরিপত্র প্রেরণ করেও কোন কাজ হয়নি বলে মতামত ব্যক্ত করেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন