কক্সবাজারে ভিজিএফ ভিজিডির সুবিধা পাচ্ছেনা হতদরিদ্ররাঃ কার্ড প্রতি আদায় করা হয় ২/৩ হাজার টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সরকারী সহায়তা প্রকল্পের আওতায় ভিজিএফ ভিজিডি ও কার্ড পেতে ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের মাথাপিচু দিতে হয় ২/৩ হাজার টাকা। অনেক হতদরিদ্র ওই টাকা জোগাড় করতে ঘরের হাড়ি পাতিল পর্যন্ত বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যারা ভিজিএফ ভিজিডি কার্ড পেয়েছে তাদের সরকার নির্ধারিত পরিমানের চেয়ে অনেক কম চাল দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকার গ্রামীণ হতদরিদ্রদের খাদ্য সহায়তার মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে ভিজিএফ, ভিজিডি ও বয়স্ক ভাতা প্রদানের কার্যক্রম চলমান রাখলেও তার সুফল পাচ্ছে না হতদরিদ্ররা। চেয়ারম্যান মেম্বাররা ভিজিএফ কার্ড প্রতি ১ হাজার টাকা ও ভিজিডি কার্ড প্রতি ৩ হাজার টাকা করে আদায় করছে। অনেক ইউপি মেম্বার নির্ধারিত কার্ডের চেয়ে অনেক বেশী লোকজন থেকে টাকা নিয়ে তাদের কার্ড না দেওয়া গ্রাম পর্যায়ে হতদরিদ্ররা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীর মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান ভিজিএফ ও ভিজিডি কার্ডের চাল কম দিতে প্রতি মাসে না দিয়ে দুই মাস পরপর দিয়ে থাকে। কার্ডধারীরা দুই মাসের চাল সরকার নির্ধারিত প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে দুই মাসে ৬০ কেজি দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ৪০ কেজি করে। প্রতিজনকে ২০ কেজি করে চাল কম দিয়ে তা ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারেরা ভাগবাটোয়ারা করেছেন। যার ফলে সর্বত্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
চকরিয়া পশ্চিম বড়ভেওলার ৭ নং ওয়ার্ডের নুরুল আলম জানান, স্থানীয় মেম্বারকে ভিজিডি কার্ডের টাকা দিতে হয়েছে ৩ হাজার টাকা করে। অনেক দরিদ্র লোক টাকা দিয়েছে ঘরের হাড়ি পাতিল বিক্রি করে। একজন ইউপি মেম্বারের জন্য ৫/৬ টি বরাদ্দ থাকলেও তারা টাকা নিয়েছে প্রায় ৫০/৬০ জন থেকে। টাকা দিয়েও কার্ড না পাওয়ায় অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রতিদিন তারা টাকা ফেরত নিতে মেম্বারের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
মহেশখালী কালারমারছড়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবদু রাজ্জাক জানান, কালারমারছড়ার শুধু একটি ওয়ার্ড নয় পুরো ইউনিয়ন পরিষদ এখন দূর্নীতির ডিপোতে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে কোন কার্যক্রম নেই। এলজিএসপির টাকা ও ভিজিএফ ভিজিডির চাল ভাগ বাটোয়ারা করাই তাদের প্রধান কাজ। এখানে কোন হতদরিদ্র সরকারী সহায়তা পায়নি। চেয়ারম্যান মেম্বারের আত্মীয় স্বজন ও তাদের ক্যাডাররাই সহায়তা পাচ্ছে। এলজিএসপির টাকা লুটের পর ভিজিএফ ভিজিডির চাল অর্ধেক বিতরণ না করে ইউনুচ খালী বাজারে এক মেম্বারের অফিসে প্রায় ৫০ বস্তা চাল ক্যাডারদের বিতরণের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদ শাহ ঘোনা ছরাটি খননের জন্য ১শ দিনের কর্মসূচীর আওতায় আনা হলেও কোন কাজ না করেই শ্রমিকদের নামে টাকা উত্তোলন করে সংশ্লিষ্টরা আত্মসাৎ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি মেম্বার জানান, মেম্বার হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে এলাকায় কিছু কাজ করায় চেয়ারম্যান ও কয়েকজন মেম্বার ক্ষুদ্ধ হয়ে আমার ওয়ার্ডের জন্য আর কোন বরাদ্দ দিচ্ছেন না। ইউনিয়ন পরিষদে কোন বিচারিক কার্যক্রম নেই। যে যেভাবে পারে সেভাবে লুটে নিচ্ছে।
বদরখালীর ৩ নং ওয়ার্ডের নুরুল আমিন জানান, ভিজিএফ ভিজিডি পাওয়ার যোগ্যলোক নির্বাচনে স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যান ব্যাপক স্বজনপ্রীতি করেছেন। এখানে যারা পাওয়ার যোগ্য এমন অনেকেই কার্ড পাইনি। যারা পেয়েছে তাদের অনেকেই স্বাবলম্বী লোক। ইউনিয়নের অন্যান্য ওয়ার্ডেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন পরিষদের একজন মেম্বার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের আÍীয় এক পরিবারের ৩ জনকে পর্যন্ত ভিজিএফ, ভিজিডি, বয়স্ক ভাতা প্রদান ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। তাদের কেউ এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নয়। সরকারি নির্দেশনা রয়েছে একটি প্রকল্পের সুবিধা প্রাপ্ত ব্যক্তি অন্য প্রকল্পের সুবিধা পাবে না। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান তা অমান্য করে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে এ সুবিধার আওতায় এনেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করলে গঠন করা হয় একটি তদন্ত কমিটি। তদন্ত শেষ করার ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিন জানান, এ ধরণের অভিযোগ গুরুতর অপরাধ। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।