ডেস্ক রিপোর্ট: শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি)। মঙ্গলবার ডিসি সম্মেলনের প্রথম দিনে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশনে তারা এ আহ্বান জানান। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের
ক্ষেত্রে স্বচ্ছতারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
ক্ষেত্রে স্বচ্ছতারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
অধিবেশন শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নানা হস্তক্ষেপ হয়। আমাদের দেশে ক্ষমতাবানরা হস্তক্ষেপ করেন, স্থানীয়রা হস্তক্ষেপ করেন, এতে প্রবলেম (সমস্যা) হয়।’
জেলা প্রশাসকরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমানোর জন্য কঠোর অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সেটা অনেকাংশে কমিয়ে এনেছি। আরো কমিয়ে আনা হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার প্রশ্ন ছিল; যেন সেখানে উপযুক্ত লোক নিয়োগ হয়। সেটা উন্নত হয়েছে। তবে আরো উন্নত করার জন্য তারা তাগাদা দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন সনদ ছাড়া মাধ্যমিকে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয় না। সরকারি হাইস্কুলে আগে মন্ত্রণালয় নিয়োগ দিলেও এখন (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ হচ্ছে।’
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগও স্বচ্ছভাবে হয় বলে দাবি করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
সরকারি হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের দুইশ ১৪টি পদ খালি আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘পিএসসির অধীনে তাদের দুই বছর বয়স কমিয়ে প্রমোশন দিয়ে নিয়োগ দিতে পারি। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। সেটা তাদের জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বই বিলি, পরীক্ষা গ্রহণ, পরিদর্শনের জন্য ডিসিদের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। পরীক্ষাগুলোকে আরো উন্নত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ কাজের সঠিক মান নিশ্চিত করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তদারকি জোরদার করতে হবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।’
১০ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা বলেছেন, শিক্ষার মান উন্নত হয়েছে।’
ঝরেপড়া রোধে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধে প্রাথমিকে প্রায় ৭৮ লাখ, মাধ্যমিকে ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। কলেজ পর্যায়ে এক লাখ ৩৩ হাজার মেয়েকে উপবৃত্তি দেওয়া শুরু করেছি। আগামীতে ছেলেদেরও দেওয়া হবে।’
অতি দরিদ্রদের স্কুলে মধ্যবর্তী সময়ে (মিড ডে) খাবার দেওয়া প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হলেও তার ফলাফল অনেক ক্ষেত্রে ভালো বলেছেন ডিসিরা। তবে কোনো কোনো জায়গায় আর্থিক সংকটের কারণে সমাধান করা যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে সেটা প্রসারিত করা হবে বলে জানান তিনি।
নাহিদ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য মানসম্মত বিশ্বমানের শিক্ষা দেওয়া। সেটা গতি লাভ করছে। রাতারাতি হবে না। মূল কথা জাতির ভবিষ্যত নতুন প্রজন্মের হাতে নিহিত। যে বিনিয়োগ, সেটা ভবিষতের জন্য বিনিয়োগ।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসিদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
অধিবেশনে শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফছারুল আমীন, প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, শিক্ষা সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রাথমিক শিক্ষা সচিব কাজী আকতার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকদের তিনদিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এরপর বিকেল সাড়ে তিনটায় সচিবালয়ের মন্ত্রী পরিষদ সম্মেলন কক্ষে পরবর্তী অধিবেশন শুরু হয়।
উল্লেখ্য, তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে মোট ৪০টি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা হবে। এর মধ্যে মঙ্গলবার প্রথমদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ মোট সাতটি মন্ত্রণালয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বুধবার সকাল পৌনে নয়টায় ভূমি মন্ত্রণালয় দিয়ে দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন শুরু হবে। আট অধিবেশনে মোট ১৭টি মন্ত্রণালয় নিয়ে এ দিন আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার বাকি ১৬ মন্ত্রণালয় নিয়ে আলোচনা হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন